১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাপায় ফের দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্ব

- ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টি আর গৃহবিবাদ দলটির জন্য যেন সমার্থক শব্দ হয়ে দাড়িয়েছে। ৯০’এর গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীণ সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে দ্বন্ধ-গৃহবিবাদ যেন দলটির পিছু ছাড়ছে না। দফায় দফায় ভাঙ্গনে জর্জরিত দলটির নেতৃত্বের কোন্দল যেন লেগেই আছে। এই দ্বন্ধ-গৃহবিবাদের সর্বশেষ সংস্করণ পার্টির সদ্যঘোষিত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে অস্বীকার করে সোমবার গভীররাতে প্রয়াত এরশাদপত্মী রওশন এরশাদের বিবৃতি। শনিবার তার গুলশানের বাসায় জিএম কাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তিনি দেবর জিএম কাদেরকে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়াও করে দেন। কিন্তু ৪৮ ঘন্টা না পেরুতেই সোমবার গভীর রাতে জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান নন বলে গণমাধ্যমে ওই বিবৃতিটি পাঠান।

এদিকে জাতীয় পার্টির সদ্যপ্রয়াত চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে ছাড়ছে না গৃহবিবাদ। তার জীবদ্দশাই পাঁচবার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে দলটি। তারপরও এরশাদের কৌশলী খেলায় রাজনীতির ময়দানে তার নেতৃত্বাধীন জাপাই ছিল মূল দল হিসাবে। এরশাদের মৃত্যুর পর পৃথক স্থানে অনুষ্ঠিত চারটি জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি পার্টির নেতাকর্মীদের দারুণভাবে চাঙ্গা করে তোলে। এতে দল আরো শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন জাপা নেতারা। এই অবস্থায় জাপার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের যৌথভাবে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলে আগামীতে তিনশ’ আসনে প্রার্থী দিয়ে সরকার গঠন করে এরশাদের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এরশাদ তার মৃত্যুর আগে গত ৪ মে জিএম কাদেরকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন এবং তার অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে একটি সাংগঠনিক নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন। তখন থেকেই জাপায় রওশন এরশাদ অনুসারী বলে পরিচিত কয়েকজন সিনিয়র নেতা তা মেনে নিতে পারেননি। এরশাদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর পর কয়েকদিন এ বিষয়ে কোন আলোচনা না হলেও তার কুলখানির পর বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। যদিও এরশাদের মত্যুর পরদিন থেকেই জাপার সিংহভাগ নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবেই মেনে নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ জুলাই জাপার বনানী কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা হঠাৎ করে জিএম কাদেরকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে অসন্তুষ্ট হন রওশনপন্থী সিনিয়র নেতারা। এমন অবস্থায় শনিবার ভাবি রওশন এরশাদের মান ভাঙ্গাতে তার গুলশানের বাসভবনে যান জিএম কাদের। এসময় দেবরকে দোয়াও করে দেন রওশন এরশাদ। কিন্তু ৪৮ ঘন্টা না পেরুতেই সোমবার গভীর রাতে জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান নন বলে একটি বিবৃতি পাঠান। যদিও বিবৃতির নিচে রওশন এরশাদ ও যেসব নেতাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের স্বাক্ষর নেই। দেবর-ভাবির এমন টানপোড়নে অস্থিরতা বিরাজ করছে দলটিতে।

পার্টির চেয়ারম্যান, বিরোধীদলের নেতা ও রংপুর-৩ আসন থেকে দল থেকে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তেই আসতে পারছে না দলটির শীর্ষনেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, পার্টি চলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। দলের চেয়ারম্যান জীবিত অবস্থায় তার অবর্তমানে দল পরিচালনা করার জন্য গঠনতন্ত্রের ২০/১-ক ধারা মোতাবেক তার অনুজ জিএম কাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন এবং বলেছেন তার অবর্তমানে জিএম কাদেরই হবেন পার্টির চেয়ারম্যান। একই গঠনতন্ত্রে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলের উপনেতা বানানো হয়েছে। উনি এখন বিরোধীদলের নেতা হবেন এটাই স্বাভাবিক। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। পার্টির সবাইকে বলবো আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এরশাদের দলকে শক্তিশালী করে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাই।

পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, প্রয়াত পল্লীবন্ধু এরশাদের ইচ্ছা ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান, রওশন এরশাদ বিরোধীদলের নেতা। তাদের যৌথ নেতৃত্বেই পার্টি পরিচালিত হবে। এর বাইরে গিয়ে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য পার্টির দু’একজন নেতা চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করছেন। অথচ পার্টির তৃণমূলের কাছে তাদের নুন্যতম গ্রহণযোগ্যতাও নেই।

প্রেসিডিয়াম আরেক সদস্য প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, হঠাৎ করে এভাবে ঘোষণা না করে যদি আনুষ্ঠানিকভাবে সবাই জিএম কাদেরকে আমরা চেয়ারম্যান ঘোষণা করতে পারতাম তাহলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতোনা, আমরাও সম্মানিত হতাম।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, স্যার (এরশাদ) যে সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন তার কোনো বিকল্প নেই। জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান এ নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই এবং বিকল্পও নেই। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে ভালো হতো। অতি উৎসাহীদের জন্য দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাপা যুগ্ম-মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, যখন বিএনপি থেকে নেতাকর্মীরা জাপায় আসতে শুর করেছে, ঠিক সেই সময়ে দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপির এজেন্টরা দলের বিবেদ সৃষ্টি করে পার্টির ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করছেন। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল হবে না।

রওশনের বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী বিবৃতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিনি। পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জিএম কাদেরই পার্টির চেয়ারম্যান।

সার্বিক বিষয়ে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, রওশন এরশাদ আমার মাতৃসম্যতুল্য। উনি আমার অভিভাবক। তার পরামর্শক্রমেই দল পরিচালিত হবে। রওশন এরশাদের বিবৃতিতে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি এমন বিবৃতি দিতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস হয় না। দুইদিন আগেও ভাবির বাসায় গিয়েছি। আবারও যাবো। আমি আবারও বলছি আমাদের মাঝে কোনো বিবোধ নেই।

জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান মানেন না রওশন

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরকে অস্বীকার করে সোমবার গভীররাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে হাতে লেখা এক বিবৃতিতে রওশন এরশাদ দাবি করেছেন, যথাযথ কোনও ফোরামে আলোচনা না করেই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ওই বিবতিতে তিনি পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। রওশনের এ বিবৃতিকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সাত জন সংসদ সদস্য।

বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করে রওশন এরশাদ এরশাদ বলেন, আমি এই বিবৃতি দিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে করার কারণে বিবৃতিটি হাতে লেখা হয়েছে।

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৪ জুলাই মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর আগে গত জুনে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে দায়িত্বভার অর্পণ করেন তিনি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক মেনে নিলেও এরশাদের মৃত্যুর চার দিনের মাথায় গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে পরিচয় করিয়ে দেন। আর এর পাঁচ দিন পরেই তাকে চেয়ারম্যান পদে মানতে আপত্তি জানালেন রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা।

সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে হাতে লেখা এই বিবৃতিতে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ লিখেছেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মারফত আমরা জানতে পেরেছি জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা আদৌ কোনও যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র ধারা ২০ (২) এর খ-এ দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। যথা−মনোনীত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়ামের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন। চেয়ারম্যানের অবর্তমানে ধারা ২০ (২) এর ‘ক’ কে উপেক্ষা করা যাবে না। আশা করি বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি পার্র্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। বিবৃতিতে দলের সব নেতাকর্মীকে গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

রওশনের এই বিবৃতিতে সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে রয়েছেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, ফখরুল ইমাম এমপি, সেলিম ওসমান এমপি, অধ্যাপিক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী এমপি, নাসরিন জাহান রত্মা এমপি ও মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এর বাইরে লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি ও রওশন আরা মান্নান এমপি।

এদিকে রওশনের এই বিবৃতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে বিভক্তির বিষয়টি আবারও সামনে চলে এসেছে। এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে দলের নেতৃত্ব এবং ক্ষমতা নিয়ে যে বিবাদের সৃষ্টি হতে পারে তা রাজনৈতিক মহলে অনুমিতই ছিল। বিশেষ করে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার আসন নিয়ে উভয়ের মধ্যে দ্বন্ধের বিষয়টি এমন আভাস আগেই দিয়েছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের আসনে গিয়ে গত জানুয়ারিতে জিএম কাদেরকে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ঘোষণা করলেও সে সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারেননি পার্টিও প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংসদের প্রথম অধিবেশনের পরেই তাকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করতে বাধ্য হন তিনি।

এরও আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে রওশন ও জিএম কাদেরের পারস্পরিক মত পার্থক্য ভীষণ দোটানায় ফেলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে তাদের সঙ্গে জোট গড়ার লবি করেন রওশন এরশাদ। এরশাদ তার চাপে মহাজোটে থাকার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মন্ত্রী থাকার পরেও বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় জাতীয় পার্টিকেও নির্বাচনের বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান জিএম কাদের ও তার অনুসারীরা। ফলে দোটানায় পড়ে এরশাদ একবার নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন, আবার পর মুহূর্তে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক তামাশার সৃষ্টি করেন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি থাকতে হয় তাকে। নির্বাচনে না গিয়ে টানা পাঁচ বছর সংসদের বাইরে ছিলেন জিএম কাদের। এদিকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন রওশন এরশাদ। আর হাসপাতালের শয্যায় থেকেও নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ছিলেন এরশাদ।


আরো সংবাদ



premium cement