২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আবরার হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল জবি, মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা

সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রঙ্গভূমি নামে একটি সংগঠন ক্যাম্পাসে পথনাট্য প্রদর্শন করেছে। এদিকে, ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আজ বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা আজকে শুধু আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে আসিনি। গত ১৯ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে আমরা কোনোটিরই পূর্ণাঙ্গ বিচার পাইনি। প্রতিবারই আমরা রাস্তায় নেমেছি কিন্তু তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে গেছে। সরকার সবসময় সন্ত্রাসীদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডেও আমরা তাই দেখেছি। এই দেশ, এই সংবিধান আমাকে কথা বলার অধিকার দিয়েছে। যারা আমাদের এই অধিকার কেড়ে নিতে চায় তাদের রুখে দিতে হবে।

১৯৫২ সালে আমরা ভাষার জন্য আন্দোলন করেছি, ২০১৯ সালে এসে আজকে আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমরা দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বলে দিতে চাই, আমাদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে চাওয়ার পরিণাম ঠিক হবে না।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে জবি ক্যাম্পাস ও আশপাশের রাস্তাঘাট। তাদের স্লোগানের মধ্যে ছিলো- ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হলে হলে সন্ত্রাস, রুখে দাঁড়াও ছাত্র সমাজ’, ‘দিয়েছি রক্ত, আরও দেবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘শিক্ষা-সন্ত্রাস, একসাথে চলবে না’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে’ এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় নটরডেমিয়ান সোসাইটি অব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে। এসময় তারা সাবেক নটরডেম শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন। এসময় মানববন্ধনে আবরার হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগানের প্লে-কার্ড হাতে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।

বেলা ১২টায় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. নুর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিসি ড. মীজানুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যদি কোনো শিক্ষার্থী অপর শিক্ষার্থীকে থাপ্পড়ও দেয়, অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আজকের ঘটনা নিয়েও যদি কেউ অভিযোগ দেয়, তদন্ত সাপেক্ষে আমরা এর বিচার করব। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ক্ষমতা প্রদর্শনের জায়গা নয়।

এর আগে সকাল ৯টায় বিক্ষোভ মিছিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলের শেষে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিছন থেকে ধাওয়া করলে ছাত্রদল কর্মীরা পালিয়ে যায়। এসময় পাঁচজন আহত হন।

এবিষয়ে জবি ছাত্রদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা ক্যাম্পাসে নিয়মিত আসবো। এতে কেউ বাধা দিলে এর জবাব ক্যাম্পাসেই দেয়া হবে।

এবিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মারামারি হচ্ছিলো, আমরা গিয়ে দুইজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তাদের আটক করা হয়নি তারা আমাদের হেফাজতে রয়েছে। আমরা যাচাই-বাচাই করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নিব।

এরপর বেলা ১টায় আবরার হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও পথনাট্য ‘অবয়ব’ প্রদর্শন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রঙ্গভূমি।


আরো সংবাদ



premium cement