২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইরান চুক্তি থেকে ট্রাম্পের পিছুটান : কী হতে যাচ্ছে?

-

সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে ইরাক ধ্বংসের পর একই রকম মিথ্যা অভিযোগ তুলে আরেকটি যুদ্ধের পাঁয়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এবারের টার্গেট ইরান। ইরান ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয়টি বিশ্বশক্তির সঙ্গে চুক্তি করার পরও ‘গোপনে পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে’Ñ এটাই হলো অভিযোগ। আর এই অভিযোগের একমাত্র ভিত্তি হলো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দেয়া তথ্য।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক সংবাদ সম্মেলনে নিজ দেশের গোয়েন্দাদের প্রাপ্ত বলে কথিত ‘তথ্যপ্রমাণ’ দিয়ে জানান, ইরান এখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এর পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কালবিলম্ব না করে ঘোষণা করে দিলেন, ইরান যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে তার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নেতানিয়াহুর ‘প্রমাণ’ হাজির করার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে গত ৮ মে ট্রাম্প, যিনি প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয়টা মিথ্যা কথা বলেন, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত ছয় জাতির পরমাণু সমঝোতা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার ঘোষণা দেন। অথচ পরমাণুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএইএ পুক্সক্ষানুপুক্সক্ষ তদন্ত ও সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে বারবার বলেছে, ইরান ওই চুক্তির কোনো বরখেলাপ করেনি, বরং পুরোপুরি মেনে চলেছে। চুক্তির শরিক যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই কথা বলেছে। এমনকি মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া একাধিক প্রতিবেদনে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং পরমাণুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাও একধিকবার জানিয়েছে, ইরান চুক্তির কোনো শর্তই লঙ্ঘন করেনি এবং এর প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত রয়েছে আজ অবধি।
ইরানও সব সময়ই বলে এসেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তির উদ্দেশ্যে। অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। আর ছয় জাতির চুক্তির পর বাস্তবে সেই সক্ষমতাও ইরানের নেই। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ একটি জঘন্য ভুল।’ চুক্তি থেকে বেরিয়ে না যাওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্ররা। এ জন্য জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন; কিন্তু ট্রাম্প কারো অনুরোধ-উপরোধে কান দেননি। তিনি চুক্তি থেকে সরে যাওয়া এবং ইরানের বিরুদ্ধে আবারো কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু কেন ট্রাম্পের এই চরম সিদ্ধান্ত?
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিতর্কিত ট্রাম্প তার ভোটারদের তুষ্ট করতেই এ কাজ করেছেন। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বারবার অঙ্গীকার করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবেন। ওই চুক্তির ‘গোড়ায় গলদ’ রয়েছে বলে ট্রাম্প মনে করেন। কারণ, চুক্তিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর যে শর্তারোপ করা হয়েছে, সেগুলো একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর শিথিল করা বা অবসানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তিটি ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি বড় ধরনের সাফল্য। প্রতিপক্ষ দলের ওবামার কোনো সাফল্য ট্রাম্প সহ্য করতে পারেন না। সে জন্যই তিনি এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলেন। এভাবে তিনি ওবামার যুগান্তকারী স্বাস্থ্যনীতি ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল করেছেন।
গত কয়েক দিনে এই ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা নানামুখী বিচার-বিবেচনা সামনে এনেছেন। কেউ বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হলো। কেউ বলছেন, ইরান এককভাবে পরমাণু কর্মসূচি নতুন করে শুরু করতে পারে। কারো বা ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখন একঘরে হয়ে পড়বে। কারণ চীন, রাশিয়া, ইউরোপ সঙ্গে না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বিশ্বে আর খবরদারি করতে পারবে না।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ পর্যন্ত বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে সরে আসার পর আমেরিকা এখন বিশ্বে একঘরে হওয়ার বিপদের মুখে রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাও বলেছেন, পরমাণু চুক্তি সম্পর্কে ট্রাম্পকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। মাত্র গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, সে দেশের ৫৬ শতাংশ মানুষই ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে। বিপক্ষে মাত্র ২৬ শতাংশ।
ইরানের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি গ্রহণ করেছে, তার সঙ্গে এ মুহূর্তে একমত নয় তার ইউরোপীয় মিত্ররা। তাই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, তার দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা মেনে চলবে। এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। ফোনালাপে এ দুই নেতাও পরমাণু সমঝোতার প্রতি অনুগত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এ দিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে টেলিফোন আলাপে মার্কেল বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করবে এবং তিনি আশা করছেন, তেহরানও নিজের কথা রাখবে। চীনের পররাষ্ট্র দফতরও একই ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু এর ফলে কি যুক্তরাষ্ট্র তার আসল লক্ষ্য থেকে বিরত হবে?
বিশ্লেষকেরা যা-ই বলুন না কেন, আমাদের ধারণাÑ যুক্তরাষ্ট্র তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে না। এর কারণ হলো, মধ্যপ্রাচ্যে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ। এ ক্ষেত্রে তার দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইল ও সৌদি আরব। দু’টি দেশই আঞ্চলিক রাজনীতিতে ইরানের প্রভাববলয় সম্প্রসারণের ভয়ে উদ্বিগ্ন ও ভীত। এই ভীতি তাদেরকে পরস্পরের কাছে নিয়ে এসেছে। ৭০ বছর ধরে ইহুদিবাদী যে রাষ্ট্রটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে, সাম্প্রতিক সময়ে সেই দেশটির সঙ্গে রাজনৈতিক গাঁটছড়া বেঁধেছে সৌদি আরব। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে সৌদি সরকার অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রটির অতীব ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে। তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্তে তারা সমর্থন দিয়েছে। ইসরাইলের বিমান চলাচলের জন্য সৌদি আকাশ সীমা খুলে দেয়া হয়েছে। এমনকি ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত অসঙ্গত ও অন্যায্য শান্তিপ্রক্রিয়া মেনে নেয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের ওপর জবরদস্তি করা হচ্ছে। অথচ ইসলামের পবিত্র স্থানগুলোর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পবিত্র নগরী আল-কুদস (জেরুসালেম) মুক্তি সংগ্রামের সবচেয়ে বড় সিপাহসালার হওয়ার দায়িত্ব সৌদি আরবেরই।
এরই মধ্যে ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইরানের বিরুদ্ধে একধরনের যুদ্ধ চলছে সৌদি আরব ও ইসরাইলের। সিরিয়া থেকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগে সিরিয়ায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সিরিয়াও পাল্টাব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তাতে ইরান সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে। আর সেটাই চাচ্ছে ইসরাইল। ইরানকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া এবং সেই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি জড়িয়ে ফেলাই এ মুহূর্তে ইসরাইল ও সৌদি আশু লক্ষ্য বলে প্রতীয়মান। তাহলে ইসরাইলের দু’টি লাভ। ইরানকে নিঃশেষ করতে পারলে তার অস্তিত্বের ওপর সর্বশেষ হুমকি দূর হবে। কারণ, ইরান নিষ্ক্রিয় হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার উদ্ভব হবে, তাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধাচরণের মতো শক্তি বা অবস্থান কোনোটাই ফিলিস্তিনিদের বা অন্য কোনো আরব দেশের থাকবে না। গত ৭০ বছরের দীর্ঘ কালপরিক্রমায় মিসর ও জর্দানসহ অনেক আরব দেশই ইসরাইলের সঙ্গে বৈরিতার নীতি থেকে সরে এসেছে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন কার্যত তুলে নিয়েছে। কারণ, তারা ইসরাইলের নামে প্রকৃতপক্ষে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না।
অন্য দিকে সৌদি আরবের লক্ষ্য হলোÑ মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাব টিকিয়ে রাখা। সে ক্ষেত্রে একমাত্র বাধা ইরান। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাহায্য নিয়ে দেশটি ইরানকে কোণঠাসা করতে উদ্যত হয়েছে। আঞ্চলিক নেতা হওয়ার লক্ষ্যেই দেশটি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে আসাকে সমর্থন দিয়েছে, যেমনটি দিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু সৌদি আরব আরেকটি কাজ করেছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ। সেটি হলো ওআইসিকে দিয়ে ট্রাম্পের পদক্ষেপের পক্ষে বিবৃতি দেয়া। সবাই জানে, সৌদি অনুমোদন ছাড়া ওআইসি বিবৃতি দিতে পারার কথা নয়।
এই প্রেক্ষাপট স্বাভাবিকভাবেই ইরানকে ক্ষুব্ধ করেছে। ইরান এটিকে ‘পক্ষপাতিত্বমূলক’ ও ‘অগঠনমূলক’ বলে অভিহিত করে ওআইসিকে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন ও অবৈধ দখলদার ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর অনুকূলে অবস্থান গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ওআইসি মহাসচিবের বিবৃতিকে ‘দায়িত্বহীন নির্বুদ্ধিতা’, আঞ্চলিক রাজনীতিতে ওআইসির নিরপেক্ষতার নীতির লঙ্ঘন এবং ওআইসির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন।
মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের নির্বুদ্ধিতা সারা বিশ্বের মুসলমানদের আরো বেশি দুর্ভোগ ও দুরবস্থার দিকে ঠেলে দেবে, তাতে সন্দেহ নেই।
ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নীতি আসলে একটি সুদূরপ্রসারী নীলনকশা মোতাবেক গৃহীত। ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের চিরন্তন ক্রুসেডের অংশ এটি, যা এ মুহূর্তে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ নামে। প্রথমে ইরাক ধ্বংস করা হয়েছে, এরপর সিরিয়া। এখন সামনে আছে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি স্বার্থের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, এমন কোনো মুসলিম শক্তিকে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না। সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রেও এটাই তাদের লক্ষ্য। যেখানেই কোনো মুসলিম দেশ মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, তাকেই সাইজ বা ম্যানেজ করা হবে। সে ক্ষেত্রে তারা কোনো আন্তর্জাতিক রীতিনীতি, আইনকানুন বা আচরণবিধি মানা হবে না। ফলে ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ছোট করে দেখার উপায় নেই।
ইসলাম ও মুসলিমদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রিত করতে বিশ্বব্যাপী একটি কার্যক্রম চলছে এবং মুসলিম দেশগুলোর অনেক নেতা বুঝে বা না বুঝে সেই কার্যক্রমে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছেন। কোনো দেশের সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডকেও এখন ‘সন্ত্রাস’ হিসেবে চিহ্নিত করে নির্মূল করা অনেক মুসলিম দেশেই খুব সহজ হয়ে উঠেছে।
আজকের ট্রাম্পের পদক্ষেপকে বর্তমান বিশ্বসভ্যতা তথা পাশ্চাত্য ও ইসলামের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে রেখেই বিবেচনা করতে হবে। এ দিকে, ইউরোপের দেশগুলো ইরান-চুক্তি বহাল রাখার কথা বললেও তাদের কথায় কতটা ভরসা রাখা যায়, সেটি প্রধান বিবেচ্য। তারা মার্কিন অবরোধের কারণে নিজেদের বিপুল আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিকে বড় করে দেখছে। কিন্তু পর্দার অন্তরালে কূটনীতির যে কলকাঠি নাড়ানো হবে, তাতে ইউরোপীয়রা শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে হাত মেলালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন নয়। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, ইউরোপীয়রা শেষ পর্যন্ত এই পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেবে বলেই তার বিশ্বাস। ইরানের প্রেসিডেন্টও এক ধরনের সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো এখন পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখতে কী ব্যবস্থা নেয়, তেহরান তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
কারো উসকানিতে ইরান প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কিংবা নতুন করে পরমাণু কর্মসূচি চালু করবে, এমনটি মনে হয় না।

 


আরো সংবাদ



premium cement