১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভুতুড়ে আজগুবি মামলা ও কিছু প্রশ্ন

বহমান এই সময়ে
-

সম্প্রতি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে একটি বিষয় নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনা চলছে। গণমাধ্যমে বিষয়টি পুলিশের ভুতুড়ে মামলা, আজগুবি মামলা কিংবা গায়েবি মামলা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। প্রথম শ্রেণীর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানী ও সরেজমিন প্রতিবেদন সূত্রে দেশের সাধারণ মানুষ এসব ভুতুড়ে বা গায়েবি মামলা সম্পর্কে জানতে পারছে। এই সময়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জাতীয় দৈনিকে এ ধরনের মামলার খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
গত শুক্রবার দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘বগুড়ায় গায়েবি মামলা, ৬০০ জনকে আসামি’ শীর্ষক খবর পাঠে এ ধরনের কয়েকটি মামলার কথা জানা যায়। খবরটিতে জানানো হয়েছেÑ খায়রুল বাশারের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামে। পবিত্র হজ পালনের জন্য গত ২ আগস্ট তিনি সৌদি আরবে যান। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে তিনি জানতে পারেন, পুলিশ তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। অভিযোগ হলো, তিনি ২ সেপ্টেম্বর শাজাহানপুর বিএনপির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ছাত্র নেতাকর্মীদের নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করেছেন। পুলিশের দাবি, সেখানে অভিযান চালিয়ে তারা তাজা ককটেল পেয়েছে।
এই মামলায় খায়রুল বাশার ছাড়াও বিএনপির ৩০ জন নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। শাজাহানপুরের বিএনপি কার্যালয়সংলগ্ন এলাকার অন্তত পাঁচজনের সাথে কথা বলে ওই পত্রিকা প্রতিনিধি জানতে পারেন, ওই দিন তারা সন্ধ্যার পর কর্মসূচি শেষে বিএনপি নেতাকর্মীদের সবাইকে চলে যেতে দেখেছেন।
অপর দিকে এই খবরে আরো বলা হয়েছেÑ ধুনট উপজেলার নাংলু গ্রামের রুবেল হোসেন দেশে নেই। জীবিকার তাগিদে সাত মাস আগে মালয়েশিয়া গেছেন। কিন্তু পুলিশের দাবি, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের সোনাহাটা বাজারে তিনি নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করেছেন। এই অভিযোগে পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এই মামলায় আসামি ৮৬ বছরের বৃদ্ধ আবদুল খালেক। অথচ তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত, নড়াচড়া পর্যন্ত করতে পারেন না।
খবরটি মতে, বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় ৯ দিনে ৯টি মামলায় এভাবে গণহারে ছয় শতাধিক লোককে আসামি করা হয়েছে। বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে করা এসব মামলার বেশির ভাগ আসামি বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। সাতটি মামলার বাদি পুলিশ। অন্য দু’টি মামলা করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা ঘটনা ও ঘটনাস্থল সম্পর্কে বিভ্রান্তি রয়েছে। প্রথম আলোর পাঁচজন প্রতিনিধি কথিত ঘটনাস্থলগুলো ঘুরে এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে কোনো ঘটনারই সত্যতা পাননি। এগুলোকে ‘গায়েবি’ মামলা হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলেছেন, কোনো ঘটনাই ঘটেনি, তবুও মামলা দেয়া হয়েছে রাজনৈতিকভাবে।
এর ক’দিন আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলোর একটি শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম ছিল : ‘ঘটনাই ঘটেনি, মামলা করে রেখেছে পুলিশ’। এই খবরে পত্রিকাটি লিখেছে : ‘হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম গত ১২ আগস্ট নিজের থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামি ৭০ থেকে ৮০ জন, সবাই অজ্ঞাত। অভিযোগ হচ্ছে, গত ৩০ জুলাই হবিগঞ্জ শহরের জে কে হাইস্কুলের সামনে আসামিরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, যানবাহন ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন এবং সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে।
পত্রিকাটি আরো জানায়, ‘যে সময় এই মামলা হয়েছে, একই সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে পথে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০ জুলাই হবিগঞ্জ শহরে এ ধরনের কিছুই ঘটেনি। এমনকি নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে হবিগঞ্জে কেউ রাস্তায় নামেনি। এরপরও হবিগঞ্জ শহর ও জেলার চারটি থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ১০টি মামলা করে রেখেছে পুলিশ।’
পত্রিকাটি আরো লিখেছে, “শুধু হবিগঞ্জ নয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় নাশকতার অভিযোগ এনে আরো কয়েকটি জেলায় এমন আরো ‘ভুতুড়ে’ মামলা করে রেখেছে পুলিশ। মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পত্রিকাটিকে বলেছেন, ‘ওপরের নির্দেশে’ এসব মামলা হয়েছে।”
পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ‘তবে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতেই থানায় থানায় এভাবে গোপনে মামলা করে রাখা হয়েছে, যাতে নির্বাচনের আগে ও পরে প্রতিপক্ষের লোকজনকে এসব মামলায় ফাঁসানো যায়।’
গত ১১ সেপ্টেম্বর ডেইলি স্টার ‘অ্যা কেইস, ম্যানি কুয়েশ্চনস’ শিরোনামের একটি শীর্ষ সংবাদে এ ধরনের একটি ভুতুড়ে বা গায়েবি মামলার খবর ছাপে। এ খবর পাঠে জানা যায়Ñ জনৈক লুৎফুল হক গত ৪ আগস্ট থেকে সাত দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে। তিনি ভুগছেন হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও কিডনির জটিলতায়। তার অবস্থা এতটাই খারাপ, যে জন্য তাকে নিতে হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) এবং হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)। তিনি ১১ আগস্ট হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, তিনি এখনো অন্যের সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। তার বয়স ৮২ বছর। এরপরও পুলিশ এক মামলা দায়ের করে বলেছেÑ গত ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ তাকে ওয়ারীতে দেখতে পেয়েছে বিএনপির ও এর অঙ্গ সংগঠনের দুষ্কৃতকারীদের একটি গোষ্ঠীর সাথে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র পরিকল্পনায় অংশ নিতে। এই লুৎফুল হকসহ ৯৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ, এরা আর কে মিশন রোডের বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাব মাঠে সমবেত হয়ে ‘নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের’ পরিকল্পনা করছিল। অথচ তার পুত্র ওই পত্রিকাটিকে জানিয়েছেন, তার বাবা একা একা চলাফেরা করতে পারেন না। হাসপাতাল ছেড়ে আসার পর থেকে তিনি বিছানায় পড়া। তার বাবাকে খাবার খাইয়ে দিতে হয় তার মাকে। মামলার দিন তার বাবা বাড়িতেই ছিলেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের জন্য এই বুড়ো লোকটিকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাইকোর্টে। আদালত চার্জশিট দাখিলের আগে পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন। তার পুত্র জানিয়েছেন, তার বাবা একসময় বিএনপির রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কিন্তু গত ছয়-সাত বছর ধরে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত। এখন তার বিএনপির রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ইংরেজি দৈনিকটি ল্যাবএইড হাসপাতালে গিয়ে খবর নিয়ে তার পরিবারের দেয়া তথ্যের সত্যতা জানতে পারে : তিনি হাসপাতালটিতে ছিলেন ৪-৭ সেপ্টেম্বর। এই হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন এক লাখ ২৭ হাজার ৮৬৫ টাকা। তিনি ভর্তি ছিলেন ৫৬০ নম্বর কেবিনে। যে নার্স তার দেখাশোনা করেছেন, তিনিও এর সত্যতা স্বীকার করেন।
এই মামলায় আরেক আসামি করা হয় বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা সাব্বির আহমদকেও। অথচ তিনি মামলার ঘটনার সময় দেশের বাইরে ছিলেন। তার ভিসা, ইমিগ্রেশন ও হোটেল ডকুমেন্ট, কলকাতা যাতায়াতের বোর্ডিং পাস থেকে জানা যায়, তিনি সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ৪ তারিখ পর্যন্ত ভারতে অবস্থান করছিলেন। পত্রিকাটির হাতে রয়েছে এসব ডকুমেন্ট। সাব্বির আহমেদ পত্রিকাটিকে জানান, পুলিশের কারণে এমনিতেই তিনি বাড়িতে থাকতে পারেন না। ভারতে থাকার সময়ও তাকে এরা ছেড়ে কথা বলেনি।
এই মামলার আরেক আসামি হচ্ছেন ওয়ারী ইউনিটের যুবদল নেতা মো: ইব্রাহিম। তার কাহিনীটা একটু ভিন্ন। এর আগেও তাকে আরেকটি মামলায় জড়ানো হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর ওয়ারী থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ওই মাসের প্রথম দিকে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন। মামলায় ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়, আর অজ্ঞাতনামা আসামি ৫০ থেকে ৬০ জন। ইব্রাহিম ২৪ নম্বর আসামি। বিমানের টিকিট, ইমিগ্রেশন ও হোটেল ডকুমেন্টে দেখা যায় তিনি ৭ থেকে ১৬ নভেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থান করছিলেন। তার সাথে ছিলেন তার অসুস্থ বোন রোকেয়া ইসলাম, সেখানকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য। গত বছর ১৯ ডিসেম্বর তার আইনজীবী এসব কাগজপত্র ঢাকা আদালতে দাখিল করে তার জামিন নেন। তখন ম্যাজিস্ট্রেট তার আদেশে বলেন, ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন বলেই প্রতীয়মান হয়। এই ইব্রাহিম এখন ১৬টি মামলার আসামি। এখন বলা হচ্ছে, তিনি ৩ সেপ্টেম্বর দেশে ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের ঘটনার সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
আলোচ্য মামলার বাদি ওয়ারী থানার সাব-ইন্সপেক্টর উৎপল দত্ত অপু মামলার বিবরণে বলেন, একটি টিপ-অফ শেষে তিনি আরো কয়েকজন পুলিশ নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার সময় বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাবের খেলার মাঠে যান, কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। পরে লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন চিহ্নিত ৯৬ জন ও অনেক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সেখানে জড়ো হয়েছিল নাশকতা চালানোর জন্য। তবে পত্রিকাটির একজন প্রতিবেদক এই খেলার মাঠ পরিদর্শন করে জানতে পারে, ওই দিন সাড়ে ১০টার সময় এক ডজন যুবক সেখানে ক্রিকেট খেলছিলেন। খেলোয়াড়েরা জানান, তারা প্রতিদিন সেখানে খেলা করে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে তারা দেখেনি। খেলার মাঠের চার পাশে বসবাসকারী কমপক্ষে ১০ জন মানুষ এই পত্রিকার প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, তারা সেখানে কোনো বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটতে দেখেনি। এই মাঠের পাশের দোকানের মালিক ও দোকান কর্মচারীরাও একই ধরনের কথা বলেছেন। মাঠটি ৮ ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা এবং একটি মাত্র প্রবেশ পথ রয়েছে এই মাঠের। এভাবে সার্বিক রিপোর্টটি পাঠে যে কারো মনে এমন বিশ্বাস জন্মিবে যে, মামলাটি পুরোপুরি সাজানো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সারা দেশই বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ মামলা দেয়া হচ্ছে এ ধরনের আজগুবি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল নিক্ষেপ, সন্ত্রাস চালানো, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া ইত্যাদি সাজানো অভিযোগে দায়ের করা হচ্ছে এসব মামলা। এসব মামলার বেশির ভাগের বাদি পুলিশ। কিছু মামলার বাদি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
এসব মামলার আসামি করা থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে না বিএনপির প্রথম সারির নেতাদেরকেও। গত শনিবার দৈনিক যুগান্তরের শীর্ষখবরটির শিরোনাম ছিল : ‘আজগুবি মামলায় ভুতুড়ে আসামি’। খবরটিতে বলা হয়Ñ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ঢাকা মহানগর বিএনপি, অঙ্গসংগঠনের কমিটিসহ মহানগর, জেলা-উপজেলা এমনকি ওয়ার্ড ইউনিয়ন পর্যয়ের কমিটি ধরে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। গত কয়েক দিনে পল্টন, খিলগাঁও, মতিঝিল থানায় পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, ককটেল বিস্ফারণসহ নাশকতার কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, রেজাক খান, নিতাই রায় চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, শহীদুল আসলাম বাবুলসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীর নাম ধরে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিও আছেন অনেক। এসব আজগুবি মামলা করেই থেমে থাকেনি পুলিশ। সেই সাথে সাজানো মামলা জেনেও পুলিশ এসব মামলার আসামি গ্রেফতারেও বেশ তৎপর। পল্টন থানায় করা মামলায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেছেন, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ দিনে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে তিন হাজারেরও বেশি গায়েবি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে নামে-বেনামে প্রায় তিন লাখ নেতাকর্মীকে। গ্রেফতার করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। তিনি ওই দিন বক্তব্য দেয়ার সময় দাবি করেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮০ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার অভিযোগÑ শুধু বিরোধী দল নয়, গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে এ সরকার অপরাধী বানাচ্ছে। সরকারের অপরাধের তালিকায় আছে স্কুল-কলেজের কোমলমতি ছাত্রছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক, শিল্পী, আলোকচিত্রী, সাংবাদিক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, যাত্রীকল্যাণের মহাসচিবের মতো নিরীহ নাগরিক, শিশু, বৃদ্ধসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।
তার অভিযোগ যে খুব একটা অমূলক তা নয়। গত শনিবার এক খবরে দৈনিক যুগান্তর জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের আরেক অধ্যাপক ড. মোরশেদ হাসান খান ও প্রকৌশলী আ ন হ আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে একই থানায় মামলা হয়েছে।
আসলে সরকারের তথা ‘উপরের’ নির্দেশে পুলিশের এসব ভুতুড়ে, আজগুবি ও গায়েবি মামলার ব্যাপকতা দেখে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া এ ধরনের মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আসামি করার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা আশঙ্কার জন্ম নিয়েছে। জনমনে প্রশ্নÑ সরকার কী আসলেই দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়? না বিরোধী পক্ষের ওপর দমন-পীড়ন আরো জোরদার করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়েই এ ধরনের ভুতুড়ে মামলা দায়েরের তৎপরতা সমধিক জোরালো করে তুলছে? না হলে বিরোধীপক্ষের জোরালো কোনো আন্দোলন কর্মসূচি না থাকলেও কেন ঈদুল আজহার কয়েক দিন আগে থেকেই এ পর্যন্ত ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর এ ধরনের কঠোরতা অবলম্বন শুরু হয়েছে? আসলে একজন মন্ত্রীর এবারো নির্বাচনী খালি মাঠে গোল দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা সে আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বিএনপি নেতা ও বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলকে চাপে রাখতেই এসব আজগুবি মামলায় ভুতুড়ে আসামি দেয়া হচ্ছে। তবে ‘উপরের’ নির্দেশে তড়িঘড়ি করে কারণ ছাড়া এ ধরনের ভুতুড়ে মামলা দায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থার চরম সঙ্কট করতে পারে। এতে সরকারের ভাবমর্যাদাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে অনেকে মনে করেন। হ


আরো সংবাদ



premium cement