২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কাগুজে বাঘদের কদর ও বিএনপির ‘বাসর’

-

অস্ট্রেলিয়া সফরে গেলে ইমরান খানের গাড়ির কাচ নাকি লিপস্টিকের দাগে পুরোপুরি লাল হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশী ললনারাও এ েেত্র খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। লোকে বলে, ক্রিকেট খেলা না বুঝলেও অনেক বাঙালি ললনা শুধু পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের কারণেই ক্রিকেটের সমঝদার হয়ে পড়েছিলেন। শুধু ঢাকা স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে কোনো হতচ্ছাড়া ছুঁড়ির ‘ম্যারি মি আফ্রিদি’ মার্কা প্লেকার্ডই প্রদর্শিত হতো না।
ইমরান খান একবার ঢাকায় এলে হোটেলের লবিতে এ দেশের এলিট শ্রেণীর ললনাদের মধ্যে রীতিমতো ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়ে গিয়েছিল। অবস্থা এতটুকুই সঙ্গীন হয়ে পড়ে যে, জিনে ধরা রোগীর মতো বেহুঁশ হয়ে কেউ কেউ তার কোলেও নাকি বসে পড়তে চেয়েছিলেন। একপর্যায়ে সে সময়কার প্লেবয় ও ‘বিশ্ব নারীকুলের নয়নমণি’ ইমরান খান মন্তব্য করেছিলেন, অসহ্য! বিষয়টি নিয়ে তখনকার পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখি হয়েছিল। এখন পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক বা গুণীজনের স্মৃতিচারণায় সে বিষয়টি উঠে আসেনি।
বাংলাদেশের সাংবাদিক বা গুণীজনরা অবশ্য ইমরান খানের অন্যান্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। তিনি মতায় বসেই কী কী কৃচ্ছ্র সাধন করলেন, কী কী যুগান্তকারী পদপে নিলেন সেসব উল্লেখে অনীহা থাকলেও ইমরান খানের সুযোগসন্ধানী দ্বিতীয় স্ত্রী তার সাবেক স্বামী সম্পর্কে কী কী মন্তব্য করেছেনÑ সেসব প্রকাশে আমাদের মিডিয়ার আগ্রহে কোনো কমতি দেখা যায়নি। এ দেশের প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকাকে দেখে মনে হয়েছিল, এটি যেন ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রীর মুখপত্র বনে গেছে।
আজ ইমরান খানের তৃতীয় স্ত্রী বোরখাওয়ালী হলেও সে দিন বোরখাওয়ালীরা ইমরানের কাছাকাছি ঘেঁষা বা তার কোলে বসার জন্য ফাইট করেননি। বরং এ যুদ্ধ করেছিলেন এ দেশের তখনকার গ্ল্যামারাস নায়িকা ও গায়িকারা। এদের অনেকেই এখন মধ্যবয়সী বা পড়ন্ত যৌবনা। পাঠকদের অনেকেরই স্মৃতিপটে এদের অনেকের চেহারা ভাসছে! নামগুলো আর নাই বা বললাম।
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব প্রগতিশীল মহিলার তিনটি জিনিস ভয়ানকভাবে বর্ধিত হতে থাকে। এক. শরীরের আয়তন, দুই. কপালে টিপের আয়তন, তিন. মনের মধ্যে ঘৃণার বিস্তৃতি। যারা ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে কপালে এ ধরনের বড় টিপ পড়েন তাদের কথা আলাদা। নিজের বিশ্বাসের প্রতি আস্থাবান থাকলে সে জন্য সমালোচনা নয়Ñ সব ধর্মবিশ্বাসীর কাছ থেকে বরং তারা সম্মান পাওয়ার কথা।
প্রশ্ন দাঁড়ায় তাদের নিয়ে, যারা মুসলিম হয়েও বাঙালি সংস্কৃতির নামে এগুলো পুরো জাতির ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন। যারা তাদের মতো এ অবয়ব ধারণ করেন না, তাদের মাঝে বাঙালিত্বের ঘাটতি দেখেন, এমনকি কেউ কেউ রাজাকারিত্বের উপাদান খুঁজে পান। চিন্তার েেত্র তারা এতটুকু অসহিষ্ণু ও মারমুখো যে, তা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কখনো বা দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেন। এই মহীয়সীরা ভুলে যান, কিছুদিন আগে ইমরান খানদের জন্য কী কী কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। যে মেয়েটি স্টেডিয়ামে বসে ‘ম্যারি মি আফ্রিদি’ লেখা প্রদর্শন করেছিলÑ সেও আজ এই ঘৃণার মেশিনদের কাতারে যোগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এ দেশে আসলে বুদ্ধিবৃত্তিক যে লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে উঠেছে এরা হলেন তারই মহিলা ব্রিগেড। এদের বিপরীতে একটা শক্ত প্রতিপ না থাকায় দেশে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক েেত্র এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে যারা এই ধরনের কূপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে শক্ত হাতে দাঁড়াতে সম তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাসহ আরো দুয়েকজন সুধীজনের দৃষ্টি কেড়েছিলেন। টকশোতে তাদের যৌক্তিক উপস্থাপনার সামনে প্রতিপরে বক্তা, প্রতিপকে ঠেস দেয়া সাংবাদিক এবং প্রতিপ দলের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল অ্যাংকর, এই ত্রয়ীকে একাই কুপোকাত করে ফেলতেন। তার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প থেকে স্বীকৃতিও জুটে গেছে। অল্প বয়সেই অনেককে ডিঙিয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতেও স্থান করে নিয়েছেন ফারহানা। বিএনপির সেলিব্রিটি নেতাদের একজন হয়ে গেছেন। সম্প্রতি ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে হোঁচট খেয়েছি। বিএনপির পুরনো প্রজন্মকে যে কিসিমে চেতনার থেরাপি দেয়া হতো, এখানেও সেই থেরাপি কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার দল আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিল, এবারের ঈদে তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকবে না। এটা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সরকার হামলা, মামলা, খুন, গুম, জেল-জুলুম ও গ্রেফতার আতঙ্কের মাধ্যমে দেশটিকে কারাগার বানিয়ে ফেলেছে। সেই দেশে কবি নজরুলের কথামতো রুমিন ফারহানা যেন এই চেতনার আলো ধার করে পুষ্পের হাসি হাসলেন। বাস্তবে যিনি প্রতিদ্বন্দ্বী, নাম না জানা নাটকে তার সখী হতে হলো কেন? এই সখী সাজা ছাড়া কি এই গানটি গাওয়া যেত না? নাটকে যে সখ্যতা দেখানো হয়েছে, বাস্তবে কি কোথাও এর প্রতিফলন আছে? নাকি কর্মী-সমর্থকদের চোখের আড়ালে কোথাও এই সখ্যতা চালু রয়েছে? ছোট্ট একটি নাটিকা এরূপ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তরুণ এই নেত্রীর কথাগুলো জানা থাকা দরকার।
স্বাভাবিক অবস্থায় এই বিজ্ঞাপনের বক্তব্যের সাথে কখনোই রাজি হতেন না এই নেত্রী। তাই কৌশলে তাকে দিয়ে বোধ হয় এই নিষ্পাপ অভিনয় সারিয়ে নেয়া হয়েছে। নাটিকা না বলে এটিকে ‘আওয়ামী উন্নয়নের বিজ্ঞাপন চিত্র’ বলাই শ্রেয়। নিজের মুখে কিছু না বললেও পাশের দুই সখা-সখী সে কথাটিই বলে দিলেন। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের উন্নয়নের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে অভিনয় করে গেলেন ইতোমধ্যে ‘বিএনপির অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই নেত্রী।
আপনাদের হয়তো মনে আছে, কিছুদিন আগে ভুল করে ‘ প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি বাজানোর কারণে বাংলাদেশ বেতারের বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে অপু উকিলদের সরকার। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা কি পারবেন তার এই সখীকে সাথে নিয়ে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটি এমনি কোনো অভিনয়ের আড়ালে গাইতে? বিশেষ করে সখা-সখীদের নিয়ে এমন সময়ে তিনি উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন, যখন বিএনপি নেত্রীর ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে।
২০১৩-২০১৪ সালে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সহযোগী আইনজীবীদের ওপর নিজ হাতে ইট নিপে করে ‘ইস্টকন্যা’ উপাধি পেয়েছিলেন যুব মহিলা লীগের অপু উকিল। যাকে সখী সাজিয়ে এবং অন্য একজন সখা যিনি পরম আবেশের সময় আওয়ামী উন্নয়নের কথাটুকু জানিয়ে দিলেন, তিনি অপুর সখী সেজে এবং অন্য এক আওয়ামী সখাকে সঙ্গী করে গাইলেন, ‘আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো...।’ আকাশের ঠিকানায় লেখা তার সেই চিঠি পড়ে বিএনপি ঘরানার অনেকেরই হেঁচকি উঠে গেছে।
এটাই অপু এবং ফারহানাদের মধ্যে পার্থক্য।
বিএনপির এই নতুন তারকাদের নিয়ে আমরা একটু আশ্বস্ত হতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম নতুন এই প্রজন্ম নিজেদের দেশপ্রেম অটুট আছে কি নাÑ সেই সনদের জন্য চেতনাপন্থীদের দ্বারস্থ হওয়ার মতো হীনম্মন্যতা থেকে মুক্ত। জানি না সেই আশায় গুড়েবালি হবে কি না। যে চেতনাধারীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে পর্যন্ত একজন মুক্তিযাদ্ধা হিসেবে স্বীকার করেন নাÑ তাদের একটুখানি প্রীতি ও নেক নজরের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকা লজ্জাকর। বিএনপির কারো কারো এই দুর্বলতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল প্রতিপ। তাই তারা বিএনপির মধ্যে কট্টরপন্থী ও মডারেট এই দুটি ধারা সৃষ্টি করে রেখেছে। এদের মধ্যে কট্টরপন্থী হিসেবে চিহ্নিতদের মন্দ চোখে দেখা হয়। একটি সীমানাও টেনে দেয়া হয়েছে যার বাইরে পা ফেলতে মডারেট অনেকেই ভয় পান। নিজেরা রাস্তায় নামতে ভয় পান, অথচ নিজেদের দুর্গতির জন্য হাস্যকরভাবে জামায়াতকে দায়ী করেন। মিডিয়া এই ধারণায় আলগোছে বাতাস দেয়। বিএনপির ওপর এই কিসিমের বাতাস এ দেশের রাজনীতিকে ক্রমাগত জটিল করেছে।
নব্বইয়ের শুরুতে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি শুরু হওয়ার পর দলীয় বিবেচনায় আমরা বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্টকে দেখেছি। দু’টি দলের উদাহরণই আমাদের সামনে রয়েছে। বিএনপি ঘরানার প্রথম প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস দৃঢ়তা দেখিয়ে জেনারেল নাসিমের ক্যু ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। এই প্রেসিডেন্ট এ দেশের সুশীল মিডিয়ার দুই চোখের বিষ ছিলেন। ‘পাকিস্তানপন্থী’ হওয়ার দুর্নামও ছিল।
পরের প্রেসিডেন্ট ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন মডারেট গ্রুপের। তবে তাকে নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায় দলটি। দলীয় বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি দলের প্রতিষ্ঠাতার কবর জিয়ারতকে প্রেসিডেন্টের নিরপেতার জন্য তিকর গণ্য করলেন। এই টানাপড়েনেই তাকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে যেতে হয়। এর পর একজন শিক-গবেষককে প্রেসিডেন্ট বানানো হয়। তিনি এই পদটিকে অত্যন্ত মজাদার ও লোভনীয় চাকরি হিসেবেই গণ্য করে গেছেন। তিনি শুধু নিয়োগকারী দলের প্রতিই আনুগত্য দেখাননি, পরে যারা জরুরিভাবে মতা অধিগ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি আরো বেশি আনুগত্য দেখিয়ে গেছেন। পরম নিশ্চিন্তে আরো দুটি বছর চাকরি করে গেলেন! ওপরে বর্ণিত, মিডিয়ার বাতাস দেয়াও তার ওপরে কাজ করেছে।
এ েেত্র আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন। আওয়ামী নেত্রী একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে অনাহারের হুমকি দেখিয়ে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিলেন। দলীয় আদর্শে আস্থাশীল হলেও বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের মতো একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে সুধী মহলের প্রশংসা কুড়ায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পুরো সম্মান নিয়ে এই সম্মানিত মানুষটি অবসরে যেতে পারেননি। নিয়োগকারী দল থেকে তিনি বিশ্বাসঘাতক খেতাব নিয়ে অবসরে গিয়েছিলেন। তিনি ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মতো আদব লেহাজজনিত কোনো ত্রুটি করেননি। তার কিছু নীতিগত অবস্থান নিয়োগকারী দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে, দলটির বিপে গেছে। কিন্তু পরের দুইজন প্রেসিডেন্ট শতভাগ বিশ্বস্ততা-ও আনুগত্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে গেছেন কিংবা এখনো করছেন।
আওয়ামী লীগ দলীয় এই দুই প্রেসিডেন্টের দলীয় আনুগত্য কিংবদন্তি হয়ে আছে। নিয়োগ পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, আমার নেত্রী কোনো দিন ভুল করতে পারেন না। এই বিশ্বাস তিনি আমৃত্যু পোষণ করে গেছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ হাস্যরসাত্মক কথা বলে দেশবাসীর পেটে খিল ধরিয়ে দিতেন। তবে ভুলেও নিজের অতীত রাজনৈতিক আনুগত্য ভুলেন না। ডক্টর কামাল হোসেন গত ঈদে প্রেসিডেন্টের সাথে ঈদ-শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে সাাৎ পান আস্ত এক আওয়ামী লীগ নেতার। তিনি কামাল ভাইকে আওয়ামী লীগে ফিরে আসার জন্য জোর আহ্বান জানান। নিজের অপূর্ণ কোনো আশা থাকলে তাও নেত্রীর সাথে কথা বলে পূর্ণ করার আশ্বাস দেন বঙ্গভবনের বাসিন্দা এই আজীবন দলীয় নেতা। এ নিয়ে তিনি কোনোরূপ রাখঢাক রাখেননি। সবার সম্মুখেই দলীয় দায়িত্বটুকু পালন করে গেছেন। কোনো মিডিয়া বা সুশীলসমাজও এ জন্য তাকে মন্দ বলেনি কিংবা নিরপে হওয়ার জন্য কোনোরূপ উল্টো বাতাস দেয়নি।
কিন্তু সেই একই বাতাস বা পরামর্শ ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী অজস্র পেয়েছিলেন। চৌধুরীর সেই তের কথাটুকু বিভিন্ন আসরে তুলে ধরছেন তারই ছেলে মাহী বি. চৌধুরী। তার রাজনীতিও এই পিতৃ অপমানের প্রতিশোধকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান। তরুণ এই নেতা এমন কিছু বিষয় সামনে নিয়ে আসছেন, যাতে ঐক্যের নামে পুরনো তকেই বড় করে তুলে ধরা হচ্ছে।
বিভিন্ন টকশোতে তিনি হঠাৎ করে জামায়াতকে আক্রমণ শুরু করেছেন। অথচ তার বাবাকে অপমানের পেছনে শতভাগ ‘জাতীয়তাবাদী ক্রোধ’ কাজ করেছে। এখানে পাকিস্তান বা ইসলামপন্থীদের কোনো ােভ জড়িত ছিল না। ইসলামপন্থীরা বরং কবরে ফুল দেয়ার সংস্কৃতিবিরোধী।
কাজেই জাতীয় ঐক্যের েেত্র জামায়াত বিরোধিতার এই সুর দেশের রাজনীতির জন্য যতটুকু না প্রয়োজন, মনে হচ্ছে অন্য কোথা থেকে এই সুর তোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বরং জামায়াতের গণভিত্তি শক্ত করা হচ্ছে। বিএনপি বা বিশ দলীয় জোট কিভাবে চলবেÑ এটা নিয়ে মাহী বি. চৌধুরী বা ড. কামাল হোসেনদের মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। তারা বিশ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার পরিবর্তে সরকারের কাছে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে পারেন। সেই দাবি বরং বেশি যুক্তিযুক্ত ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। চরম দুশমন জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগও ঐক্য করেছে। বরং বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই জামায়াতের কৌশলগত ঐক্য বেশি হয়েছে। ১৯৮৬ সালে এরশাদের অধীনে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াত অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে এক সাথে দীর্ঘ আন্দোলনের কথা তো সবারই জানা আছে। এর সুবাদেই ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ মতায় আসতে পেরেছিল। আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রয়োজন হলে তারা আবারো জামায়াতের সাথে কৌশলগত ঐক্য করা অসম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগের জন্য যেকোনো কিছু যেকোনো সময়ের জন্য ‘হালাল’ হয়ে যায়। জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাজনীতি করেন বলেই মাহী বি. চৌধুরী বা ড. কামাল হোসেনরা এ বিষয়টি ধরতে পারেন না। কিংবা অন্য কোনো মতলবে চেপে যাচ্ছেন।
বিএনপিকে আজ বেকায়দায় পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। বিএনপিকে নওশা সাজিয়ে এমন বাসর ঘরে ঠেলে দিতে চান যেখানে বাসরশয্যা বা কনে কোনোটিই থাকবে না। বিএনপি থেকে জিয়া ফ্যামিলিকে বিযুক্ত করার কথাও ঠারেঠুরে শোনা যাচ্ছে। কাজেই মাহী বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন জাতীয় ঐক্যের আড়ালে কি ‘এক-এগারো’র রোডম্যাপ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছেন? এ ধরনের সন্দেহের ওপর কি কখনো জাতীয় ঐক্য হবে?
এ দিকে ওবায়দুল কাদেররা এক-এগারোর গন্ধ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তার ধারণাকে অমূলক বলে চালিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ কথাগুলো আমরা অনেক বলেছি। মতা হাতে পেয়ে আওয়ামী লীগ যেন হুঁশ হারিয়ে ফেলেছে। এক-এগারো আমাদের এগিয়ে নেয়নি। বরং অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। কাজেই এ ধরনের হঠকারিতামূলক এক-এগারোর আগমন রাজনীতিবিদরাই বন্ধ করতে পারেন। এ জন্য দরকার নির্বাচনসহায়ক সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। এখনো সেই সময় ফুরিয়ে যায়নি। জানি না আরেকটি এক-এগারোর গন্ধ ওবায়দুল কাদেরদের হুঁশ ফেরাবে কি না।
minarrashid@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement