২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা : যা আছে বিএসএমএমইউর মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টে

খালেদা জিয়া - সংগৃহীত

সরকারের কোনো কোনো কর্তাব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে সুস্থ আছেন এমন কথা বললেও তাদের গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড বলছে ভিন্ন কথা। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সাতজন চিকিৎসক সম্প্রতি কারাগারে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এসেছেন। তারা লিখিতভাবে যে মতামত দিয়েছেন, তাতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতির চিত্রই ফুটে উঠেছে। তারা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্যথায় আক্রান্ত। তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে কিংবা চলতে পারছেন না। চিকিৎসকেরা তাকে আবারো হাসপাতালে ভর্তি করে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। 

গত মাসের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। চিকিৎসকদের মধ্যে সেখানে ছিলেন অধ্যাপক মো: আব্দুল জলিল চৌধুরী, ডা: শামীম আহমেদ, ডা: তানজিমা পারভীন, ডা: বদরুন্নেসা আহমেদ, ডা: চৌধুরী ইকবাল মাহমুদ, ডা: রিফাত জামান ও ড. মাহমুদুল হাসান। 

চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরের দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের মতামত জানান। লিখিত মতামতে তারা জানিয়েছেন, ‘২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে চিকিৎসা শেষে বেগম খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর তার বাম কাঁধের ব্যথা বেড়েছে। এর ফলে তিনি বাম কাঁধ ঠিকমতো নাড়াতে পারছেন না। পাশাপাশি তিনি নতুন করে ডান কাঁধের ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বাম বাহু, বাম পা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথায়ও ভুগছেন।’

চিকিৎসকেরা বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া অন্যের সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে কিংবা চলাচল করতে পারছেন না। তার হাতের গ্রিপও দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তাতে কাঁপুনি হয়।’
চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়ার ‘কার্পাল টানেল সিন্ড্রোমের’ কথা উল্লেখ করেছেন। এটি এক ধরনের কব্জির প্রদাহজনিত রোগ। কারপাল টানেল অর্থাৎ কব্জির হাড়গুলোর (ও সংশ্লিষ্ট কব্জি ভাঁজ করার পেশীগুলোর সংযোগকারী টেন্ডন সমূহের) মধ্যবর্তী সুড়ঙ্গে মিডিয়ান স্নায়ুর নিষ্পেষণ/পীড়নজনিত কারণে এই প্রদাহ হয়ে থাকে।
চিকিৎসকেরা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের ফিজিওথেরাপির প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তিনি এখন ওষুধ নিচ্ছেন। তবে তারা বেগম জিয়ার বর্তমান গ্লাইসেমিক, কার্ডিয়াক, লিভার ও কিডনির অবস্থা জানতে পারেননি। 

মেডিক্যাল বোর্ডের মতামত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বর্তমান স্বাস্থ্যের অবস্থা আবারো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তারা তার ব্লাড সুগার, এইচবিএআইসি, ই-জিএফআর, সিবিসি, লিপিড প্রফাইল, ইসিজি, ইকো এবং এনসিএস পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। 

চিকিৎসকেরা তাকে ফের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। 
জানা গেছে, বেগম জিয়া বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী নন। তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান। বিএনপিও বারবার এই দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। কয়েকদিন আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কথা বলে এসেছেন। 
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার নয়া দিগন্তকে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন এবং ওখানেই উনার নিজস্ব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন, যারা সারাজীবন উনাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। এই চাওয়াটা বা দাবিটা খুব বড় নয়। উনাকে যে বিএসএমএমইউতে আনতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ডোনার বলেন, বেগম জিয়া মনে করেন, বিএসএমএমইউতে তার সঠিক চিকিৎসা হবে না। 

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দী রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির একটি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিএনপি নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি এখন আর আইনি প্রক্রিয়ার বিষয় নয়, এটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement