দৃষ্টিপাত : পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু
- ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
বাংলাদেশে যে কয়েকটি শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তার মধ্যে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর কারণ প্রধান। অথচ অভিভাবকদের সচেতনতাই পারে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর উদ্বেগজনক হারকে অনেকাংশে কমিয়ে আনতে। সারা বিশ্বে এভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি, ভারী বর্ষণ, জলাবদ্ধতা, ঘরের কাছাকাছি জলাশয় বৃদ্ধি ও বন্যা শিশুমৃত্যুর মূল কারণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) পানিতে ডোবাসহ বিভিন্ন কারণে মৃত্যু ও আহতদের নিয়ে ২০১৬ সালে জাতীয় জরিপ করেছে। তাতে দেখা যায়, দেশে প্রতিদিন ৫৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে পানিতে ডুবে। এর মধ্যে এক থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোর ৪০ জন এবং বয়স্ক ১৩ জন। জরিপে দেখা যায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৯ হাজার ২৪৭ জন। এর মধ্যে শিশু ১৪ হাজার ৪৩৮ জন। আর বয়স্ক মানুষ চার হাজার ৮০৯ জন।
জাতীয় জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে এক লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৬ জন মানুষ পানিতে ডুবে আহত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৯৬ জন পানিতে ডুবে আহত হয়েছিল। মেডিক্যাল জার্নালের এক প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বিভিন্ন রোগে শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। ২০১১ সালে এই হার বেড়ে ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে যা দ্বিগুণেরও অধিক।
পানিতে ডুবে মৃত্যু বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ হলেও তা প্রতিরোধে সরকারের দেশব্যাপী তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিআইপিআরবি ২০০৫ সাল থেকে ‘আঁচল’ নামে এক কর্মসূচির মাধ্যমে পানিতে ডোবা প্রতিরোধে এবং এ জন্য সচেতনতামূলক কাজ করছে। বিভিন্ন গ্রামে দিবাযতœ কেন্দ্র তৈরি করে সেখানে শিশুদের রাখা হচ্ছে। দিনের যে সময় বাবা ও মা দু’জনেই ব্যস্ত থাকেন, তখন শিশুদের দিবাযতœ কেন্দ্রে এনে রাখা হয়। সারা দেশে এদের এক হাজার ৭০০টি কেন্দ্র আছে যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তা ছাড়া প্রতিটি অঞ্চলে এ ধরনের সেবা এখনো পৌঁছেনি।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ফলে যেমন তার পরিবার সন্তান হারায়, তেমনি দেশ হারায় মূল্যবান মানবসম্পদ। তাই পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধ করতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যদি অভিভাবক তার শিশুর ওপর বিশেষত সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ভালোভাবে নজর রাখেন, তা হলে শিশুমৃত্যুর হার অনেকটা কমে আসবে। কারণ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ সময়েই শিশুমৃত্যুর হার বেশি। ডোবা ও পুকুরের চার পাশে বেড়া দেয়া উচিত। ১০ মাস থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের প্রতি পরিবারের, বিশেষ করে মায়ের সার্বক্ষণিক নজরদারি এবং চার বছর বয়স থেকে শিশুকে অবশ্যই সাঁতার শেখানো দরকার। পানি থেকে তোলার পরপরই শিশুকে কার্যকর প্রাথমিক চিকিৎসা, অর্থাৎ শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে জরুরি সাহায্য করা; কারণ ডুবে যাওয়ার সময় শিশু অক্সিজেন-স্বল্পতায় ভোগে। উদ্ধার করা শিশুকে দ্রুত হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বালতির পানিতে ডুবে, পুকুরে পড়ে, বাড়ির পাশে ডোবায় পড়ে শিশুমৃত্যু ঘটে। যদি বাড়ির আশপাশে পুকুর বা ডোবা থাকে, তাহলে বাড়ির শিশুটির প্রতি বাড়তি নজর দিতে হবে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যায়। তাই এ সময় শিশুদের প্রতি অতিরিক্ত সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
শামীম শিকদার
সম্পাদক, মাসিক কিশোর আনন্দ, কাপাসিয়া, গাজীপুর
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা