২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগযোগ্যতার সংস্কার

-

শিক্ষকতার বিভিন্ন ক্যাটাগরি রয়েছে। কেউ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষক, কেউ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক, আবার কেউ উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষক। তাদের মধ্যে সাধারণত সবচেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকশ্রেণী হলেন উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষকেরা। তাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব সমগ্র শিক্ষার নেতৃত্ব দান করা। অথচ এ সত্য বিষয়গুলো অনুধান করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং প্রশাসনিক নেতৃত্ব। বর্তমানে মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের নেতৃত্ব এ দু’টি সম্মনিত গোষ্ঠীর ইঙ্গিতে পরিচালিত হয়। এই সত্যটুকু আপনি অনুধাবন করতে পারবেন, তখন আপনি জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অধ্যয়ন করবেন।
‘জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ উচ্চ শিক্ষার বেসরকারি শিক্ষকেরা বর্জন করেছে। কারণ বর্তমান বিধানে সরাসরি অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে ১২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকেরা তিন বছর উপাধ্যক্ষ পদের ( স্নাতক পাস কলেজের) অভিজ্ঞতা নিয়ে অথবা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে তিন বছরসহ ১৫ বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকেরা এ পদে আবেদনের যোগ্য বিবেচিত হবেন। আবার উপাধ্যক্ষ পদের জন্য ০৩ বছর সহকারী অধ্যাপক পদের অভিজ্ঞতাসহ ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা নির্ধারণ কর হয়েছে; যা আগে সরাসরি ১২ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল। এ বিধানের কারণে ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য যোগ্যতা হারিয়েছেন। যে যোগ্যতা তাদের আগে থাকলেও বর্তমানে নেই। ৫ ঃ ২ প্রথার কারণে পুরনো ডিগ্রি কলেজগুলোর শিক্ষকেরা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভের বহু আগে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পায়। ২৫ বছর স্নাতক (পাস) কলেজে চাকরি করেও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হচ্ছে না ৫ ঃ ২ অনুপাত প্রথার কারণে অথচ মাত্র আট বছর আগে এমপিওভুক্ত কোনো উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রভাষকের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বর্তমান জনবল কাঠামোর কারণে স্নাতক (পাস) /অনার্স/মাস্টার্স) কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাবেন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য নিয়োগকৃত শিক্ষকেরা।
এ ধরনের ব্যবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষার শিক্ষকেরা এবং মাধ্যমিক পর্যায় থেকে নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের মধ্যে যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে তাতে বেসরকারি শিক্ষা খাতে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। মাত্র ১০ বছরের মধ্যে এ ব্যবস্থার বড় নেতিবাচক প্রভাব বেসরকারি শিক্ষায় ঘটবে। এমনও ঘটনা ঘটতে পারে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো শিক্ষককে উচ্চশিক্ষার অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দান করলেও উচ্চশিক্ষার ছাত্র-শিক্ষকেরা তাদের কর্মস্থলে প্রবেশ করতে দেবে না। ভেবে দেখুন, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কেউ তেজগাঁও কলেজ, শেখ বোরহানুদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ বা হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের মতো অনার্স-মাস্টার্স কলেজগুলোতে উচ্চ পদ দু’টিতে নিয়োগ পেয়ে কাজ করতে পারবে কি না। এসব প্রতিটি কলেজ শতকরা ৪০ শতাংশ শিক্ষক রয়েছেন, যারা অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদের জন্য যোগ্য।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জারি করা এই জনবল কাঠামোকে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে এ দেশের শিক্ষকেরা মনে করেন। তাই মনে শিক্ষকেরা আতঙ্কিত। কিন্তু সম্পূর্ণ পেশাদারি দৃষ্টিকোণ থেকে বিধানটিকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য এর কয়েকটি দিকের সংস্কার দাবি করছি :
প্রথমত : প্রভাষক হতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য ৫ ঃ ২ অনুপাত প্রথা বাতিল করে স্নাতক (পাস) কলেজে ১২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের সহকারী অধ্যাপক পদে এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রভাষকদের অভিজ্ঞাতা ১৫ বছর হলে একই পদে পদোন্নতি পাবে।
দ্বিতীয়ত : স্নাতক পাস/অনার্স/মাস্টার্স কলেজে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে বেতন কোড ০৫ অনুসারে আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা যথাক্রমে ১৫ ও ১৪ বছর হবে। ১৮ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের ক্ষেত্রে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা বা বিষয়ভিক্তিক পাঁচটি প্রবন্ধ বিশ^বিদ্যালয় জার্নাল বা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হবে; যা পদোন্নতির জন্য কলেজ পরিচালনা পর্ষদে উত্থাপন করতে হবে।
তৃতীয়ত : স্নাতক (পাস) কলেজে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে বেতন কোড ০৪ প্রদান করে আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি বা বিষয়ভিত্তিক কমপক্ষে একটি মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশিত হতে হবে; যা পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদে উত্থাপন করতে হবে। এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে ১৯ ও ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
চতুর্থত : স্নাতক পাস/অনার্স/মাস্টার্স কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য একই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
পঞ্চমত : স্নাতক পাস/অনার্স/মাস্টার্স কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য একই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক্ষ পদে ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ষষ্ঠত : উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদের জন্য স্নাতক (পাস) কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে অভিজ্ঞতা আর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সপ্তমত : উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের উপাধ্যক্ষ পদের জন্য স্নাতক (পাস) কলেজের প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে প্রভাষক হিসেবে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
অষ্টমত : স্নাতক (পাস) কলেজে উপাধ্যক্ষ পদের বেতন কোড ০৫ আর অধ্যক্ষ পদের বেতন কোড ০৪ যা বর্তমানে রয়েছে; এর নতুনভাবে সংস্কার করতে হবে।
নবমত : স্নাতক পাস/অনার্স/মার্স্টাস কলেজের শীর্ষ দু’টি পদÑ উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ পদের জন্য মাধ্যমিকপর্যায়ের কোনো শিক্ষক অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক/ উপাধ্যক্ষ/অধ্যক্ষ প্রাথমিক যোগ্যতার জন্যও বিবেচিত হবে না।
উচ্চশিক্ষার শিক্ষকেরা শুধু উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন পদে পদাসীন হবেন। উল্লেখ্য, বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় তাদের শিক্ষকেরা সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক পদে পদায়ন করছে। তারা সরকারের জন্য অপেক্ষা করে থাকেনি। আমার মনে হয়, শিক্ষকবৃন্দকে পদায়ন না করায় সরকারের ব্যর্থতা ও লজ্জার বিষয়। এভাবে কিছু সংস্কার করে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ সমৃদ্ধ করা যায়। এতে করে শিক্ষা ও শিক্ষকের মান বাড়বে এবং আমার সুনাগরিক সৃষ্টি করতে পারব।
লেখক : প্রেসিডিয়াম মেম্বার, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষা সমিতি


আরো সংবাদ



premium cement
এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য

সকল