২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দৃষ্টিপাত : মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি সিলিন্ডার নিষিদ্ধ করুন

-

গাড়ির সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণহানি একটি নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। গত তিন বছরে সিএনজি চালিত ১৭৫টি গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৪০০ মানুষ। একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও দুর্ঘটনার রাশ টানার কোনো উদ্যোগ না থাকা উদ্বেগজনক।
জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৮০ সিএনজি কনভার্সন ওয়ার্কশপ রয়েছে। দেশে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৫২২টি গাড়ি জ্বালানি তেল থেকে সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এসব গাড়িতে সিলিন্ডার রয়েছে চার লাখ।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এক তথ্য অনুযায়ী সিএনজি কনভার্সন সেন্টারগুলো বড়জোর ৬৫ হাজার সিলিন্ডার রিটেস্ট করা হয়েছে। আগের দুই বছর যোগ করলে পাঁচ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ ৯৪ হাজার সিলিন্ডার রিটেস্ট করা হলেও বাকি তিন লক্ষাধিক সিলিন্ডার আজ পর্যন্ত একবারের জন্যও রিটেস্ট করা হয়নি। সড়ক-মহাসড়কে চলন্ত অবস্থায় প্রায়ই গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হচ্ছে, দুর্ঘটনায় যানবাহন ভস্মীভূতসহ প্রাণহানিও ঘটছে অহরহ। বৈধভাবে সংযোজিত তিন লক্ষাধিক সিলিন্ডার ইতোমধ্যে রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে, এর সাথে যুক্ত হয়েছে নকল-ভেজাল নিম্নমানের অসংখ্য সিলিন্ডার। রিটেস্টবিহীন সিলিন্ডারগুলো চরম ঝুঁকি সত্ত্বেও বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারে ব্যবহৃত হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ, ত্রুটিযুক্ত সিলিন্ডারগুলো একেকটি জীবন্ত বোমা হিসেবে বিরাজ করছে। দেশে এ পর্যন্ত সিএনজিচালিত যেসব সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে তার প্রতিটিই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এসব সিলিন্ডারে কোনো সেফটি সিস্টেম ছিল না। ইদানীং পুরনো জাহাজের মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারকেও গাড়িতে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। ভয়ঙ্কর ঝুঁকি হয়ে ওঠা এসব সিএনজি সিলিন্ডার যানবাহনের যাত্রীই শুধু নয় পথচারীদের কিংবা অন্যান্য যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের জন্যও হুমকি হয়ে চলাচল করছে। জনস্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা দরকার। সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারবাহী গাড়ি আটকের বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৩২ শ’ পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়, ওই সময় গাড়ি ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে, এ আশঙ্কা রোধে গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক মান রক্ষা করা জরুরি। এ দিকে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু এলপিজি সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়েছে। মানহীন সিলিন্ডার ব্যবহার করায় রান্নাঘর হয়ে উঠেছে বিস্ফোরণের বিপজ্জনক স্থান। বাধ্যবাধকতা থাকলেও সিএনজিচালিত গাড়ির পাঁচ বছরের বেশি পুরনো সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষায় কেউ উদ্যোগী হচ্ছে না। রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় দুই লাখ গাড়ি বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় চলছে।
পরিষ্কার রাখার জন্য গ্যাসের পাইপটিকে কোনো কাপড় বা প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস দিয়ে মুড়ে রাখবেন না। সে ক্ষেত্রে পাইপ ফেটে গেলে বা লিক হলে ধরা পড়বে না। গ্যাস লিক হচ্ছে বুঝতে পারলে বাড়ির কোনো ইলেকট্রিক অ্যাপ্লায়েন্স অন করবেন না। ওভেন, রেগুলেটর বন্ধ করে দরজা জানালা খুলে দিন। গ্যাস লিক করার পর যদি কিছুক্ষণের মধ্যে গন্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরের অফিস বা হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করুন। সিলিন্ডার থেকে রেগুলেটর আলাদা করে দিয়ে সিলিন্ডারের মুখে সেফটি ক্যাপও পরিয়ে দিতে পারেন। একটি ঘরে দু’টি সিলিন্ডার রাখার জন্য অন্তত ১০ বর্গফুট জায়গা থাকা জরুরি। এমন জায়গায় সিলিন্ডার রাখবেন না যেখানে সহজেই তা অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে।
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি


আরো সংবাদ



premium cement