১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাকিস্তানের নির্বাচন : দুর্নীতি ঘুষ ও নারী

-

পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি নাসিরুল মুলক। গত ৩১ মে শেষ হয় পার্লামেন্টের মেয়াদ। তিনি একটি ছোট মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেছেন এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদপে নিয়েছে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে তিনটি বড় দল মাঠ গরম করে রেখেছে : মুসলিম লিগ-নওয়াজ, ইমরানের তেহরিকে ইনসাফ ও পিপলস পার্টি। জামায়াতে ইসলামী, মুত্তাহিদা মজলিস-ই আমল বা এমএমএ, এমকিউএম, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোশাররফের দলÑ এরাও আছেন নির্বাচনের শিবিরে।
এত দিন ক্ষমতায় ছিল পিএমএল-এন বা পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ। দুই মাস আগে নওয়াজ আদালতের রায়ে ‘রাজ্যহারা’ নির্বাচনের অযোগ্য, এমনকি পার্টির নেতা হওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছেন। লন্ডনে বাড়ি কেনার দুর্নীতির অভিযোগে শুক্রবার তাকে জরিমানাসহ ১০ বছরের এবং মেয়ে মরিয়মকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই মামলায় বাদি ইমরান খান। রায়ের বিরুদ্ধে অবশ্য নওয়াজ-মরিয়ম আপিল করছেন। বিশেষ করে এ মুহূর্তে মরিয়ম ও নওয়াজের আর কোনো উপায় নেই। নওয়াজ-জামাতা ক্যাপ্টেন সফদার আওয়ানকেও দুর্নীতি কর্তৃপ গ্রেফতার করেছে।
নওয়াজ শরিফ সাফ বলে দিয়েছেন, যদি তার দল ফিরে আসে তিনি আদালতের বিষয়গুলো ‘সুরাহা’ করবেন। তিনি আইন করবেন, তার প্রতি আদালতের অবমাননাকর বিষয়গুলো সুরাহা করবেন এবং রাজনীতিতে ফিরে আসবেন। জনসভায় তিনি বলেন, ‘সংসদে আইন করে আঘাত হানব।’ ‘পাঁচ বিচারকের কথা সবাই জানেন। তাদেরও যথাসময়ে জবাবদিহি করতে হবে।’ নওয়াজ বলেছেন, ইমরান বা জারদারি-বিলওয়াল কোনো ফ্যাক্টর নন। ২০১৩ সালে তাদের পরাজিত করা হয়েছে। ২০১৮ সালেও তারা পরাজিত হবেন। অনেকে মনে করেন, আদালত-সেনাবাহিনী-ইমরান খান এক চরকিতে ঘুরছে। দীর্ঘ দিন সেনাশাসিত দেশটি এখন গণতন্ত্রের বার্ষিকী উদযাপন করছে। তবে কতটুকু গণতন্ত্র আছে তা পর্যালোচনার বিষয়। গণতন্ত্রের বিকাশ এবং সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি পরিমাপের কিছু মাপকাঠি রয়েছে। মানুষের প্রকৃত জীবনধারণের গতিপ্রকৃতিই মূলত সঠিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের বিকাশের ধারা চিহ্নিত করে। নওয়াজের প্রশাসন কতটুকু সফল, এখন জনগণ তা বিশ্লেষণ করছেন। পাকিস্তানের রাজনৈতিক বোদ্ধারা নওয়াজ সরকারের অর্জনের সাথে ভারতের সরকারের অর্জনের হিসাব-নিকাশও করছেন।
ইমরান খান অভিযোগ করে আসছেন যে, ১৯৯০, ১৯৯৬ ও ২০১৩ সালে নওয়াজ আম্পায়ারের সাথেই খেলেছেন। জুডিশিয়ারি ও মিলিটারি তারা। কিন্তু ২০১৮ সালে দেখা যাচ্ছে, আম্পায়াররা ইমরানের সাথেই খেলছেন। ইমরান ‘মহিলা পীর’ বুশরাকে বিয়ে করেছিলেন প্রাদেশিক পরিষদে জয়লাভ করতে, কিন্তু তা হয়নি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বুশরা বিবি ইমরানের বাসা ছেড়ে পৈতৃক বাড়িতে আছেন। জানা যাচ্ছে, ইমরান চতুর্থ বিয়ের জন্য ফ্রান্সের এক বিদেশিনীকে আনতে চান। ল করা গেছে, ইমরানের রাজনৈতিক বড় বড় কাজে সুন্দরী মহিলারা বাগড়া দিয়েছেন। এবার তার তালাকপ্রাপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান আত্মজীবনী লিখেছেন। সেখানে অন্যান্যের সাথে ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম, ইমরান খান ও জেমিমা খানের চরিত্র হনন করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অপ্রকাশিত জীবনী হ্যাকাররা তার ল্যাপটপ থেকে হ্যাক করে প্রকাশ করে দিলে হইচই শুরু হয়। ইমরান এ বিষয়ে কথা না বললেও ওয়াসিম ও জেমিমা খান অপো করছেন বইটি প্রকাশের; তারা পৃথকভাবে পাকিস্তানে ও লন্ডনে মামলা করবেন। সাংবাদিকরা রেহাম খানকে প্রশ্ন রেখেছেন, নির্বাচনের সময় কেন তিনি বই প্রকাশ করছেন? রেহাম খান বলেন, ‘কোন সময় পাকিস্তানের নির্বাচন হয় তা বলা কঠিন। দুঃখের স্মৃতিগুলো তাড়াতাড়ি ঝেড়ে ফেলতে চাই।’ নির্বাচনের ফলাফল যা হোক, ইমরানকে আবারো দুই সাবেক বউয়ের সাথে আদালতে বোঝাপড়া করতে হতে পারে। ভারতীয় টিভিতে প্রচার করা হয়েছিল ইমরান ফ্রান্সের এক মহিলার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তখন আরও ১২ জন মহিলার নামও এক এক করে ইমরানকে পড়ে শোনানো হয়, যাদের সাথে তার ‘হটলাইন’ রয়েছে। ইমরান খান জবাবে বলেন, ‘অ্যায়ছা নাম হাম শুনাভি নেহি।’ (এমন নাম আমি শুনিনি।) সঞ্চালক যখন একে একে প্রমাণমূলক তথ্যাদি দেয়া শুরু করেছিলেন, ইমরান তখন বলেন, তিনি একজন তারকা, বিশ্বব্যাপী তার বহু ফ্যান রয়েছে। মহিলা ফ্যানদের সাথে কথা বা দেখা করলেই কি তাকে প্রেম বলতে হবে? সাধারণ নির্বাচনের আগে ইমরানের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী রেহাম খানের পদচারণা, বুশরা ও গুলালা ইস্যু, ফ্রান্সের মহিলাকে ঘরে আনা(?) প্রভৃতি রাজনীতির মাঠ সরগরম করে রেখেছে। ইমরান রাজনীতির মাঠে রানে এগিয়ে গেলেও মহিলা নিয়ে ভিন্ন ইমেজের কারণে দলের অনেক উইকেট হয়তো পড়ে যাবে। ইমরান ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাছে টানতে চান। পাকিস্তানে এটা বড় এক নির্বাচনী চাল। তিনি বলেছেন, ‘ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এরা মাদরাসা থেকে কেন সৃষ্টি হয় না? আগের সরকারগুলো কী করেছে? তাদের ‘জেহেনে’ (মস্তিষ্কে) কিছু আছে কি?’ তার ভাষায়Ñ ‘লাখ লাখ মাদরাসার সিলেবাসের উন্নয়ন করা হবে, যাতে মাদরাসার ছাত্ররা ক্যাডার সার্ভিস, সেনা অফিসার, ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেন।’
পাকিস্তানে রাজনীতি করেনÑ এমন মহিলাদের মধ্যে আইলা মালিক একজন সেরা। তাকে মূলত পাকিস্তানে সুন্দরীদের সেরা দু-একজনের মধ্যে ধরা হয়। আইলা মালিক হলিউড-বলিউডে অভিনয় করার যোগ্য। তিনি অবিবাহিত ও বাগ্মী। তিনি পিটিআইর সেন্ট্রাল মেম্বার এবং নির্বাচনে ইমরান খানের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। সবচেয়ে কম বয়সী অবিবাহিত গুলালা তার এলাকায় ইমরানের প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআই-গুলালা দল গঠন করে ইমরান খানকে বেকায়দায় ফেলেছেন। ইমরান-গুলালা উপাখ্যান শেষ হলেও চিত্রনাট্যের যবনিকা পড়েনি। গুলালা তার এলাকায় বিজয়ী হবেন মনে করা হচ্ছে। নতুন দলের অনুমোদন না পেলে গুলালা স্বতন্ত্রভাবে ভোটে লড়বেন। নওয়াজও গুলালাকে নিয়ে বেকায়দায়। মিস গুলালা বলেছেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বলার জন্য ‘নওয়াজ সাহেব’ তাকে অনুরোধ করেছেন। গুলালা কোনো কথা হজম করতে পারেন না বলে উগলে দেন সব কিছু। এ জন্য জনগণ তাকে পছন্দ করেন। সমস্যা হলোÑ পিটিআইর লোকেরা সুযোগ পেলেই গুলালাকে ডিম ও টমেটো নিপে করে। এর আগে তাকে নিষিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনে পিটিআই তদবির চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এ দিকে, খোদ ইমরান খানের আবেদনই কমিশন বাতিল করে দিয়েছে। আপিলে গিয়ে হয়তো টিকবে। এ দিকে, নওয়াজ শরিফের হাল ধরেছেন তারই সুদর্শনা মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ। তিনি নাকি পাকিস্তানের সেরা পাঁচ সুন্দরীর একজন। বাবার শেখানো মতে রাজনীতির হাল ধরেছেন। পাকিস্তানের মাঠে নওয়াজের দলের সমর্থন কমেনি, অন্য দিকে বেড়েছে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানিকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে অত্যন্ত মতাবান মহিলা হিসেবে মনে করা হয়। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় ভারতীয় পত্রপত্রিকার সমালোচনা করে বলেছিলেন, ভারত সফরে গেলে সফরের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা না করে পত্রপত্রিকাগুলো তার মাথার চুল, চশমা, কাপড়, পোশাক, স্টাইল, চেহারা ও চাহনির প্রশংসা করে প্রতিবেদন লিখে। হিনা রব্বানি পিপিপির টিকিট নিলেও তার বাবা গোলাম রব্বানি খাঁর পাঞ্জাবের ১৭৭ সিটে টিকে গেছেন বলে হিনা আর দাঁড়াবেন না; এমনকি মহিলা সদস্য পদেও না। তিনি এখন বাবার হয়ে কাজ করছেন এবং দেশব্যাপী পিপলস পার্টির প্রচার করছেন। তাকে দেখা ও তার কথা শোনার জন্য সব সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছে। আরেক সুন্দরী মহিলা আয়শা আহদ নওয়াজ শরিফ দলের হেভিওয়েট হামজা শাহবাজের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন। হাইকোর্টের নির্দেশে পাকিস্তান পেনাল কোডের ৩৫৪ ধারায় পুলিশ মামলা নিয়েছে। নারীদের আন্দোলনও পাকিস্তানে বেশ চাঙ্গা। তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে অঙ্গন উত্তপ্ত করে চলেছে।
১২ মে ২০১৭ সালে করাচির মারাত্মক হত্যাকাণ্ডের জন্য পিপিপির চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টকে (এমকিউএম) দায়ী করেন। তিনি ইমরান খানকে এমকিউএমের প্রতিষ্ঠাতা আলতাফ হোসেনের ‘আরেক চেহারা’ বলে মন্তব্য করেছেন। পারভেজ মোশাররফের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তার কারণে আমাদের ১২ জন কর্মী নিহত হয়েছে। এ যেন জালিয়ানওয়ালাবাগের আরেক হত্যাকাণ্ড। পিটিআই আমাদের র‌্যালিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘আলতাফ হোসেনের সুরতে ইমরান খানকে করাচির লোকজন পছন্দ করবে না।’ বিলওয়াল বলেন, ‘কোটাপ্রথা পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী ১৯৪৮ সালে চালু করেছিলেন, পিপিপি নয়।’ তিনি নওয়াজ শরিফকে অভিযুক্ত করে বলেন, করাচি ও সিন্ধুর সাথে তিনি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছেন। পাঞ্জাবের কারণে সিন্ধু নদের পানি শুকিয়ে গেছে। বিলওয়াল বলেন, মতায় গেলে করাচির জন্য প্রচুর প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। পিটিআই কিংবা এমকিউএম করাচির জন্য কাজ করবে না।
নওয়াজ-তনয়া মরিয়ম নওয়াজ বলেছেন, ইমরান নিজেই স্বীকার করেছেন ‘অফশোর অ্যাকাউন্টে’ তিনিও হিসাব খুলেছেন। কিন্তু নওয়াজকে এ জন্য দোষী করা হলেও ইমরান খান ‘মি. কিন’ হিসেবেই আছেন। কিভাবে এটা হলো, তিনি আদালতের কাছে জানতে চান। তিনি অভিযোগ করেন, ‘এসব কাজ উপরের হুকুমে হয়েছে। দেশের বিচারব্যবস্থা এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।’ মরিয়ম দুঃখ করে বলেন, ‘যারা পুরস্কারের যোগ্য, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যাদের বন্দী করা উচিত, তারা ফুলের মালায় সংবর্ধিত হচ্ছে। এটা হলো পাকিস্তানের মূলধারার রাজনীতি!’ তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী, আদালত ও ইমরান একই মেরুতে দাঁড়িয়ে। তাই গণতন্ত্র কিভাবে কাজ করবে এবং কিভাবে জনগণের আশা-আকাক্সার প্রতিফলন ঘটবে, তা বোধগম্য নয়।’ নওয়াজ বলেছেন, ‘অজানা শক্তি পাকিস্তানের গণতন্ত্র ও মিডিয়াকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছে।’
১৯৯০ সালে সেনাবাহিনী সহায়তা করায় নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার ইমরানের পিটিআই-কে সহায়তা করায় ইমরান খানও প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। রাজনীতির পণ্ডিতরা বলছেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জাতীয় রাজনীতির ক্যাটালিস্ট। সেনাবাহিনীর চাপে নওয়াজ শরিফ ১৯৯৩ সালে পদত্যাগ করেন, আর ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে মতাচ্যুত হন। এবার আদালত তাকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করেছেন। এ জন্য নওয়াজের সব রাগ গিয়ে পড়েছে জেনারেলদের ওপর। তা ছাড়া, তিনি চেয়েছেন ভারতের সাথে সম্পর্কের ব্যারোমিটার নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আফগান, পাকিস্তানি তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ছক নিজে কষতে। সেনাবাহিনী মনে করে, এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। নওয়াজ শরিফ এমন অবস্থায় বলেছেন, ২০০৮ সালে ভারতে মুম্বাই হামলায় ১৬৬ জন নিহত হয় এবং সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জড়িত। এ বিস্ফোরক মন্তব্যে পাকিস্তান ও ভারতের মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায়। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি সব বিভাগের সেনাপ্রধানদের জরুরি মিটিং ডাকে। সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার নির্দেশে এই জরুরি সভা আহ্বান করা হয় গত ১২ মে। সভার ফলাফল পত্রিকায় আসেনি। সাংবাদিকদের শুধু বলা হয়, নওয়াজের বক্তব্য সঠিক নয়। তবে নওয়াজ অনড়। তিনি বলেন, সঠিক কথাই বলেছি। তিনি প্রশ্ন তোলেনÑ ‘কেন এত দিন এর বিচার হয়নি?’ নওয়াজ সমর্থক পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় জিও টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সর্বাধিক প্রচারিত ও পরিচিত ডন পত্রিকা বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহে বাধা বৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ সমালোচনা শুরু করেছে, যা কয়েক মাস আগেও ছিল না। নাগরিক অধিকার সংগঠন পশতুন প্রোটেকশন মুভমেন্ট, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে গ্রাম ধ্বংসের অভিযোগ এনেছে এবং জাতিসঙ্ঘকে ২০ হাজার নিখোঁজ ব্যক্তির পরিণতি অনুসন্ধান করতে আবেদন জানিয়েছে। দেশে দাঙ্গা, খুন ও গুম বেড়েছে। এমন অবস্থায় পাকিস্তানের জনগণের মনে সেনাবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ দানা বেঁধেছে, যা পাকিস্তানের জন্য হবে খুব ক্ষতিকর।
নওয়াজের প্রচুর জনসমর্থন রয়েছে। জনসমর্থনে ইমরানও এগিয়ে। এ দিকে, আসিফ জারদারির দুর্নীতি পিপিপি-কে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ইমরান বলছেন, ‘আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। নওয়াজ শেষ হয়েছেন, জারদারিকেও শেষ করা হবে।’ সেনাবাহিনী ও আদালত ইমরানকে সহায়তা করায় ভোটের ফলাফল কী হবে তার পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। তবে এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, যদি নওয়াজ শরিফ জয়ী হন, তবে পাকিস্তানে আবারো সেনাশাসন জারি হতে পারে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার

 


আরো সংবাদ



premium cement