২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ফের সক্রিয় হতে চায় ঐক্যফ্রন্ট, দূরত্ব কমাতে নেতারা বসছেন আজ

ফের সক্রিয় হতে চায় ঐক্যফ্রন্ট, দূরত্ব কমাতে নেতারা বসছেন আজ - সংগৃহীত

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ঝিমিয়ে পড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় করতে আজ বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। ফ্রন্টের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় এ বৈঠকটি হবে বলে জানা গেছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী জোট হিসেবে বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিকে সাথে নিয়ে বিরোধী বিভিন্ন দলের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে গড়ে তুলেছিলেন এ প্লাটফর্ম। এর নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। কিন্তু নির্বাচনে চরম অনাকাক্সিক্ষত ফলাফলের পর প্রশ্নের মুখে পড়ে ফ্রন্টের ভূমিকা ও নির্বাচনী কৌশল। নির্বাচনোত্তর ফ্রন্টের নেয়া নানা সিদ্ধান্তে এ জোটে ফাটল দেখা দেয়। যে নির্বাচনের ফল তারা প্রত্যাখান করেছিলেন, সেই সংসদেই শপথ নিতে দেখা যায় ফ্রন্টের নির্বাচিত আট সংসদ সদস্যকে। এমন নানা টানাপড়েনের কারণে গত ৫ মাস ধরে ঐক্যফ্রন্ট কোনো কর্মসূচি কার্যকর করতে পারেনি। প্রতিটি দল চলেছে যে যার মতো। জানা গেছে, ভুল বোঝাবোঝি কিংবা দূরত্ব মিটিয়ে ফের সক্রিয় হতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। কর্মসূচি নির্ধারণ করে নতুন করে এগোতে চায় তারা। ঈদের আগে ও পরে এ নিয়ে নেতারা অনানুষ্ঠানিক বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন। শীর্ষ নেতারা একমত যে, ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এর নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রয়োজনে বাড়াতে হবে ফ্রন্টের কলেবরও। 

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গতবছরের ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে এ জোট গঠন হয়। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন তারা। কিন্তু নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিভিন্ন ইস্যুতে জোটের শরিকদের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা জোটের বৈঠকে যাওয়া বন্ধ করে দেন। সর্বশেষ সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণকে কেন্দ্র করে কার্যকারিতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলে এ জোট।
নির্বাচনের দিন রাতেই ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। জোটের নির্বাচিত কোনো সদস্য শপথ গ্রহণ করবেন না বলেও জানান তারা। কিন্তু জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর। এ কারণে তাকে জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটে গণফোরামের নির্বাচিত অন্য সদস্য মোকাব্বির খানের সময়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেন ড. কামাল। এরপর ২৫ এপিল শপথ গ্রহণ করেন বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে দলটি। কিন্তু ২৯ এপ্রিল শপথ গ্রহণের শেষ দিন বিকেলে চারজনকে শপথ নেয়ার অনুমতি দেয় বিএনপি। ওই দিন রাতে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে বিএনপির চারজন শপথ নিয়েছেন।’ পরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘তাদের সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।’

চার সংসদ সদস্যকে শপথ গ্রহণের অনুমতি দেয়ায় জোটের শরিকরা ক্ষুব্ধ হয় বিএনপির ওপর। ফলে জোটের গণজমায়েত কর্মসূচিও বাতিল করা হয়। জোটের এসব অসঙ্গতির সমাধান করা না হলে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন কাদের সিদ্দিকী। জানা গেছে, ঈদের আগের দিন ড. কামাল হোসেন কাদের সিদ্দিকীকে পরবর্তী একটি বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললে তিনি মেনে নেন। সেই বৈঠকই হচ্ছে আজ সোমবার।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক নেতা বলেন, আমরা লজ্জায় পড়ে গেছি, কোনো জবাব দিতে পারছি না। কারণ শপথ নেয়াসহ আরো যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে তা ফ্রন্ট নেতাদের সাথে আলোচনা করে নেয়া হয়নি। আমরা জানতে চাইলে নেতারা বলেন, তারা কিছু জানেন না। তাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দেয়। 
ওই নেতা আরো বলেন, নির্বাচনের পর নেয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। নির্বাচিতদের শপথ নেয়ার কথা ছিল না, তারা শপথ নিয়েছেন। আমরা নতুন নির্বাচনের দাবি করে এই সরকারে অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না বলেই উপজেলা নির্বাচন বর্জন করেছি। তাহলে বিএনপি আবার উপ-নির্বাচনে অংশ নেয় কিভাবে? আমরা এসবের জবাব চাই। সন্তোষজনক জবাব না পেলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব। 

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য ধরে রাখতে চায় বিএনপি। এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেনেরও একই মত। ঈদের পরদিন দলের নেতাকর্মীরা তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন সংগঠিত করারও আহ্বান জানিয়েছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে আন্দোলনের ফল আনতেও তাগাদা দেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল গত ৩ জুন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে ফ্রন্টের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সাথেও সাক্ষাৎ করেন। 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতা মনে করেন, ফ্রন্টের সবচাইতে বড় দল হিসেবে বিএনপিকেই সবার আগে নীরবতা ভাঙ্গতে হবে। সামনে থেকে নেতৃত্বও তাদেরই দিতে হবে। নির্বাচনের পর বিএনপির ন্যূনতম কর্মসূচি দেয়ার প্রয়োজন ছিল বলে তারা মনে করেন। তারা বলেন, কর্মসূচিহীন ফ্রন্টকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব চাইছে সংগঠিত হয়ে কর্মসূচির দিকে যেতে।

গণফোরামের একাধিক নেতা বলেন, বিএনপির উচিত হবে অন্ততপক্ষে নাগরিক সমস্যাগুলো নিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ঐক্যফ্রন্ট সক্রিয় হওয়ার উদ্যোগ নিলেও বিএনপির ভেতরে একটি পক্ষ অবশ্য খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কার্যকর উদ্যোগ না নেয়া, কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া এবং সরকারের কর্মকাে র বিষয়ে ফ্রন্টের কোনো কোনো নেতার নমনীয়তা প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কারণে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার দাবি তুলেছে। তারা বলছেন, ঐক্যফ্রন্টনির্ভর নয়; বিএনপিকে নিজের শক্তির উপর ভর করেই সামনে এগোতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement