১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টেকসই ও বিশ্বমানের আধুনিক নগর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি তাবিথের

১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা  
১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা  তাবিথ আউয়ালের - ছবি-নয়া দিগন্ত

ঢাকাকে টেকসই ও বিশ্বমানের আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

তিনি তার নির্বাচনী অঙ্গীকারে দূষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন ঢাকা, মশক নিয়ন্ত্রণ, যানজট ব্যবস্থাপনা, সড়ক নিরাপত্তা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, নারী শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ঢাকা, নিরাপত্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ পানি, নিরাপদ খাদ্য ও ইন্টেলিজেন্ট সিটি গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছেন।

সোমবার সকালে গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন হলে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-২০৩০ এর আলোকে তৈরি নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরেন তাবিথ আউয়াল।

নগাবাসীর নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে তিনি ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম নেবেন। ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা ও লার্ভা নিধনে কার্যকর কীটনাশক প্রয়োগ, ‘মশা প্রতরোধী’ বৃক্ষ রোপন, নিয়মিত মশার প্রবলতা পরীক্ষা ও জলাশয় পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেবেন তিনি।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু অনেকটাই ম্যানেজেবল এখন। সেটা কিন্তু সিটি করপোরেশন স্ব উদ্যোগে করে নাই। তাদের অবহেলাতেই ডেঙ্গু রোগ বিস্তার পেয়েছে। মেয়র হলে আমি ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি শুরু করব। মেয়র নির্বাচিত হলে রাসায়নিক কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করার প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ।

ইশতেহারে দূষণমুক্ত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, ঢাকার উত্তরে তিনি যথাযথ সবুজায়ন করবেন। ‘ভার্টিকেল গার্ডেন’ প্রকল্প চালুর পাশাপাশি নগরবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে তার। পরিবেশবান্ধব দালানগুলোকে সনদ দেয়া হবে।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে নগরীর আবর্জনা অপসারণ, রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন ও পশু জবাইয়ের জন্য ‘আধুনিক স্টোর হাউজ’ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ‘টেকসই উন্নয়নের’ কথা রয়েছে তাবিথের ইশতেহারে। এ লক্ষ্যে গণপরিবহনমুখী যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে পুলিশ ও বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ঢাকার রুটগুলোকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ইলেকট্রিক ও হাইড্রোজেন চালিত বাস, রাত্রীকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ এবং নগর ঘিরে রাজউকের রিংরোড তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।

সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরে ‘কমন ইউটিলিটি বাইপাস ও টানেল’ নির্মাণ, ‘স্কাইওয়ার্ক’ প্রবর্তন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তাবিথ।

স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ‘রিমোট ও ভার্চুয়াল’ চিকিৎসা সেবা, ‘মোবাইল মেডিকেল ইউনিট’ স্থাপন, নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ‘বিশেষ নারী সেল’ গঠন এবং নারীদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর ইশতেহারে।

নগরে নিরাপদ ও সুপেয় পানির বন্দোবস্ত, প্রতিটি বাজারে ভেজাল খাবার পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, অপরাধ দমনে ইমারজেন্সি পোর্টাল স্থাপন ও ক্রাইম ম্যাপিং চালু করার কথাও বলেছেন তাবিথ আউয়াল। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা, শিশুপার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন এবং আবাসন খাতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে অনলাইন সার্ভিস চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন বিএনপির এই তরুন নেতা।

তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তাবিথ আউয়াল ঢাকা সিটিকে ‘ইন্টেলিজেন্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। ডেটা অ্যানালাইসিস ও ফেইস রিকগনিশন চালু করে অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চান তিনি। তাবিথ বলেন, আমি আপনাদের কাছে আমার স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথাগুলো বলবার আগে আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে আমাকে সহযোগিতা করুন, সমর্থন করুন, আমার পাশে দাঁড়ান। আমি আপনাদের সহানুভূতি চাই। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বিষয়ে আমি কখনো আপস করব না। আমি কথা দিচ্ছি, নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা আমি কখনো করব না। আমি কথা দিচ্ছি, পশ্চাদপদতা নয়, সবসময় আমার ভাবনা ও পরিকল্পনা থাকবে আধুনিক।

তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচিত হলে স্বল্প মেয়াদে প্রথম ৬০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্বরিৎ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচিত হলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে তাবিথ বলেন, আমিসহ সকল কাউন্সিলর এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগনদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। যাবতীয় সেবাপ্রাপ্তির জন্য এবং সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মহানগরী ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে হট-লাইন চালু করা হবে। সেবাপ্রাপ্তির চাহিদা/অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া যে কোনো নাগরিকের জন্য আমার দুয়ার এবং ব্যক্তিগত ফোন সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে।

ইশতেহারের শেষ দিকে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমি আজ এমন এক সময় আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি যখন বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিনা অপরাধে কেবলমাত্র অসৎ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন ষড়যন্ত্র করে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রায় দু'বছর ধরে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলায় নির্জন কারাগারে আটকে রেখেছে। জামিন তার হক। অথচ নিষ্ঠুর এই জালেম সরকার দারুনভাবে অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, লক্ষ লক্ষ বিএনপি নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। কিন্তু নির্বাচনই যেহেতু ক্ষমতা বদলের একমাত্র গণতান্ত্রিক পন্থা, তাই আমাদের দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, বেগম জিয়ার মুক্তি এবং সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার স্বার্থে আপনারা ধানের শীষ তথা বেগম জিয়ার পক্ষে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন।

তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক নগরীর সন্তান হিসেবে আমার নির্বচনী প্রতিশ্রুতি হচ্ছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে বিশ্বমানের বাসযোগ্য অত্যাধুনিক ঢাকা গড়ে তোলা। আপনাদের সহযোগিতা পেলে তা আরও বাস্তব, প্রায়োগিক ও নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ইশতেহার ঘোষণার সময় তার সঙ্গে মঞ্চে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইবরাহীম, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, জাতীয় পার্টির ( কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার ও ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement