২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ছাত্রলীগের কক্ষে বই খাতার পরিবর্তে থাকে মদের বোতল : রিজভী

- সংগৃহীত

ছাত্রলীগকে হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেষ্টরুম, গণরুম, পলিটিকাল রুম নামক টর্চার সেলগুলোতে ছাত্রলীগ গেষ্টাপো বাহিনীর কায়দায় নির্যাতন করে ছাত্রদের। এই ছাত্রলীগের রুমে এখন বইপত্র খাতা কলম থাকে না, থাকে মদের বোতল, রাম দা-চাপাতি-লাঠিসোটা-অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এখন সেই তারাই আবার তাদের নেতাকর্মীদের হাতে খুন হওয়া আরেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জন্য শোকর‌্যালি করে! এ দ্বিচারিতা কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব। শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বুধবার প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দায় এড়ানোর জন্য বললেন, 'ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নয়'। তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে হয়তো তাই লেখা রয়েছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। বিপদে পড়লেই জনগণকে ধোকা দিতে 'ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নয়' এই কথা বললেও দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হয় প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ভবন-গণভবনে বসে। আবার গণভবনে বসেই ছাত্রলীগের কোনো কোনো নেতার নেতৃত্ব কেড়ে নেয়া হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় কিংবা কোমলমতি ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সারাদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের বর্রব নিষ্ঠুরতা নির্মমতা দেশের জনগণ ভুলেনি। এরপরও ছাত্রলীগের চরিত্র একটুও পাল্টায়নি।

তিনি বলেন, সরকারের ছত্রচ্ছায়ায়, পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রলীগ এখন নৃশংস হানাদার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে আবরার ফাহাদের নির্মম মৃত্যু প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আঁকড়ে রেখে খুন, দুর্নীতি, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, লুটপাট টাকা পাচার কিংবা ব্যাংকগুলোকেই খালি করেনি, রাষ্ট্র সমাজ থেকে কেড়ে নিয়েছে মানবিকতা, ভব্যতা, সভ্যতা, সহমর্মিতা ও সামাজিক মূল্যবোধ। বুয়েটের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসীম সম্ভাবনাময় জীবনের একজন শিক্ষার্থীকে ঠান্ডা মাথায় পিটিয়ে হত্যা করার এই বর্বরোচিত দীক্ষা ছাত্রলীগ কোথায় পেলো? ক্ষমতালিপ্সার কারণে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত করা হয়েছে। এখন ছাত্রলীগকে তৈরী করা হয়েছে বধ্যভূমির ঘাতক হিসেবে।

রিজভী বলেন, ক্ষমতালিপ্সার কারণে এই সংগঠনটি এখন এতটাই অভিশপ্ত সংগঠনে পরিণত হয়েছে যে, বুয়েটের মতো মেধাবীদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েও শুধু ছাত্রলীগের কারণে মেধাবীরা পরিণত হচ্ছে খুনিতে। এরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর হল ও হোষ্টেলগুলোতে বুক সেলফের পরিবর্তে টর্চার সেল গড়ে তুলেছে। দেশের প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ আজ স্ফুলিঙ্গের মতো জেগে উঠেছে। দেশের মানুষকে গুম-খুন-অপহরণ করে আর দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে গত এক দশক ধরে যেভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে, এটি জনগণ আর চলতে দেবে না। দেশের ছাত্র সমাজ এসব অনাচার আর মেনে নেবে না।

তিনি বলেন, সরকারের পতন ঘণ্টা বেজে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের স্লোগানের ভাষা শুনুন। ক্ষমতাসীনদের জুলুম এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষের রক্তে আগুনজ্বলা দ্রোহ দেখুন। জনগণের আওয়াজ শুনুন। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আওয়াজ উঠেছে, আধিপত্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে। আধিপত্যবাদী-সম্প্রসারণবাদী অপশক্তির এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে। কোন আন্দোলন যেমন ব্যর্থ হয় না তেমনি দেশবিরোধী চুক্তি ও শহীদ আবরারের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনও ব্যর্থ হবে না ইনশা-আল্লাহ।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, বারবার ভারতে সফরে গিয়ে অসংখ্য দেশবিরোধী চুক্তি করা হচ্ছে। জনগণ জানতেও পারছে না কি চুক্তি হচ্ছে, কেন হচ্ছে এইসব চুক্তি? এইসব চুক্তিতে কার স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে? বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীর মতো, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে দেশের মানুষ এতই লজ্জা পেয়েছে যে, তারা এই কথায় হাসতেও ভুলে গেছে। আমরা মনে করি, পারস্পরিক স্বার্থ ও সমমর্যাদা রক্ষার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের। স্বামী-স্ত্রীর নয়। এখানেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির মৌলিক বিরোধ।

তাই জনগণের দল হিসেবে বিএনপির স্পষ্ট দাবি, ভারতের সাথে গত এক দশকে কি কি চুক্তি হয়েছে, কত চুক্তি হয়েছে, প্রতিটি চুক্তি সম্পর্কে জনগণকে বিস্তারিত জানাতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা আওয়ামী সরকারের পাশাপাশি তাদের প্রভুরাও জড়িত বলে জনগণ মনে করে।

রিজভী আরো বলেন, অন্যায় চুক্তির প্রতিবাদ করার অপরাধে শুধু আবরারকে একাই পিটিয়ে মারা হয়নি। আগ্রাসনের বিরোধিতা ও বাক স্বাধীনতাকেও পিটিয়ে মারা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা তাদের মসনদ রক্ষার জন্য প্রতিবেশী দেশের দাসত্ব ও অন্ধ দালালীকে তাদের চেতনা হিসাবে গ্রহণ করেছে। ফলে দেখা যাচ্ছে এই স্বাধীন দেশে ভিসিরা ‘জয়হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে পাচ্ছে পুরস্কার, আর আওয়ামী লীগের নেতারা পর্যন্ত অন্যায় চুক্তির বিরুদ্ধে কথা বললে দল থেকে বহিষ্কার হচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের চালু করা পেইজটি ব্লক করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি।

তিনি আরো বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ লোক দেখানো একটি শোকর‌্যালী করেছে। এই র‌্যালীটিতেও তারা চরম অমানবিক আচরণ প্রদর্শন করেছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীবাহী কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখেছিল। রোগীর স্বজনরা কাকুতি-মিনতি করলেও হাসপাতালের দিকে যেতে দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, চমেকের ৫১তম ব্যাচের ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) ৩য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র, ছাত্রদল নেতা আবিদুর রহমান এবং সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কলেজ শাখার নেতা তাওহীদুল ইসলামকে বুয়েটের শহীদ আবরার ফাহাদের মতোই ছাত্রাবাসে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি। চমেক ছাত্রাবাসে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর আবিদুর রহমান আবিদকে ছাত্রদল করার কারণে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা ছাত্রলীগ। তবে আলোচিত এ খুনের মামলার কোনো আসামির সাজা হয়নি। গত ১০ জুলাই আবিদ হত্যা মামলার রায়ে ১২ জন আসামি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। আওয়ামী বিচারে ছাত্রলীগ-যুবলীগের খুন-জখম-ক্যাসিনো জুয়ার মতো অপরাধগুলোর বিচার হয় না।

রিজভী বলেন, এই মিথ্যাবাদী সরকারের আশ্বাস বিশ্বাস করলে শহীদ আবরারের হত্যাকারীদের বিচার হবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আন্দোলন কেনো? আমি একজন মা হিসাবে আবরার হত্যার বিচারের দায়িত্ব নিয়েছি।’ কিন্তু উনি যদি আবরারের মা হন তাহলে তিনি প্রথমেই দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করবেন এবং আবরারের হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিবেন। আর ছাত্রলীগকে হত্যা ও ঘাতকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাদের অমানুষ না বানিয়ে হাতে বই-খাতা তুলে দেবেন।’

সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ফুঁসে ওঠা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের আন্দোলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি এখন ব্যর্থ দলদাস মেরুদন্ডহীন ভিসির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে হয়-এই হত্যাকাণ্ডে তাদের কোনো দায় নেই।

আবরার হত্যার ঘটনার প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ভিসি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আসেন। কিন্তু আওয়ামী পুতুল ভিসির পক্ষে অবস্থান নিয়ে এর আগে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন- ভিসি অসুস্থ, তাই আবরারের লাশ দেখতে আসতে পারেননি। অথচ ভিসি বলেছেন, তিনি সুস্থ ছিলেন। তাহলে কে মিথ্যাবাদী সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নাকি ভাইস চ্যান্সেলর? আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীদের প্রধান যোগ্যতা তারা মিথ্যায় পারদর্শী। সত্যকে সহ্য করতে পারেন না।


আরো সংবাদ



premium cement