২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নিরাশ হলে চলবে না জনগণের বিজয় হবেই হবে : ড. কামাল হোসেন

-

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, নিরাশ হলে চলবে না, জনগণের বিজয় হবেই হবে। দু’তিন বছর কেউ এভাবে চলতে পারে। কিন্তু জনগণ ঠিকই সময়মত জবাব দেবে। তবে তিনি সর্তক করে দিয়ে বলেন, জনগণ কার্যকর ভূমিকা না রাখলে সংবিধানকে অবজ্ঞা করে যারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তারা লাভবান হবে।

আজ শুক্রবার রাজধানীতে গণফোরামের ‘বিশেষ কাউন্সিলের’ উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, জনগণ এদেশের মালিক। তিনি বলেন, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন তারা জনগণের প্রতিনিধি। তারা অবশ্যই জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে।

তিনি বলেন, পুলিশ জনগণের সেবক। এদের দায়িত্বের ব্যাপারে সংবিধানে স্পষ্ট করে লেখা আছে। পুলিশ এদেশের মালিক না। জনগণ এদেশে মালিক। জনগণকেই খেয়াল রাখতে হবে পুরিশ যেন তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে যথেচ্ছভাবে না প্রয়োগ করে।

তবে তিনি বলেন, সব পুলিশই যে তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ করছে ত-কিন্তু নয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে পুলিশ নিয়ে গর্ব করা হতো। তারা আইনের বাইরে গিয়ে কখনো ক্ষমতা প্রয়োগ করত না। কেননা তখন পশ্চিমাদের পুলিশে অন্যরকম ভূমিকা ছিল।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও আইনের শাসন তখনই থাকবে যখন দেশে আইনের শাসন থাকবে।

ড. কামাল হোসেন বলেন, যারা রাষ্ট্রক্ষমতা পায় তারা জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে সে ক্ষমতা পায়। তিনি বলেন, জনগণকে দেখতে হবে এসব জণপ্রতিনিধিরা এরা সংবিধানে দেয়া ক্ষমতা মেনে চলে দেশ চালাচ্ছে কি-না? তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন হতাশ হবেন না। এদেশের মানুষ কখনোই স্বৈরাচার মেনে নেয়নি, নেবেও না।

তিনি বলেন, দেশের মালিক জনগণ এসময় তিনি সকলকে নিজের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনরাই দেশের মালিক।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার প্রসংশা করে ড. কামাল হোসেন বলেন, তার ভূমিকাকে খাটো করে দেখার নেই। তিনি অনেক সাহসী ভূমিকা রেখেছেন জীবনে ঝুঁকি নিয়ে। সিনহার ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন নেতিবাচক পদক্ষেপের ব্যাপারে ড. কামাল বলেন, তারা (সরকার) তার (সিনহা) ব্যাপারে এধরণের সিদ্ধান্ত না নিলেও পারত। তিনি বলেন, দেশে সাবেক বিচারপতির ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ড. কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতা ও সংবিধানকে রক্ষা করতে হলে জনগণকে সর্তক থাকতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে। এর পাশাপাশি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে জনগণকেই সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের কথা সংবিধানে লেখা আছে, তবে তা পালন করা হয়নি। এব্যাপারে সবারই কমবেশি অভিজ্ঞতা আছে।

তিনি বলেন, সংবিধানে দেয়া দায়িত্ব যেন সঠিক ভাবে পালন করা হয় সে ব্যাপারে জনগণকে সংগঠিত হতে হবে। সবাই সচেতন থাকতে হবে, তার ভোট সে কি নিজে দিতে পারছে কি-না তা জনগণকে খেলাল রাখতে হবে। জনগণ ক্ষমতার মালিক - এটা কিন্তু হালকা কথা না। তিনি বলেন, জনগণ তার মালিকানা রক্ষায় গুরুত্ব না দিলে তো তা হারানোর ভয় থাকে।

এ সময় গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট এস.এম. আলতাফ হোসেন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ড. রেজা কিবরিয়া, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক, অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক আহমেদ, এম. শফিউর রহমান খান বাচ্চু, ফরিদা ইয়াছমীন, মাহমুদ উল্লাহ মধু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মোকাব্বির খান
এদিকে দীর্ঘ ৮ বছর পর বিশেষ কাউন্সিলে মঞ্চে দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে দেখা গেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খানকে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত ২ এপ্রিল সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন মোকাব্বির খান। দল ও জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাউকে কিছু না জানিয়ে শপথ নেওয়ায় তাকে নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। তার শপথ নেয়ায় দলের প্রধান ড. কামাল হোসেন বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন। এমনকি শপথ নেওয়ার তিন দিন পর ৫ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি মোকাব্বির খানকে সেখান থেকে বের করে দেন। সেসময় কয়েকজন গণফোরাম নেতা জানিয়েছিলেন, তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে।

এদিকে অনুষ্ঠানে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে দেখা যায়নি। অসুস্থতার কারণে তিনি কাউন্সিলে আসতে পারেননি বলে নেতৃবৃন্দ জানান।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। কাউন্সিল উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। কাউন্সিলে সারাদেশের সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement