১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার গণবিরোধী দলিল : বাজেট-প্রতিক্রিয়ায় সিপিবি

-

প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটকে সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ শাহ আলম গতানুগতিক আখ্যায়িত করে বলেছেন,এটা সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার গণবিরোধী দলিল। তারা এ বাজেটকে প্রত্যাখান করে বলেন, দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্থনীতির যে প্রবৃদ্ধি ঘটছে তার মাত্র ১ শতাংশ তাদেরকে দিয়ে ৯৯ শতাংশই ১ শতাংশ লুটেরা ধনিকদের পকেটস্থ করার প্রক্রিয়াকে মদত দেয়ার দর্শনইে এ বাজেট প্রণীত হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এ বাজেট লুটেরা ধনীকদের আরো ধনী করবে এবং গরিব-মধ্যবিত্তকে আপেক্ষিকভাবে আরো দরিদ্র ও আর্থিকভাবে অসহায় করে তুলবে। বাজেট সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিপিবি নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন,  বাজেট প্রস্তাবের ভিত্তি হলো পুঁজিবাদের নয়া উদারবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন। এই দর্শনের মূলভিত্তি হলো ধনিক তোষণ ও শ্রেণি-ধনবৈষম্য সৃষ্টি করা। এই বাজেটে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির অন্যতম সমাজতন্ত্রের কোনো প্রতিফলন নেই। প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়ে পরোক্ষ কর প্রত্যক্ষ করের দ্বিগুণ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ভ্যাটসহ পরোক্ষ কর থেকে এই বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা সকল পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতির হারকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আর এই দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরিব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদেরকে। অথচ বিত্তবানদের উপর ধার্য্য প্রত্যক্ষ কর মূলতঃ একই পর্যায়ে রাখা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর রেয়াত অব্যাহত রাখা হয়েছে, খেলাপী ঋণগ্রহীতাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পরিবর্তে সুদের হার কমানো হয়েছে। এই বাজেটে এভাবে গরিব জনগণের সম্পদ মুষ্ঠিমেয় লুটেরা ধনিকের হাতে প্রবাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বাজেটের আসল লক্ষ্য হলো জনগণের ট্যাক্সের টাকায় দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভারী করা।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এবারের বাজেটের আকার যেমন স্মরণকালে সর্বোচ্চ তেমনি ঘাটতির পরিমাণও স্মরণকালে সর্বোচ্চ। ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা কীভাবে অর্জিত হবে তা সুস্পষ্ট নয়।

বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি। ঘোষিত বাজেটের ক্ষেত্রে একই পরিণতি হবে। ফলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বাজেটে ঘোষিত পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি হবে। এই বিপুল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাজেটের পরিমাণকে ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এই অর্থের বেশিরভাগ খরচ হবে পূর্বেকার ঋণ পরিশোধ, শ্বেতহস্তির মতো বিশাল সিভিল-মিলিটারি প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ, বিলাস দ্রব্য আমদানি, অপচয়, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রকারের সিস্টেম লস, কর-রেয়াতের নামে ধনিক শ্রেণিকে বিশাল ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি কাজে। এসবই হলো লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থে গৃহীত পদক্ষেপ। এই বাজেট জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিম-লে নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও নাজুকতা বাড়িয়ে তুলবে।

বিবৃতিতে সিপিব সভাপতি ও মহাসচিব বলেন, সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য কিছু প্রতীকী পদক্ষেপের ছিটেফোঁটা যুক্ত করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, অর্থমন্ত্রী যখন সংসদে বাজেট পড়ছেন তখন কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাদের ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন উৎপাদন ব্যয়ের অর্ধেক দামে। সরকার খাদ্য শস্য সংরক্ষণের জন্য গুদামের অভাব দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য শস্য ক্রয় করছে না। তারা প্রতিটি ইউনিয়নে স্বল্পকাল মজুদের উপযোগী একটি করে শস্য গুদাম তৈরির জন্য বর্তমান বাজেটে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের আহ্বান জানান। যা প্রস্তাবিত বাজেটের ১ শতাংশ মাত্র। 

বিবৃতিতে তারা বলেন, বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের মধ্যে বিপুল পার্থক্য একথাই প্রতিষ্ঠা করেছে যে বাজেট প্রস্তাব নিছক একটি কথার কথা মাত্র। বাজেটকে অনির্ভরযোগ্য ও অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবে পরিণত করা হয়েছে। বাজেটের তথ্য-ভিত্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।


আরো সংবাদ



premium cement