২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রাথমিক শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ

-

প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব পৃথিবীর কোনো মানুষই অস্বীকার করতে পারে না। এই শিক্ষার মধ্য দিয়েই একটি শিশু ধীরে ধীরে পৃথিবীকে জানতে পারে। নিজেকে চিনতে পারে। একটু একটু করে শিশুর মধ্যে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যাবে, একটি শিশু যে পরিবার থেকেই হোক না কেন সে যদি তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করতে না পারে তবে তার পড়াশোনার পাঠ ওখানেই শেষ! কিন্তু যদি সে এই ধাপটা অতিক্রম করতে পারে তবে তার সামনে উন্মুক্ত হয় এক নতুন জগত। তৈরি হয় অপার সম্ভাবনা। ব্যক্তিগত উন্নতির দারুণ এক সুযোগ পেয়ে যায়। আর ব্যক্তিগতভাবে উন্নতি লাভ করতে পারলে ওই দেশের উন্নতিও সম্ভব। প্রাথমিক শিক্ষার সাথেই জড়িয়ে আছে দেশের উন্নয়নের ভবিষ্যৎ। দেশকে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে তাই প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্ব তাই অনেক। তাদেরকে নানামুখী চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হয়ে একটি শিশুকে প্রতিযোগিতামুখর এই পৃথিবীর উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হয়।
একটা শিশুর ভালোবাসা পেতে হলে প্রথমে তাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। পারিবারিকভাবে একজন মা-ই একটা সন্তানকে বুঝতে পারে না। অন্যদের জন্য বিষয়টা আরো কঠিন। সে ক্ষেত্রে একটা শিশু কিসে খুশি হয় তা আগে জানতে হবে। শিশুরা নানা রকমের হয়। কেউ সারাক্ষণ খেলতে পছন্দ করে। কেউ চুপচাপ থাকতে, কেউ ঘুমাতে, কেউ খেতে, কেউ ঘুরে বেড়াতে। কেউ বা আবার কিছু বানাতে। কেউ কেউ আবার কাজ করতেও পছন্দ করে। তবে একটা শিশু খেতে পারুক বা না পারুক তাকে চকলেট, চিপস বা অন্য যেকোনো আকর্ষণীয় খাবার দেয়া হলে সে দারুণ খুশি হয়। তা ছাড়া যেকোনো আকর্ষণীয় উপহার পেতেও সব শিশু ভালোবাসে। তবে শিশুরা চির চঞ্চল। যেখানে একটু খেলাধুলা, দুষ্টুমি, হাসি-ঠাট্টা খুঁজে পাবে সেখানেই যাবে তারা। শিশুরা সর্বক্ষণ আনন্দ খুঁজে বেড়ায়। শিশুরা অবহেলা-অনাদর একদমই সহ্য করতে পারে না। শিশুদের এই বৈশিষ্ট্যগুলোকে সামনে রাখলে প্রাথমিকের একজন শিক্ষকের চ্যালেঞ্জটা বেশ বোঝা যায়।
শিশুরা উচ্ছ্বল বলেই প্রাথমিকের একজন শিক্ষকের জন্য চাকরিটা বড় চ্যালেঞ্জের। কারণ, সব সময় অ্যালার্ট থাকা এই চাকরির একটা মহাশর্ত। শিশুদের সার্বক্ষণিক খুনসুটি, একে অপরকে জব্দ করার প্রবণতা, শ্রেণিকক্ষের নানান প্রতিকূলতা দূর করা শিক্ষকদের নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জ। শ্রেণিকক্ষের মধ্যে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনার সময়টা সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি শ্রেণীতে কিছু শিক্ষার্থী থাকে খুব বেশি চঞ্চল। যারা শ্রেণী চলাকালীন বার বার বিভিন্ন কারণে বাইরে যেতে চায়। ফলে শ্রেণী কার্যক্রম ব্যাহত হয়। কিছু দুর্বল শিক্ষার্থী থাকে যাদেরকে অনেক বেশি সময় দিতে হয়। তবে যত ভালো শিক্ষকই হোন না কেন, শহর কিংবা গ্রাম দু-একটা অযোগ্য শিশু রয়েই যায়। তবুও শিক্ষকেরা চেষ্টা করে যান আপ্রাণ। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তা ছাড়া বিদ্যালয় পর্যায়ের যেকোনো সমস্যার জন্য অভিভাবকের কাছে কথা শুনতে হয় প্রায়ই। উচ্ছৃঙ্খল কিছু অভিভাবকের জন্য শিক্ষকদের প্রায়ই হয়রানির শিকার হতে হয়। সরকারের অত্যধিক সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় বা এলাকাভিত্তিক সমস্যার কারণে এখনো তাই কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা।
প্রাথমিকের শিক্ষককে জানতে হয় অনেক কিছু। যেমন, ছবি আঁকা, গান গাওয়া, লেখালেখি, আবৃত্তি, ব্যায়াম, অনেক ক্ষেত্রে নৃত্য। প্রাথমিক চিকিৎসা জানতে হয় ভালোভাবেই। কারণ প্রাথমিকের কোমলমতি শিশুরাও অনেক সময় একে অপরের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করে। আরো অনেক সময় পড়ে গিয়ে, কোনো কিছু লেগে, বিদ্যালয়ে আসার সময় রাস্তায় অনেক আঘাত পেয়ে থাকে। এগুলোর প্রতিকার কিন্তু শিক্ষককেই করতে হয়। শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যগত সার্বিক দিকেও একজন শিক্ষককেই খেয়াল রাখতে হয়। শিক্ষার্থী ঠিকমতো খেয়েছে কি না, খাদ্যের পুষ্টিমাণ ঠিক কি না, নখ কেটেছে কি না, দাঁত মেজেছে কি না, গোসল করেছে কি না এগুলোও জানতে হয়। তবেই শিক্ষার্থী প্রাথমিক পর্যায়ে টিকে থাকতে পারে।
উন্নয়ন কথাটি যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্য গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার ধাঁধার মতো। সে হিসেবে আমাদের বাংলাদেশ সেই ধাঁধার পিছনে ছুটছে বৈকি! উন্নতি করতে কে না চায়? আমাদের মধ্যে যারা শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তারা সবাই জানে শিক্ষাই উন্নয়নের সেই ধাঁধার সমাধান। গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার জন্য যেমন ধাঁধাকে সমাধান করতে হয় তেমনি কোনো জাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষিত হলে উন্নয়নের গতি বাড়বে। কথায় আছে শিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। যে কেউ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে তার নিজের জন্য যেমন লাভজনক, জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করতে পারে ঠিক তেমনি দেশের জন্যও বিভিন্নভাবে গৌরব বয়ে আনতে পারে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তাই যেকোনো দেশের মানব উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন তথা সার্বিক উন্নয়নের পথে উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য। আর একজন প্রাথমিক শিক্ষকই সেই উন্নয়ন নামক চ্যালেঞ্জের ধারক। হ
সহকারী শিক্ষক, ভংগারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিবপুর, নরসিংদী

 


আরো সংবাদ



premium cement