১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেসব লীগের নামের সাথে কাজের মিল নেই

- ছবি : সংগৃহীত

যুবলীগ নেতারা জড়িয়েছেন ক্যাসিনো ব্যবসায়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টেন্ডার-চাঁদাবাজিতে আর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা করেন সিন্ডিকেটেড ব্যবসা। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো মূল কাজ থেকে এখন অনেক দূরে।

চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে শোভন ও রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয় গত মাসে। সংগঠন চলছে এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে। আর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এখন নিষ্ক্রিয়। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন। গা ঢাকা দিয়েছেন আরো অনেক নেতা। তাই এইসব সংগঠনে দ্রুত কাউন্সিল করে নেতৃত্বের বদল ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। শীর্ষ পর্যায় থেকে চাপ আছে বিতর্কিত নেতৃত্ব বাদ দেয়ার।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারের নামও আছে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে। আছে কৃষকলীগ নেতার নাম। আর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ সংসদ সদস্য হলেও তার মূল জায়গা পরিবহন ব্যবসা।

আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। তার আগেই প্রায় সব সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের কাউন্সিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল ও নতুন কমিটি গঠনও করতে চায় দলটি। এজন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে ২৩ ও ২৪ অক্টোবর।

জানা গেছে, ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং যুবলীগকে ২৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর ছাত্রলীগের মেয়াদ আছে আগামী মে মাস পর্যন্ত। তারপর কাউন্সিল হবে।

সহযোগী সংগঠনগুলোর এই দুরবস্থা নিয়ে দলে ব্যাপক সমালোচনা আছে। তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘‘সেচ্ছাসেবক লীগের কাজ কী? সাধারণ মানুষের পাশে থাকা, দলের উন্নয়নে কাজ করা। কিন্তু নেতারা কাজ করছেন নিজের উন্নয়নের জন্য। যুবলীগের কাজ কী? যুব সমাজের উন্নয়নে কাজ করা। কিন্তু দেশে এত বেকার তাহলে যুবলীগ কী করে? তারা নিজেদের অর্থ বিত্ত বাড়াতে ব্যস্ত। নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেরও একই অবস্থা। কোনোটাই আর সংগঠনের মূল কাজে নেই। সবাই ব্যস্ত নিজেদের স্বার্থে। ফলে মূল রাজনীতিই সংকটে পড়েছে। আওয়ামী লীগেও এখন বহিরাগতদের ভীড়।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এটা উপলব্ধি করেছেন। তাই তিনি একদিকে যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। তেমনি দলকেও পরিশুদ্ধ করার কাজে নেমেছেন। আমরা আশা করি যোগ্য, দলের প্রতি অনুগত এবং সৎ নেতা-কর্মীরা এবার মূল এবং বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে আসবেন।’’

এখন সবার উপরে আলোচনায় রয়েছে যুবলীগের কাউন্সিল। যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ক্যাসিনো বিতর্কে জড়িয়ে এখন আর যুবলীগ অফিসেই যান না। এমনকি তাকে ছাড়াই মিটিং করে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই আমাদের কাউন্সিল হবে। তিনি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রাখছেন না। কাউন্সিলের আগে ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুবলীগ নিয়ে বৈঠক আছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকেও তিনি আমন্ত্রিত নন। তিনি শেষ পর্যন্ত যুবলীগের নেতৃত্বে থাকছেন কিনা তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে।’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন সংগঠনের আদর্শিক নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো বিতর্কিত লোক যুবলীগে ঠাঁই পাবে না। যুবলীগে বিতর্কিতদের নেতা নির্বাচন করা হয় না। যুবলীগে এসে ব্যক্তিগত লোভ লালসার কারণে কেউ কেউ বিতর্কিত হয়।’’

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিলের টার্গেট কী? নেতৃত্বে কি গুণগত পরিবর্তন আসছে? এই প্রশ্নের জবাবে নৌপ্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘এটা নেতৃত্বে গুণগত পরিবর্তনের বিষয় নয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুণী নেতৃবৃন্দই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেই বাংলাদেশের উন্নতি অগ্রগতি হচ্ছে, জনসমর্থন আছে। আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আছে।

তিনি বলেন, কিন্তু এখানে ক্ষমতার আড়ালে বিভিন্ন পর্যায়ে অনৈতিক কিছু ঘটনা ঘটছে যেগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করছি, যেহেতু আমরা একটা উন্নত দেশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। দেশে আইনের শাসন যেহেতু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই আইনের আওতার বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড থাকবে না। সবকিছু আইনের আওতায় আনা হবে। আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড চলতে পারবে না।’’ ডয়েচে ভেলে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল