১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে যেভাবে চলছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা : এখান থেকে নেয়া হবে কেরানিগঞ্জে!

বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয় - ছবি : নয়া দিগন্ত


ডায়াবেটিস, জয়েন্টে ব্যথাসহ নানা সমস্যা ; স্থানান্তরে প্রস্তুত কেরানীগঞ্জ মহিলা জেল


বেগম খালেদা জিয়াকে আবারো ভর্তি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। তিনি ডায়াবেটিস, খাবার অরুচি, অনিদ্রা এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন। গতকাল বেলা পৌনে ১টায় তাকে ক্যাবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর রুমে ভর্তি করা হয়। পাশের ৬২২ নম্বর রুমে থাকবেন কারাগারের সংশ্লিষ্ট লোকজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: জিলন মিঞা সরকারের নেতৃত্বে মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকেরা তাকে দেখতে যান। চিকিৎসকেরা বের হয়ে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক। সাংবাদিকদের জানান, গত ২৮ মার্চ বেগম খালেদা জিয়ার জন্য নতুন করে বোর্ড গঠন করা হয়। গতকাল বোর্ডের সদস্যদের সাথে আরো দু’জন চিকিৎসক ছিলেন। মাহবুবুল হক জানান, তার শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে। খাবারে অরুচি রয়েছে। তিনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন। তার ব্লাড সুগার ১৪ (রেনডম)। নিদ্রাহীনতার সমস্যাও রয়েছে তার। পায়ের জয়েন্টে ব্যথা পাচ্ছেন তিনি। হাঁটা চলা করতে পারেন না তিনি আগে থেকেই। একজনের সাহায্য নিয়ে হাঁটেন।

বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসকদের কাছে তার শারীরিক সমস্যাগুলো বিস্তারিত বলেছেন। 
ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুল হক আরো জানান, এখন থেকে একজন চিকিৎসক প্রতিদিন নিয়োজিত থাকবেন তাকে দেখার জন্য। সেই চিকিৎসক তাকে দেখার পাশাপাশি প্রতিদিন চিকিৎসার অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন দেবেন। 

বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তার পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার দাবি উঠেছে, এখানে তার সঠিক চিকিৎসা হবে কি না জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুল হক জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় একটি সুপার স্পেশালাজড হাসপাতাল। এখানে অনেক ভালো ভালো চিকিৎসক আছেন। এখানে তার ভালো চিকিৎসা হবে, বাইরের কোনো হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন নেই। 
হাসপাতালে বেগম জিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, র্যাব-পুলিশ মোতায়েন আছে বাইরে। ক্যাবিন ব্লকে পুলিশসহ কারারক্ষীরা রয়েছে। নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। 
মেডিক্যাল বোর্ড পরিবর্তনের দাবি উঠেছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল হক জানান, এই চিকিৎসকদের চিকিৎসায় তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। 

বেগম খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডে অধ্যাপক জিলন মিঞা ছাড়াও রয়েছেন রিউমাটোলজির অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজির সহযোগী অধ্যাপক ডা: তানজিমা পারভীন, ফিজিক্যাল মেডিসিনের সহযোগঅ অধ্যাপক ডা: বদরুন্নেসা আহমেদ, অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: চৌধুরী ইকবাল মাহমুদ। এ ছাড়াও গতকাল বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন রিউমাটোলজির সহযোগী অধ্যাপক ডা: শামীম আহমেদ ও কার্ডিওলজির মেডিক্যাল অফিসার ডা: মামুন। 

নতুন মহিলা কারাগার প্রস্তুত : এ দিকে কেরানীগঞ্জের নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (পুরুষ) পাশে আরো একটি মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এই কারাগারের একটি ৩ তলা অথবা পাশের একটি একতলা ভবনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাখার পরিকল্পনা অনেকটা চূড়ান্ত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগার নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত অধিদফতরের একজন জানিয়েছেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ নতুন কারাগার ভবন বুঝে নিতে চাইলে তারা বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত আছেন।’
এ দিকে নতুন ঢাকা মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সার্বিক কার্যক্রম সরেজমিন দেখতে আজ মঙ্গলবার সকালে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা নতুন কারাগার পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। সে জন্য গতকাল সোমবার দিনভর পুরো কারাগার এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলে। 
গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো: আসাদুজ্জামান খান কামাল সাভারের একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, খালেদা জিয়াকে যেকোনো সময় কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে নেয়া হবে। এরপরই কারা প্রশাসন নতুন মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের কাজ তড়িঘড়ি শেষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে; যা ইতোমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। 
গত শনিবার উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা কেরানীগঞ্জের নতুন ঢাকা মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবনির্মিত মহিলা কারাগারের প্রধান গেট থেকে শুরু করে ভেতরের যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। প্রধান গেটের সামনে বাগান তৈরির কাজ চলছে। এ ছাড়া গাড়ি পার্কিং, সেন্ট্রি পোস্ট ও তথ্য সেবাকেন্দ্রের কাজও মোটামুটি শেষ হয়েছে। এখন চলছে ঘষামাজা। মূল গেটের ভেতরে দেখা যায়, গেট বরাবর অল্প দূরত্বে তৈরি করা হয়েছে কেস টেবিল। এর চারপাশে খোলা মাঠ। মাঠের চারপাশে নির্মিত হয়েছে পাকা রাস্তা। এর পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক ৪ তলা, ৩ তলা ও একতলা ভবন। 

কারাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন এই মহিলা কারাগারে বন্দীদের থাকার ভবন, কেস টেবিল, সুইপার কলোনিসহ আটটি ভবন তৈরি করা হয়েছে। 
কারাগার এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন এমন একজন কর্মকর্তা গতকাল নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা যতটুকু শুনেছি সেটি হচ্ছে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলোআপ চেকআপের পর এ কারাগারে আনা হতে পারে। নতুন এ কারাগার উপযোগী হয়েছে কি না সেটি দেখতে আজ আইজি প্রিজন্স পরিদর্শন করতে আসবেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।

সকাল থেকেই কারাগার এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে। কারারক্ষী ও অন্য নিরাপত্তার জন্য ডিউটি ভাগ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে শুনেছিলাম খালেদা জিয়াকে নাকি প্যারোলে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারেও ওপরে কথাবার্তা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে কারাগার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন ঢাকা মহিলা কারাগারের উত্তর পাশের তিনতলা একটি ভবনে বেগম খালেদা জিয়াকে রাখার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ওই বিল্ডিংয়ে তাকে রাখার পাশাপাশি সেখানেই আদালত বসিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের; যার কারণে নতুন কারাগার উদ্বোধনের পর যদি বেগম খালেদা জিয়াকে এখানে আনা হয় তাহলে আপাতত অন্য কোনো মহিলা বন্দী এ কারাগারে রাখা হবে না। 
মহিলা কারাগার নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন ডিপ্লোমা এরিয়া প্রকৌশলী গতকাল কারা সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘নতুন কারাগার তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ যদি আজকেই এটি বুঝে নিতে চান আমরা আজকেই বুঝিয়ে দিতে পারব।’

ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স টিপু সুলতানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আইজি প্রিজন্সের নতুন মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করার কথা জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মূলত কারাগারটির সার্বিক পরিস্থিতি দেখার জন্যই তিনি যাবেন। 

কারাগারের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, নতুন কারাগারে এখনো পানি নেই, বিদ্যুতের লাইন লাগার কাজ বাকি। এ ছাড়া আরো কী কী কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো সরেজমিন দেখা এবং কোন সেলে তাকে (খালেদা) রাখা হবে সে ব্যাপারেও একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এখনো কারাগারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। তাই কারাগারের নামকরণও হয়নি। তবে ‘ঢাকা মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার’ হিসেবে এটির নামকরণ হতে পারে। কারাগারের ভেতরে যে সেল রয়েছে সেগুলোর নাম চূড়ান্ত করা হয়নি। 
প্রসঙ্গত বর্তমানে নতুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশে ৬৮টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে কাশিমপুরে রয়েছে একমাত্র মহিলা কারাগার।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল