১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

শেয়ারবাজারে লাখ লাখ টাকা হারালেন তারা

শেয়ারের অব্যাহত দরপতনে বিরাট ক্ষতির মুখে বহু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী - সংগৃহীত

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী, যাদের গল্পের বিষয়, শেয়ারবাজারে গত কয়েক মাসের মাসের দরপতনে কে কত টাকা হারিয়েছেন। এদের মধ্যে যেমন শিক্ষক, ব্যাংকার, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলাসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছেন।

ইকবাল হোসেন নামের একজন বিনিয়োগকারী বলছেন, ''পারিবারিকভাবে পাওয়া জমি বিক্রি করে ত্রিশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। বাজার যখন পড়তে শুরু করলো, তখন ভাবলাম আবার ঘুরে যাবে। এই ভাবতে ভাবতে আমার ত্রিশ লাখ টাকার শেয়ার এখন দশ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এখন সংসার চালাতেও কষ্ট হচ্ছে।''

একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ফারহানা হায়দার বলছিলেন, তার বিনিয়োগ এখন অর্ধেক হয়ে গেছে।

তিনি বলছেন, ''আমি বিশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। নানা রিউমার। শুরুতে এটা ওটা কিনেছি। পরে দাম পড়তে শুরু করায় অনেকগুলো বিক্রিও করে দিয়েছি। এখন আমার প্রায় দশ লাখ টাকা আছে।''

শেয়ার লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় আসা বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীদের গল্প অনেকটা একই রকম। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে গত তিন মাস ধরে অব্যাহত দরপতন চলছে।

এ বছর এখন পর্যন্ত ৭২ দিন লেনদেন হয়েছে, তার মধ্যে ৩৮ দিনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকের পতন হয়েছে। গত তিন মাসে এই বাজারটি সূচক হারিয়েছে ছয় শ' পয়েন্ট।

সরকার ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশও করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

এরপর বাজার অনেকটা টেনে তোলা হয়েছে, কিন্তু তা কারো মধ্যেই স্বস্তি আনতে পারেনি।

একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী মাসুদুল আলম বলছিলেন, ''গত ২/৩ মাস যাবত শেয়ারমার্কেট একটু নিম্নগামী আছে। এর মূল কারণ আমরা যেটা বুঝতে পারছি যে, ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট রয়েছে, ফলে তারা এখানে বেশি বিনিয়োগ করছে না।''

''নির্বাচনের পর যখন বাজারটা উঠেছিল, তখন অনেক বড় বড় বিনিয়োগকারী তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু তারা এখন আর 'কেনার মুডে' নেই। এছাড়া আরেকটি সমস্যা হলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা।''

''বিশেষ করে ক্যাশ একাউন্টে যারা কেনাবেচা করেন, তারা যখন দেখেন বাজার পড়ে যাচ্ছে, তারা বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। তাতে বিক্রির চাপটা আরো বেড়ে যাচ্ছে আর দামও পড়ে যাচ্ছে,'' তিনি বলছেন।

তিনি বলছেন, সব শেয়ারবাজারেই কমবেশি কারসাজির অভিযোগ থাকে, এজন্য নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের যেমন নজরদারি বাড়াতে হবে, তেমনি বিনিয়োগকারীদেরও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তারা এই ফাঁদে না পড়েন।

এই বাজারে এর আগেও অস্বাভাবিক দরপতনের ঘটনা দেখা গেছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, একটি চক্র বাজারে কারসাজি করছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

কিন্তু এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন জানিয়েছে, বাজারের ওপর সবসময়েই তাদের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক মনে করেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অস্থিরতার বড় কারণ নিয়মতান্ত্রিকতা না থাকা।

তিনি বলছেন, শেয়ার বাজারে পূর্ব ধারণার ব্যাপার সব জায়গায় থাকলেও, উন্নত দেশগুলোয় একটি নিয়মতান্ত্রিকতা থাকে। ফলে এসব বাজারে যেকোনো শেয়ারের যেমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ে না, তেমনি এরকম পতনও হয় না। সেখানে একটা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা থাকে।

''কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে সেই নিয়মতান্ত্রিকতার অভাব রয়েছে। ফলে অতিরিক্ত লোভী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা মধ্যস্বত্বভোগীরা সেই সুযোগ নিয়ে বেশি মুনাফা করার জন্য পুরো বাজারে কারসাজি করেন।''

''বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা যদি থাকতো, এসব কারসাজির সুযোগ যদি না থাকতো,তাহলে কিন্তু বাজারের এই চিত্রটি আমাদের দেখতে হতো না।'' তিনি বলছেন।

তিনি বলছেন, ২০১০ সালের শেয়ারবাজারের দরপতনের পর তদন্ত কমিটি হলেও সেসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি, তেমনি সব সুপারিশও কার্যকর করা হয়নি।

ফলে অনেকেই এ ধরণের অপরাধে উৎসাহিত হচ্ছেন আর তাই শেয়ারবাজারের বারবার এ রকম অস্বাভাবিক উত্থান ও পতনের ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি

 


আরো সংবাদ



premium cement