২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা নীতি কি চ্যালেঞ্জের মুখে?

অবলোকন
-

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা নীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটি কৌশলগত স্বার্থের চেয়েও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থকে ঊর্ধ্বে স্থান দেয়ার এক ধরনের বেনিয়া নীতির কারণে বেইজিংয়ের প্রভাব সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশে কমতে শুরু করেছে। এতে চীনের কৌশলগত মিত্রগোষ্ঠীর অনেকে বেইজিংয়ের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। আর এর ফলে বিশ্ব নেতৃত্ব গ্রহণের প্রচেষ্টা এশীয় আঙিনা থেকে শুরু হওয়ার চীনা উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নও বাধার মুখে পড়তে পারে।
গত কয়েক বছর দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বেশ ক’টি সাফল্য লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বাকি সব দেশেই চীনের বিশেষ প্রভাব দেখা দেয়। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রে এক বিশেষ বন্ধন সৃষ্টি হয় দু’দেশের মধ্যে। মালদ্বীপের ইয়ামিন সরকার তার পররাষ্ট্র ও অর্র্থনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে চীনের ওপর বিশেষভাবে নির্র্ভর করতে থাকে। শ্রীলঙ্কায় চীনা প্রতিপক্ষ দেশগুলোর বিশেষ সমর্থনে সিরিসেনা-বিক্রমাসিংহে ক্ষমতায় এলেও এ সরকারে বিশেষ প্রভাব দেখা যায় বেইজিংয়ের। নেপালের নির্বাচনে দুই চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি সরকার গঠন করে। ভুটানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও সীমান্ত আলোচনাকে ঘিরে একটি বিশেষ যোগাযোগ সৃষ্টি হয় চীনের। সেখানকার সর্বশেষ নির্বাচনে ভারতপন্থী দল হেরে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন সরকারের আমলে ভুটান-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ থাকে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ যেখানে কৌশলগত ক্ষেত্রগুলোতে ভারতের একতরফা প্রাধান্য চলতে থাকে। অথচ ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পর প্রধানত চীন অর্থনৈতিক ও অন্যবিধ সমর্থন দেয়ার কারণে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পেরেছে। এর বিনিময়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজ পায়নি বেইজিং। এখন বাংলাদেশ পট পরিবর্তনের এক ক্রান্তিকালে এসে উপনীত হয়েছে। কিন্তু চীনা নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা করা কঠিন হয়ে পড়েছে দেশটির দোদুল্যমান অবস্থার কারণে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা নীতি দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ কিছু সাফল্য নিয়ে এলেও এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি। মালদ্বীপে চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের দল নির্বাচনে হেরে গেছে। পাকিস্তানে ইমরান খানের নেতৃত্বে পিটিআই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করলে চীনের সাথে সম্পর্কে কিছুটা শীতলতার সৃষ্টি হয়। অর্থনৈতিক করিডোরের বিভিন্ন প্রকল্পে অস্বচ্ছ চুক্তির জন্য পাকিস্তানি মিডিয়ায় নানা ধরনের সমালোচনা হচ্ছে চীনের। কয়েকটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বন্ধ রয়েছে। ব্যয়বহুল ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে দায় এখনই সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পাকিস্তানকে আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। ফলে এসব চুক্তি পুনর্পর্যালোচনা করার জন্য অনুরোধ করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দু’জনই চীন সফর করেছেন। কিন্তু দু’দেশের সম্পর্কের উষ্ণতা বেশ খানিকটা কমে গেছে। বাংলাদেশের সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা ও কৌশলগত সম্পর্ক সৃষ্টি করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির সময়ও এ ধারা অব্যাহত থাকে। কিন্তু গত ১০ বছরে সরকারের বাইরে বিএনপির সাথে চীনের সম্পর্ক তেমন একটা উষ্ণ ছিল না। এর চেয়ে বরং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী দলগুলো বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বেইজিংয়ের কাছে।
বেইজিংয়ের সক্রিয়তাবাদী নীতির কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় সক্রিয় আঞ্চলিক শক্তি ভারতের সাথে চীনের প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত তার আকার, তুলনামূলক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রাসঙ্গিকতার কারণে আঞ্চলিক প্রভাব আগে থেকেই বিস্তার করে। এ অঞ্চলে চীনের সম্পৃক্ত থাকার ইতিহাস সে তুলনায় সীমিত। পাকিস্তানের সাথে চীনের দীর্ঘকালীন সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। কিন্তু গত দশকে চীন সমগ্র অঞ্চলের দেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হয়ে ওঠে। বাণিজ্য, কূটনীতি, সাহায্য এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ছোট দেশগুলোর সাথে বিশেষ শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের এই সম্পৃক্ততা বাড়ানোর ফলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক হেভিওয়েট হিসেবে ভারতের সামনে একটি চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। চীন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে হয়তো ঘিরে ফেলেনি, তবে দেশটি ভারতের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের দিকে নজর দিচ্ছে। আর কিছু ক্ষেত্রে, এর অর্থনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি ভারতের প্রতিবেশীদের সাথে কৌশলগত সহযোগিতা বাড়িয়েছে। এ অঞ্চলের সাথে চীন তার সম্পর্ক বাড়িয়ে তুলছে মূলত সিল্ক রোড বা ‘বেল্ট এবং রাস্তা’ প্রকল্পের মাধ্যমে।
দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে স্বল্প সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এখানে উচ্চ পরিবহন খরচ, সুরক্ষাবাদী নীতি এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য তার সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। সাউথ এশিয়া অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন (সার্ক) চুক্তি, দক্ষিণ এশীয় অগ্রাধিকার বাণিজ্যব্যবস্থা এবং দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা আঞ্চলিক বাণিজ্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার গভীর অবিশ্বাস বৃহত্তর আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সার্ক দেশগুলো সর্বাধিক রফতানি গন্তব্য হিসেবে উন্নত দেশগুলোর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে আর চীন থেকে ক্রমবর্ধমান হারে বেশি পণ্য আমদানি করে।
আকার এবং অবস্থানের কারণে কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জন্য ভারত একটি শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ও নেপাল উন্মুক্ত সীমানার অংশীদার; শ্রীলঙ্কার সাথে ভারত প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে; ভারত ও ভুটানের মধ্যে ‘পারস্পরিক নির্ভরশীল অর্থনৈতিক আন্তঃসংযোগ’ রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ ভারতের একটি বড় অর্থনৈতিক অংশীদার হয়ে আছে।
পাকিস্তানের সাথে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ব্যতিক্রম ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবটি তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক ঘটনা। চীন-পাকিস্তান অক্ষ এমন একটি বিশেষ ও আলাদা ঘটনা হিসেবে দাঁড়িয়েছে, যা অন্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সামনে কৌশলগত যুক্তি হিসেবে সামনে রাখা হয়। চীনের সবচেয়ে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অঙ্গীকার হলো পাকিস্তানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহায়তায় ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘোষিত প্যাকেজ। তাদের বর্তমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাথে চীনের বাণিজ্য এখনো ভারতের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে, তবে ব্যবধান সঙ্কুচিত হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। অন্য দিকে, চীন ও শ্রীলঙ্কার বর্তমান বাণিজ্য ভারসাম্য ব্যাপকভাবে চীনের পক্ষে।
নেপালের কৌশলগত অবস্থান প্রতিবেশীদের গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণ করে। ভারত ও নেপালের মধ্যে ১৯৯৬ সালের বাণিজ্য চুক্তিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এখন নেপালের মোট বাণিজ্যের অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে। নেপালি বাজারে চীনের পণ্যের প্রবাহের কারণে নেপালের আমদানি বৈচিত্র্যময় হয় এবং তার ভারত নির্ভরতা কমিয়ে দেয়।
আফগানিস্তানে, চীন ও ভারত উভয় দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলারের নিচে, কিন্তু তা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইরানের চাবাহার বন্দর দিয়ে আফগানিস্তানে সমুদ্রভূমি ব্যবহারের জন্য ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভারতের আফগানিস্তানের সাথে বাণিজ্য খরচ নাটকীয়ভাবে কমে যাবে।
চীনের অনুসৃত নীতির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে দেশটির প্রভাব বিস্তারে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। প্রথমত, চীন তার পররাষ্ট্রনীতিতে সরকারের সাথে সরকারের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে থাকে। কোনো রাজনৈতিক দল সরকার থেকে বিদায় নেয়ার পর দলটির সাথে যোগসূত্র কমিয়ে দিয়ে সরকারে যে নতুন শক্তি আসে তার সাথে সম্পর্ক গড়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়। এতে রাজনৈতিক পক্ষগুলো চীনকে অনেক সময় কৌশলগত মিত্র ভাবতে পারে না। দ্বিতীয়ত, চীন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সাথে যোগসূত্র রক্ষার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এ ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য থাকে নেতৃত্বপর্যায়ে যারা সামরিক বাহিনীতে থাকে তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা। প্রতিবেশী দেশগুলো যেখানে সেনা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্নপর্যায়ে আস্থাভাজন ও নির্ভরযোগ্য কর্মকর্তা সৃষ্টির প্রচেষ্টা নেয়, সেটি চীনা কৌশলে দেখা যায় না। তৃতীয়ত, এক সময় চীনা নীতির সাথে একটি আদর্শগত বিষয় যুক্ত থাকত। চীনা ধারার একটি সমাজতান্ত্রিক বলয়কে রাজনৈতিক মতাদর্শগত ও অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হতো। সরকারের সাথে সরকারের সম্পর্কের বাইরে এ ধারাটি সার্বিক সমাজ কাঠামোতে চীনা প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হতো। মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের পর থেকে চীনা নীতির এ আদর্শিক ধারাটি বিদায় নিয়েছে। চতুর্থত, এক সময় চীনা বৈদেশিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল সামাজিক সাংস্কৃতিক বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত চিন্তা চর্চাপর্যায়ে সম্পর্ক সৃষ্টি করা। এ নীতির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে গণমাধ্যম, উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিন্তক গোষ্ঠীর মধ্যে বিশেষ চীনা প্রভাব লক্ষ করা যেত। ফলে সামরিক-বেসামরিক আমলাদের অনেকের মধ্যেও এক ধরনের চীনা প্রভাব লক্ষ করা যেত। এখন বেইজিং সেটাকে আর গুরুত্ব দেয় না।
স্নায়ুযুদ্ধ-উত্তর সময়ে সমাজতন্ত্রের আদর্শগত আবেদন কমে যাওয়ার পর চীনা নীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। চীন নিজেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য শক্তিতে রূপান্তরের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করে। এ ক্ষেত্রে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা অর্জন এবং সামরিক-বেসামরিক শিল্পে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য উৎপাদন করে বাজার দখলের কৌশল নেয়া হয়। এ ছাড়া, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষমতাধরদের মধ্যে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের যে প্রবণতা থাকে সেটিকে অ্যাড্রেস করার জন্য লোকাল এজেন্ট মনোনয়ন ও তাদের উচ্চ কমিশন প্রদানের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করা হয়। এর বাইরে চীনের সাশ্রয়ী মূল্যে রেয়ার আর্থ বা মূল্যবান ধাতব কাঁচামালের লভ্যতা পণ্য উৎপাদনের খরচকে কম রাখতে সহায়তা করে। এর বাইরে চীনের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষের অভ্যন্তরীণ বাজার ও নিজস্ব প্রতিরক্ষা প্রয়োজন সামরিক ও বেসামরিক শিল্পের বিকাশ এবং অগ্রগতিতে সহায়ক হয়। এ সবের সম্মিলিত প্রভাবে চীনা অর্থনীতি দশককাল ধরে দুই অঙ্কে বিকশিত হয়ে দ্বিতীয় বৃহৎ বিশ্ব অর্থনীতির স্থান লাভ করে। চীনের রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিনিয়োগযোগ্য ঘূর্ণায়মান তহবিল চার ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এ বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ও সস্তা পণ্যের বাণিজ্য সুবিধাকে অবলম্বন করে চীন দক্ষিণ এশিয়ায় সক্রিয়তাবাদী নীতি গ্রহণ করে।
কিন্তু এ নীতি আদর্শকেন্দ্রিকতা হারিয়ে ফেলায় সাফল্য সেভাবে টেকসই হচ্ছে না। শ্রীলঙ্কায় এখন যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তার জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে বেইজিংকে। পাকিস্তানকে একটি সম্মৃদ্ধ দেশ হিসেবে এগিয়ে নিতে চীনের অর্র্থনৈতিক করিডোর প্রকল্প ভূমিকা রাখবে বলে অনেকে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু চীনে বাণিজ্য স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন চুক্তি করার কারণে সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে চীন অনেক বড় ভূমিকা নেবে বলে এক সময় বিশ্বাস করা হতো। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে চীনের অনুসৃত দৃশ্যমান নীতি সেই বিশ্ব¦াসে সংশয় সৃষ্টি করেছে। চীনের কৌশলগত স্বার্থের লক্ষ্য কতটা সুদৃঢ় এ নিয়ে অনেকে এখন সংশয়ে পড়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা প্রভাবকে সুদৃঢ় ভিত্তি দেয়ার জন্য চীনের বাণিজ্যমুখী সুবিধাশ্রয়ী নীতির পুনর্বিবেচনা বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে ম+নে হয়।হ
mrkmmb@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement