২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্মরণ : মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ

-

আজ ১৮ আগস্ট মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও ইসলামি শাস্ত্রজ্ঞ। পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে তার জন্ম। জ্ঞানানুসন্ধানী আকরম খাঁ ইসলাম ধর্ম এবং বাংলা ও ভারতের মুসলমানদের ইতিহাস, সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন আহল-ই-হাদিস ও মোহাম্মদী আখবার পত্রিকায়। মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৯০৮ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে মোহাম্মদী ও আল-এসলাম পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। এরপর তিনি নিজে কলকাতায় ১৯২০-১৯২২ সালের মধ্যে জামানা ও সেবক নামে দু’টি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সেবক অসহযোগ ও স্বদেশী আন্দোলনকে সমর্থন জোগায়। সেবক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সরকারবিরোধী সম্পাদকীয় লেখার জন্য আকরম খাঁ গ্রেফতার হন। পরে ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে তিনি ওই সময়ের একমাত্র বাংলা দৈনিক পত্রিকা আজাদ প্রকাশ করেন। তিনি ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯১৮ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে তিনি খিলাফত কমিটির সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। এ সম্মেলনে বিশিষ্ট খেলাফত নেতৃবৃন্দ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৮৫-১৯৫৮), মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৫-১৯৫০) ও মাওলানা মুজিবুর রহমান (১৮৭৩-১৯২৪) উপস্থিত ছিলেন। আকরম খাঁকে তুরস্কের ওসমানীয় খিলাফতের জন্য অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়।
হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী আকরম খাঁ ১৯২২ সালে কলকাতায় চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টি এবং ১৯২৩ বেঙ্গল প্যাক্টের প্রতি সমর্থন জানান। ১৯২৬-১৯২৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সমসাময়িক অন্যান্য রাজনৈতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে আকরম খাঁ ভারতীয় জাতীয় রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে স্বরাজ পার্টি ও কংগ্রেস উভয় দল থেকেই পদত্যাগ করেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি প্রজা বা কৃষক রাজনীতির সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। ১৯৩৫ সালে বেঙ্গল প্রজা সমিতিতে অনৈক্য দেখা দিলে ১৯৩৬ সালে তিনি কৃষক রাজনীতি ছাড়েন এবং সক্রিয়ভাবে মুসলিম লীগে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগের সেন্ট্রাল ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। ভারত বিভাগের পর তিনি পূর্ববঙ্গে চলে আসেন। তার প্রধান রচনা সমস্যা ও সমাধান, মোস্তফা চরিত, আমপারার বঙ্গানুবাদ। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ মোসলেম বাঙলা সামাজিক ইতিহাসে তিনি পীরবাদ ও সুফিবাদের প্রভাবসহ বাংলাসমাজের বিভিন্ন দিক এবং বাংলার মুসলমানদের অবনতির কারণ আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি আকবরের দীন-ই-ইলাহীর সমালোচনা করেন এবং আওরঙ্গজেবের ধর্মনিষ্ঠা ও তৎকালীন সমন্বয় প্রবণতার বিরুদ্ধে তার জিহাদের প্রশংসা করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের ১৮ আগস্ট ইন্তেকাল করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement