২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দুই সংগঠন ছাড়া বাকি প্রার্থীদের ডাকসু নির্বাচন বর্জন

ডাকসু
অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা - ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল ছাড়া বাকি সব সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ সোমবার এ নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪০ মিনিট আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রগতশীল ছাত্রঐক্যের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দীসহ অন্যরা।

এ সময় তারা এ নির্বাচনের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন।

এদিকে, ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে স্বতন্ত্র জোট অরণি-শাফী পরিষদ। এই প্যালেনের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শাফী আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই ঘোষণা দেন।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, ছাত্রলীগ এবং প্রশাসনের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে এবং অরণি সেমন্তি খান ও শ্রবণা শফিক দীপ্তিকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করায় স্বতন্ত্র জোট ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ বর্জন করছে।’

দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন।

এ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি ও হল সংসদের ১৩টিসহ মোট ৩৮টি পদের জন্য ভোট হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদের বিপরীতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ২২৯ জন। আর প্রতিটি হল সংসদে ১৩টি পদের জন্য ১৮টি হলে ৫০৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৬ হাজার ৯৪৪ যা মোট ভোটারের ৬২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং নারী ১৬ হাজার ৩১২ জন; যা মোট ভোটারের ৩৭ দশমিক ৭১ শতাংশ।

ডাকসুর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ২১ জন এবং জিএস পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া এজিএস পদে ১৩ জন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম-ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন এবং ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে ৮৬ জন নির্বাচন করছেন।

অন্য দিকে হল সংসদে ১৮টি হলে ১৩টি করে পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন মোট ৫০৯ জন। এর মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ২৭ জন, জগন্নাথ হলে ২৮ জন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলে ১৭ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ২৬ জন, অমর একুশে হলে ২৯ জন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৭ জন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে ৩৪ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৩৩ জন, রোকেয়া হলে ৩০ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩০ জন, শামসুন্নাহার হলে ২৫ জন, কবি জসীম উদ্দীন হলে ২৫ জন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ২২ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৬ জন, বিজয় একাত্তর হলে ৩০ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২৭ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ৩৭ জন এবং সূর্যসেন হলে ২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আরো পড়ুন :
ব্যালট বাক্স ‘গায়েব’, রোকেয়া হলে ভোট স্থগিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের বুথ থেকে ব্যালট বাক্স ‘গায়েব’ হওয়ার ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা সেখানে বিক্ষোভ করছেন। হলের ভেতরে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

হলের একটি রুম থেকে তিনটি ব্যালট বাক্স উদ্ধারের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে।

হল শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, রোকেয়া হল কেন্দ্রে ৯টি ব্যালট বাক্স থাকার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকে তিনটি ব্যালট বাক্স পাওয়া যাচ্ছিল না। এই অবস্থায় দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

পরে শিক্ষার্থীরা হলের তালাবদ্ধ একটি রুম থেকে তিনটি ব্যালট বাক্স উদ্ধার করে। ওই বাক্সগুলোতে ব্যালট পেপার পাওয়া গেছে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ব্যালট বাক্স তিনটি ভেঙে ফেলেছে।

আরো পড়ুন : রোকেয়া হলের ভোটগ্রহণ শুরু এক ঘণ্টা দেরিতে

সোমবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন শুরু হলেও রোকেয়া হলে এক ঘণ্টা দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন,‘কিছু জটিলতার কারেণ নির্ধারিত সময়ে ভোট শুরু হয়নি।’

তবে কী ধরনের জটিলতা সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে হলের ছাত্রীদের একটি সূত্র বলছে, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই প্রার্থীরা খালি ব্যালট বাক্স দেখতে চায়, কিন্তু হল প্রশাসন তাদেরকে খালি ব্যালট বাক্স দেখতে দেয়নি। ফলে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা মিলে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখে।

রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম অভিযোগ করেন, আমাদের হলে অস্বচ্ছ ব্যালট বক্স নিয়ে ঝামেলা হয়। এরপর আমরা ভোট দান বন্ধ রেখেছিলাম।

রোকেয়া হলে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে টিভি রুমে। সেখানে গণমাধ্যম কর্মীদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। হল গেট থেকে বলা হচ্ছে এখন ভেতরে যাওয়া যাবে না। ভোট দেরিতে শুরু হওয়ায় ছাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী আনিসুল হক অনিক বলেন,‘কী কারণে ভোটগ্রহণ দেরিতে শুরু হয়েছে আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আমরা প্রভোস্ট ম্যাডামকে বলার পর ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দেরি করার যৌক্তির কারণ দেখি না। ব্যালট ব্যাক্স আমাদের সামনে খুলে সিলগালা করা হলেও কোনও বাক্সেই নম্বর নেই। ফলে এ নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি।’

রোকেয়া হল সংসদের ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী ইসরাত জাহান তন্বী বলেন,‘আমাদেরকে বিশ্ববিদ্যলালয় প্রশাসন ৮টার আগে ব্যালট বাক্স খুলে দেখিয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য দল ও প্যানেলের যারা ছিল তারা বিরোধিতা করায় ভোটগ্রহণ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ছেলেদের ১৩ ও মেয়েদের ৫ হলে মোট ভোটার রয়েছে ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৬ হাজার ৯৪৪ যা মোট ভোটারের ৬২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং নারী ১৬ হাজার ৩১২ জন; যা মোট ভোটারের ৩৭ দশমিক ৭১ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৬০৮ জন ভোটার রয়েছে রোকেয়া হলে এবং সবচেয়ে কম ১ হাজার ৩৪৬ জন ভোটার রয়েছে অমর একুশে হলে। এর মধ্যে ছেলেদের বিজয় একাত্তর হলে ৩ হাজার ১৫৫, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ২ হাজার ৫২, ফজলুল হক মুসলিম হলে ২ হাজার ১৭৫, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ১ হাজার ৯৮১, জগন্নাথ হলে ২ হাজার ৪৯৬, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলে ১ হাজার ৭৯৯, কবি জসীমউদ্দীন হলে ১ হাজার ৬৫৮, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২ হাজার ৫৭, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ১ হাজার ৮১৪, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২ হাজার ৩০১, স্যার এ এফ রহমান হলে ১ হাজার ৮৪০, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের ২ হাজার ১৭০ জন। এ ছাড়া মেয়েদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২ হাজার ২৮৮, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে ১ হাজার ৯২৮, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩ হাজার ৭২৪, শামসুন্নাহার হলে ৩ হাজার ৭৬৪ জন ভোটার রয়েছেন।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ছেলেদের হলগুলোর গণরুমের শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোট পেতে পারে ছাত্রলীগ। তবে মেয়েদের হলগুলোতে ছাত্রলীগের একপেশে প্রভাব না থাকায় যেকোনো দিকে যেতে পারে তাদের সমর্থন।


আরো সংবাদ



premium cement