২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘অবেলার শেষ দেখা’ ও জাতীয় ঐক্য

-

‘বেলা শেষে দাবি নিয়ে লাভ নেই’Ñ শেখ হাসিনা (সূত্র : দৈনিক যুগান্তর, ৭ অক্টোবর,২০১৮)। গত ৬ অক্টোবর গণভবনে বিএমএর উদ্যোগে চিকিৎসকদের সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ দিকে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ সাত দফা দাবি পেশ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বর্তমান পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিও করেছেন তারা। বিগত ১০ বছর ধরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এ দাবি জানিয়ে আসছে। তবে ঐক্যফ্রন্টের জোটে নেই জামায়াতের নাম। সাধারণ মানুষেরা নির্যাতিত হয়ে মুক্তির পথ খুঁজছে। ক্ষমতায় নতুন মুখের প্রত্যাশায় বহুদিন ধরে স্বপ্ন বুনছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কমপক্ষে ছয় মাস আগে থেকেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের কাজে মাঠে নেমেছেন। ইতোমধ্যে সরকারি অর্থায়নে ‘উন্নয়ন মেলা’র মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের খতিয়ান জনমানুষের কাছে পেশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সব প্রার্থী জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মাঠে দেখা নেই। আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপির সাথে জামায়াতের ঐক্যে অনেকের গাত্র দাহের কারণ ঘটেছে। তাদেরই ইন্ধনে বিএনপি তাদের মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে হাতছাড়া করছে না তো ? যারা বিএনপিকে সামনে রেখে ঐক্য গঠনে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে তাদের সবাই গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ চান, নাকি সুকৌশলে অন্য কোনো লক্ষ্য সফল করতে চান, সেটা দেখার বিষয়। সাধারণ জনগণ বারবার মাঠে নেমেছে; জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছে। প্রতিটি অন্যায়, অপকর্মের বিরুদ্ধে জামায়াত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়ে যাচ্ছে। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন ভোটের পরে তারা মাঠে সরব ছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলাতে জনগণের মধ্যে একটা ধারণা হয়েছিল, এ সরকার বেশি দিন টিকবে না। আবার নির্বাচন হবে। অবাধ, সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার আসবে। কিন্তু তা হয়নি। এ দিকে, শেষমেশ মাঠছাড়া হয় বিরোধী দল। ঘরে তুলতে পারেনি আন্দোলনের কোনো ফসল। ফলে ‘নিয়ম রক্ষার’ সরকারই আসল সরকার হয়ে বসে। আবারো জনগণের ভাগ্যে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এখনো সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিদিন বিএনপি এবং জামায়াতসহ সাধারণ মানুষের কপালে মামলা, হামলা, গুম, খুনের ভাগ্য। সবাই এখন তাকিয়ে আছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে। আসলে ক্ষমতাসীনদের স্বপ্ন কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সেটা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্যের ওপর অনেকটা নির্ভর করছে। তারা কি জনগণের ভাষা বুঝে সামনে পা বাড়াবেন, নাকি সরকারি অ্যাসাইনমেন্ট অনুযায়ী ঐক্য ভাঙা-গড়ার খেলা খেলতে বেলা শেষ করে ফেলবেন? দুঃখজনক হলো, ১০ বছর পর আজ জাতীয় ঐক্যের শখ জেগেছে অনেক রাজনীতিকের। তবে, দেরিতে হলেও এমন উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ।
নির্বাচন কমিশন বা ইসি মানেই মধ্যস্ততাকারী, সমন্বয়ক বা আহ্বায়ক। আমরা সাধারণত উৎসব আয়োজনে একজন সমন্বয়ক কিংবা আহ্বায়ক নির্ধারণ করি, আয়োজনটি যাতে সুন্দর-সাফল্যমণ্ডিত হয়ে লক্ষ্যপানে পৌঁছাতে পারে, সে জন্য। সফলতা-ব্যর্থতা অনেকটাই আহ্বায়কের আন্তরিকতা, দায়িত্ব ও অনুভূতির ওপর নির্ভর করে। নির্বাচন কমিশনের ওপরও একটি দেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নির্ভরশীল। এর ভিত্তিতেই হবে জনগণের সরকার গঠন। সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনে বেশ আগ্রহী। আসলে এমন পদ্ধতি কতটুকু নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য তা ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দরকার। বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই এ ক্ষেত্রে। কিন্তু যে-ই পরীক্ষার্থী সেই পরীক্ষক; যেই খেলোয়াড়, সেই রেফারি। এর ফলাফল কেমন হয়, তা সবারই অনুমেয়। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন অনেকটাই যেন ‘রক্ষকই ভক্ষক।’ চারিদিকে একটি সেøাগান শোনা যাচ্ছেÑ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এই মুহূর্তে দরকার। শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সময়ের অনিবার্য দাবি। অন্য দিকে, আমরা যে সংলাপ খেলা দেখেছি, আসলে এ আয়োজনে সরকারের মাথাব্যথা নেই। তারা নিজস্ব ছকে এগিয়ে যাচ্ছে। আবারো দলীয় সরকারের অধীনে একটি সরকার গঠনের পথ বেছে নেয়া হয়েছে। ৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা থেকে সরকারকে সাফ জানিয়ে দেয়া হলো, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ফলপ্রসূ সংলাপ ও সমঝোতায় আসতে হবে; অন্যথায় কঠোর আন্দোলন। নির্বাচন কমিশনার ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ট্রেন মিস করার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এখন দেখা যাক, ঐক্যফ্রন্টের কাফেলা কতদূর এগিয়ে যায়। হ


আরো সংবাদ



premium cement