১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

দেশে অপরাধীদের হাতেই ক্ষমতার রাজদণ্ড : রিজভী

-

দেশ সম্পূর্ণ উল্টো পথে চলছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশে যারা অপরাধী রাজদণ্ড আজ তাদের হাতে। আর নিরাপরাধ থাকেন কারাগারে। এখন দেশে চলছে ভানুমতির খেল। তারা এখন নানা তেলেসমাতি দেখানোর চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার।

আজ রোববার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, খোদ গণভবনই এখন দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণে। রাতের আঁধারে জনগণের ভোট ডাকাতি করে ভোটাধিকার হরণ কী বড় দুর্নীতি নয়? ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জনগণের ভোট ডাকাতি করে রাতের গর্ভে যে সরকারের জন্ম দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় দুর্নীতি, এত বড় কলঙ্ক, জনগণের ভোট নিয়ে এত বড় জুয়া খেলা অতীতে আর কখনোই ঘটেনি।

তিনি বলেন, নির্বাচনের নামে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে জনগণের ভোট কেটে নেয়া, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট ডাকাতিকেও হার মানিয়েছে। সেই ভোট ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণে এখন গণভবন। সেই গণভবনে বসে যখন বলা হয় ‘দুর্নীতিবাজরা গণভবনে আসতে পারবে না’ তখন এটা জনগণের কাছে পরিহাসের মতোই শোনায়। গণভবন যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে থাকে তাহলেই কেবলমাত্র দুর্নীতিবাজদের কবল থেকে গণভবন মুক্ত হবে এবং সারাদেশের দুর্নীতিবাজরা জবাবদিহিতার আওতায় আসবে।

রিজভী বলেন, সত্যকে কখনো ধামাচাপা দেয়া যায় না। সত্য কোনো না কোনোভাবে প্রকাশিত হয়ই। নিশিরাতের সরকারের সঙ্গী রাশেদ খান মেনন যে কোনো কারণেই হোক, এবার নিজের মুখে মহাসত্যটি স্বীকার করেছেন, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি’। তিনি বলেছেন- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ। উন্নতির প্রচারণার আড়ালে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। ক্যাসিনো অভিযানের নামে ছিঁচকে কিছু দুর্নীতিবাজ ধরা হলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ এদেরকে কবে ধরা হবে সে প্রশ্নও তুলেছেন জনাব মেনন।

‘অবশেষে সত্য কথাটা অকপটে জনগণের সামনে স্বীকার করতে হলো মেনন সাহেবকে। বিবেকের তাড়নায় মেনন সাহেব যে সত্যকথাগুলো বলতে শুরু করেছেন, হয়তো কয়েকদিন পর ওবায়দুল কাদের এবং হাসান মাহমুদরাও বলবেন। আর এ কথাগুলো যতোই তাদের নিকট থেকে বেরিয়ে আসবে ততোই বন্ধক রাখা আত্মা মুক্ত হবে’ বলেন রিজভী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যারা গণভবন দখলে রেখে এখন যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে চটুল কথাবার্তা বলছেন, নয় লাখ কোটি টাকা পাচারের দায়-দায়িত্ব তারা এড়াতে পারবেন না- যা মেনন সাহেব উল্লেখ করেছেন। খালেদ, শামীম কিংবা ক্যাসিনো সম্রাটদের কাঁধে টাকা পাচারের দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে গণভবন দখলকারীরা নিজেদের দায়মুক্তির যেই কূটকৌশল অবলম্বন করছেন, তাদের চালাকি জনগণের কাছে স্পষ্ট। দেশ থেকে নয় লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেলো, গণভবন দখলকারীরা জানেন না, এটা জনগণ বিশ্বাস করেনা। গত একদশকে লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে, এই লুটপাটের সাথে তারা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। এখন দুই একটা ইমিটেশন সম্রাটদের ধরে নয় লাখ কোটি টাকা পাচারের সম্পূর্ণ হিসেব তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার কূটকৌশল জনগণ ঠিকই বুঝতে পারে।

তিনি বলেন, জনমনে প্রশ্ন, এসব সম্রাটদের কারা তৈরী করেছিল? তারা তো একদিনে তৈরী হয়নি। যে সব রাজা-বাদশাহ-সম্রাজ্ঞীরা এসব ক্যাসিনো সম্রাটদের তৈরী করেছিল তারা এখন নিজেদের গা বাঁচানোর চেষ্টা করলেও জনগণ জানে, সরকারের উচ্চমহলের আনুকূল্য না পেলে রাষ্ট্রের এতো লাখ কোটি টাকা লোপাট সম্ভব নয়। ব্যাংকগুলোকে খালি করে দেয়া সম্ভব নয়। লাখো কোটি টাকা ঋণখেলাপি হওয়া সম্ভব নয়। উচ্চ পর্যায়ের আনুকূল্য না থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আট শ’ ১০ কোটি টাকা লোপাট হওয়ার পরও জনগণকে ২৪ দিন পর্যন্ত জানতে না দেয়ার ধৃষ্টতা সম্ভব ছিল না।

রিজভী আরো বলেন, এখন বিপদ টের পেয়ে দুই একটা সম্রাট ধরে নিজেদের দুর্নীতির কালিমালিপ্ত চেহারা ঢাকা সম্ভব নয়। কারণ, শীর্ষ নেতাদের আনুকূল্য থাকার কারণেই রাজধানীতে ৬০টি অবৈধ ক্যাসিনো তৈরী হতে পেরেছিল, খালেদ-শামীম-সম্রাট তৈরী হয়েছিল। দেশের আনাচে-কানাচে আরো যে কত খালেদ-শামীম-সম্রাট রয়েছে সেগুলো কিন্তু অধরায় থেকে গেল। উচ্চ পর্যায়ের আনুকূল্য থাকার কারণেই এসব ক্যাসিনো হোতাদের জন্ম হয়েছে। এদের মধ্য থেকেই অনেকেই এমপিসহ সরকারের পদও বাগিয়ে নিয়েছে। এটা প্রমাণিত গত একদশকে গণভবনের উৎসাহ ও প্রণোদনায় চলেছে ‘শিষ্টের দমন দুষ্টের লালন’। সুতরাং বর্তমানে আসল সমস্যা গণভবনে। এখন দেশকে বাঁচাতে হলে, জনগণকে বাঁচাতে হলে দেশে দুর্নীতিবাজদের লালনকারী নেপথ্য রাজা-বাদশাহ-আমীর-ওমরাদের পতন ঘটাতে হবে। গণভবনকে দুর্নীতিবাজদের দখলমুক্ত করে জনগণের গণভবন জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া এখন সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও দেশের পক্ষে কথা বলার কারণেই আজ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। শেখ হাসিনার পলিটিক্যাল মনোপলি নীতির কারণেই নিহত সংবিধান, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নির্বাচন।

রিজভী বলেন, দুর্নীতিবাজ সরকারের বিশ্বস্ত রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী তা আমাদের জানা নেই। তবে জাতির সামনে রাজসাক্ষী হয়ে রাতের ভোটের ভোট ডাকাতির স্বীকারোক্তি প্রদানের মাধ্যমে নিজের দায় ও অপরাধ তিনি স্বীকার করে নিলেন। এই বক্তব্যের পর নৈতিকতা ও বাস্তবতার দিক দিয়ে সরকারের উচিত সংসদ ভেঙে দেয়া। সংসদে বহাল থাকার নৈতিক অধিকার তাদের নেই। যেহেতু তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন। বর্তমান সরকারেরও যদি বিন্দুমাত্র লজ্জা থাকে তাহলে আজকেই তাদের পদত্যাগ করে সরে যাওয়া উচিত। তারা যে অবৈধ সরকার তাদের সাথের লোকেরাই তা আজ স্বীকার করেছেন। দেশের জনগণ জীবনের ভয়ে কথা বলতে পারছে না, এটাও তারা সাক্ষ্য দিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, গত একদশকে দেশে দুর্নীতি-অনাচার-দুর্বৃত্তায়ন এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, চরিত্রহীন সুবিধাবাদী মানুষেরা আওয়ামী লীগকে মনে করছে টাকা বানানোর হাতিয়ার। এই আওয়ামী জাহেলিয়াতের আমলে অবস্থা এতটাই বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছে, এ দেশে এখন একজন ভিসি তার পদের চেয়ে যুবলীগের নেতা হওয়াকে বেশি গৌরবজনক মনে করেন। গণভবনের আনুকূল্য একজন ভিসিকে কতটা রুচিহীন, অমার্জিত ও অসংস্কৃত করে তুলতে পারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মীজানুর রহমান তার উদাহরণ। এই উন্মাদ একনায়কতন্ত্রের যুগে আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও চিন্তা-চেতনায় যে পচন ধরেছে, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির আকাঙ্ক্ষা তারই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদ ভিসির মতো মহিমামন্বিত পদকে কলুষিত করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মীজানুর রহমান। জুয়া-ক্যাসিনো ও অবৈধ টাকা মিশ্রিত একটি প্রতিষ্ঠানের নাম হয়ে পড়েছে যুবলীগ। স্বাধীনতাত্তোর জেলা শহরগুলোতে যুবলীগের নেতারা ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। একদা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাইস চ্যান্সেলররা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বা দেশের রাষ্ট্রপতি হবার স্বপ্ন দেখতেন। আর এখন তারা যুবলীগের সভাপতি হবার স্বপ্ন দেখেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ পেয়েও মিজানুর রহমান এখনো যুবলীগ তথা ক্যাসিনো লীগের প্রেসিডিয়ামের ১ নম্বর সদস্য হিসাবে আছেন! কতটা নির্লজ্জ, নির্বোধ ও দলকানা হলে ভিসির মতো পদ ছেড়ে তিনি যুবলীগের সভাপতি হতে চান!’

রিজভী জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য ও বানোয়াট তথ্য পোস্ট করছে, যা খুবই দুঃখজনক। এধরণের তথ্য মন্তব্যের সাথে জনাব তারেক রহমানের আদৌ কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি এধরণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মহলকে এই অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।


আরো সংবাদ



premium cement