২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
বন্যার্তদের জন্য বিএনপির ত্রাণ টিম গঠন

সরকারের ‘টপ টু বটম’ ঘুষ-দুর্নীতিতে ব্যস্ত : রিজভী

বিএনপি
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী - ছবি : নয়া দিগন্ত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চারদিকে চলছে দুর্নীতির উৎসবের আতশবাজী। সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে দেশ। আইনের শাসন ও সুশাসন এখন ইতিহাসের পান্ডুলিপিতে অবস্থান করছে।

তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব বন্যাকবলিত মানুষকে রক্ষা করা। যেটা সরকার করছে না। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এই লক্ষ্যে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

আজ রোববার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, বাংলাদেশে ভোটারবিহীন অন্ধকারে নির্বাচিত সরকার দুর্নীতিকে পুরোমাত্রায় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে ফেলেছে। সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে সরকারের ‘টপ টু বটম’ ব্যস্ত লুটপাট-ঘুষ-দুর্নীতিতে। দুর্নীতির বিরূপ প্রভাবে অগ্রগতি থমকে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আপাতভাবে আইনের শাসনের অভাব, সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অভাব এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে দুর্নীতি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। নির্বিঘ্নে নিরাপদে প্রশাসনের সহায়তায় রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের কন্ঠস্বর, গণমানুষের প্রাণপ্রিয় আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশী মিথ্যা প্রতিহিংসার মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে দেড় বছর। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর জিঘাংসার শিকার বেগম খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনাই জামিনে বাধা দিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়ার। তাকে বন্দী রেখে লুন্ঠন-দুঃশাসনে দেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে জনধিকৃত সরকার।

তিনি বলেন, দেশে যখন দুর্নীতির মহামারি চলছে তখন সরকারের রাঘব-বোয়ালদের দুর্নীতির ‘ইনডেমনিটি প্রতিষ্ঠান’ দুর্নীতি দমন কমিশন ও এর চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি করতে উৎসাহ দিয়ে বলছেন- ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে অপরাধ হবে না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনো অপরাধ নয়।’ এরআগে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খেতে বলেছিলেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে তিনি কি নৈতিক বার্তা দিয়েছিলেন, সেই উত্তর তো এখনো পাওয়া যায়নি। যখন দেশে প্রশাসনিক স্তরে অতি উচ্চ মাত্রার দুর্নীতির সংস্কৃতি বিরাজমান, এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল যেতেও টেবিলের নিচে আর্থিক লেনদেন করতে হয়, তখন মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের কাছে এই ‘উৎসাহ বার্তা’ দেয়া হচ্ছে যে, সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে কিছু হবে না। ফলে টেবিলের ওপর দিয়েই এখন ঘুষের লেনদেন চলবে। তাতে কোনো অসুবিধা নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিজেই যদি ‘সরল দুর্নীতির’ অভিনব বাণী জনগণকে শোনান, তাহলে দুর্নীতির জোয়ারে দেশ তো ভেসে যাবেই। এখন থেকে ‘সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’র সাফল্যের মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকবে সরকারী কর্মকর্তারা। পক্ষপাতদুষ্টতার গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত দুদক চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যটি অপশাসনেরই একটি বিপজ্জনক বার্তা।

রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে দুর্নীতির রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক নজরদারী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সর্বশেষ দুর্নীতি ধারণা সূচক-২০১৮ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রতিবছর দুর্নীতির মাত্রা বাড়ছে বাংলাদেশে। গত বছর বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে ২০১৭-এর তুলনায় বেশি। ২০১৮ সালে ওই সূচক অনুযায়ী সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম, যা ২০১৭ সালে ছিল ১৭তম স্থানে। অপরাধ বিজ্ঞান বলছে, অপরাধীরা অপরাধ করে বটে কিন্তু মনের অজান্তেই একটি প্রমাণ রেখে যায়। অপরাধের তেমনি একটি চিহ্ন রেখে দিলেন দুদক চেয়ারম্যান। খোদ দুদক কর্মকর্তাদেরই যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ বেরিয়েছে তখন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির পক্ষে দুদক প্রধানের সাফাই গাওয়া ছাড়া তো আর অন্য কোনো বিকল্প থাকে না। চারদিকে যখন দুর্নীতিবাজদের উল্লাস, যখন শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি চলছে অবাধে তখন দুর্নীতিই যে এই দুর্নীতিবাজ সরকারের ভূষণ, দুদক চেয়ারম্যানের কথায় সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান নিজেই স্বীকার করেছেন, মন্ত্রী-এমপিসহ রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা ৭০ ভাগ দুর্নীতির মামলা দিচ্ছেন পুঁটিমাছের বিরুদ্ধে। মূলত দুর্নীতি দমনের নামে মুখোশপরা এই দুদক বিরোধী দল দমনে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় ব্যস্ত।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, জনপ্রশানের কর্মকর্তারা দুর্নীতিকে এখন আর দুর্নীতি মনে করছেন না। এ কারণেই দেখা যায়, দেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু ওই নির্বাচনটি ‘সরল বিশ্বাসী’ প্রশাসনের ‘সরল’ কর্মকর্তারা ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাতেই সেরে দিয়ে দেশের ভোটারদের পরিণত করেছেন ‘সাব-হিউম্যানে’। এই ঘোরতর অন্যায় ও পাপের জন্য তাদের কোনো গ্লানি নেই। প্রশাসনের এই সরল বিশ্বাসী কর্মকর্তাদের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে এখন চলছে চরম নৈরাজ্য। ‘সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি’র কারণে রেল লাইন কিংবা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ। সরকারি কর্মকর্তাদের সরল বিশ্বাসে দুর্নীতির কারণে প্রতিটি প্রকল্প খরচ এখন বেড়ে যাচ্ছে চার পাঁচ গুন। জনগণ মনে করে এদেশে গত দশ বছরে উন্নয়ন হয়েছে এই সকল ‘সরল বিশ্বাসী দুর্নীতিবাজ’দের। প্রশাসনের এই সরল বিশ্বাসী দুর্নীতিবাজরা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা দুর্নীতিবাজ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়তই বিরোধী দল ও মতের মানুষকে গুম করছে, খুন করছে। যাতে সরকার ও প্রশাসনের সরল বিশ্বাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস না পায়।

বন্যা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চল-মধ্যাঞ্চলে এখন বন্যায় সর্বস্বহারা মানুষের হাহাকার চলছে। ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নতুন করে আরো পাঁচটি জেলায় পানি প্রবেশ করেছে। শুকনো আশ্রয় ও খাবারের সন্ধানে ছুটছে বানভাসি মানুষ। কোথাও ত্রাণের গাড়ি কিংবা নৌকার সংবাদ শুনলেই ছুটে যাচ্ছে তারা। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে চারদিনে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে তিন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সহায়-সম্পদ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বন্যার্তরা। অনেকেই পরিবারসহ ডিঙি নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ছোট ছোট নৌকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে অনেকের। ত্রাণের অভাবে যখন করুণ অবস্থা তখন সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ঢাকায় বসে গলাবাজি করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ পৌঁছেনি এখনো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের যে উদ্যোগ প্রয়োজন সেটা আমরা লক্ষ্য করছি না। সরকারের চরম উদাসীনতা প্রমাণ করে জনগণের প্রতি তাদের ন্যুনতম কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা জনবিদ্বেষী।

এছাড়া গতকাল বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশ সাফল্যমন্ডিত করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকালে গত পরশু ফেনী থেকে ফেনী জেলা বিএনপি নেতা গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, জেলা যুবদলের জাকির হোসেন জসিম, আতিকুর রহমান মামুন, হাসানুজ্জামান শাহাদাৎ, জাহিদ হোসেন বাবলু, স্বেচ্ছাসেবক দলে সাইদুর রহমান জুয়েল, শরীফুল ইসলাম এবং ফেনী পৌর যুবদল নেতা কাজী সোহাগকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।


আরো সংবাদ



premium cement