২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩০ ডিসেম্বর ইসির ইমামতিতে গণতন্ত্রের কবর হয়েছে : জাফরুল্লাহ চৌধুরী

জাফরুল্লাহ চৌধুরী - সংগৃহীত

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ইমামতিতে গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি সকল ভেদাভেদ ভুলে রাস্তায় নেমে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলে আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংগ্রাম ছাড়া উপায় নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। আমি সকল দলকে আহবান করছি। সকল দলের ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে একত্রিত হয়ে রাস্তায় নামুন।

আরো পড়ুন : ‘মিডনাইট সরকার’ সকল সীমা লঙ্ঘন করছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৪২

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ক্ষমতাসীন সরকারকে ‘মিডনাইট সরকার’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, মনে হচ্ছে তারা কেয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চায়। ক্ষমতার দম্ভে এই অবৈধ সরকার হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করার পর সরকার এখন কি করবে তা দিশা পাচ্ছেনা। তিনি গতকাল বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চট্টগ্রামে ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’-এর নাম পরিবর্তন ও ঢাকায় ‘জিয়ার সমাধি’ সরিয়ে ফেলতে সরকার ফের ষড়যন্ত্র শুরু করছে।

হিংসাশ্রয়ী সরকার বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ও আবেগের উৎস স্বাধীনতার মহান ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে নিয়ে এখন নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। শেরে বাংলা নগরে জিয়ার মাজার সরিয়ে ফেলার নীলনকশা বাস্তবায়ন শুরু করার পর এবার চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর দখল করতে মাঠে নেমেছে তারা।


গত মঙ্গলবার নামফলক কালি দিয়ে মুছে দিয়েছে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। এটা শুধু নোংরামিই নয়, কাপুরুষতাও। শাসকগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার অর্থই হলো মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে অপমান করা। শহীদ জিয়ার সততা, নিষ্ঠা, গভীর দেশপ্রেম, পরিশ্রমপ্রিয়তা, নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রভৃতি গুণাবলি এ দেশের গণমানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সৈনিক। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের কাছে তার যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল যা অন্য কোনো রাষ্ট্র নায়কের ভাগ্যে তা জোটেনি।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শাহজাহান চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, জোর করে কোনো কিছু চাপিয়ে দিলেও হৃদয়ের ওপর কোনো হুকুম চলে না। জিয়াউর রহমান কেবল কোনো ব্যক্তি নন, তিনি জাতীয়তাবাদী দর্শন ও আর্দশের পিতা। জনগণের প্রেরণার উৎস। তার নাম বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছে। কোনো ষড়যন্ত্র তাঁকে দেশের মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারবে না।


তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, এই আঘাত দেবেন না। এটা নানাভাবে নানা কারণেই প্রত্যাখ্যাত হিসেবে আপনার কাছে ফিরে যাবে। রাষ্ট্রশক্তির হিং¯্র আক্রমণকে প্রতিহত করে আপনাদের কালো হাত ভেঙে দেবে দেশের মানুষ। চলমান অধিকারের যুদ্ধে আপনাদের অনাচারের বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দেবে জনগণ। সময় ঘনিয়ে আসছে।

আপনাদের উন্মক্ততার যবনিকাপাত ঘটতে সময় লাগবে না। গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও কথা বলার স্বাধীনতা মানেই জিয়াউর রহমান। তাকে কালি দিয়ে মুছবেন। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে লেখা নাম তো কালি দিয়ে মুছতে পারবেন না। আপনাদের রাষ্ট্রশক্তি আছে, আপনাদের পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব আছে কিন্তু ওই বন্দুক দিয়ে মানুষের হৃদয়ের সেই নাম কি করে মুছবেন আপনারা? মানুষের অন্তরে জিয়াউর রহমানের যে সুর বাজছে তা কখনোই কোনো দিন মুছে ফেলতে পারবেন না।

রিজভী বলেন, মিডনাইট ভোটে গঠিত অবৈধ সরকার দৈত্যের মতো দেশের জনগণের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে যা ইচ্ছে তাই করছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থককে কারাগারে ভরেছে। কারাগারগুলো ধারণ ক্ষমতার ৪-৫ গুন বেশী বন্দীতে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। হাজার হাজার মামলা। লাখ লাখ আসামী। কোনো বাছ বিচার নেই।

সরকারের সমালোচনা করলেই সে নাশকতার গায়েবী মামলার আসামী। সাধারণ মানুষের এখন নাভিশ্বাস দশা। দেশের গণতান্ত্রিক জনগোষ্ঠীর প্রাণশক্তি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্মম মানসিক ও শারীরিকভাবে যন্ত্রণা দেয়া হচ্ছে অন্ধকার কারাগারে রেখে। গত মঙ্গলবারও তাকে আদালতে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। তার চিকিৎসা না দিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করছে প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার। আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার হীন চক্রান্ত চলছে নানাভাবে।

তিনি বলেন, ভোট ডাকাতি করে আওয়ামী জোট ক্ষমতা দখলের পর তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যাচ্ছে না। বরং তাদের বেপরোয়াভাব সকল সীমা লঙ্ঘন করেছে। তারা একের পর এক নির্লজ্জ বেহায়ার মতো লাগামহীন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত আওয়ামী লীগ কখনোই স্বাধীনতা চায়নি। এই কারণে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতায় একজন মেজর জিয়া যখন হতাশাগ্রস্ত জাতির সামনে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্পর্ধিত বার্তা দেন তখন ওরা হতবাক, ক্ষুব্ধ ও অনুশোচনাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের এই ঐতিহাসিক ব্যর্থতার জন্যই শহীদ জিয়ার ওপর ওরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে, আর সেজন্যই প্রতিহিংসা মেটাতে এখন শহীদ জিয়ার নাম ও তাঁর কবরকেও নিশ্চিহ্ন করার ঘৃন্য কর্মে মেতে উঠেছেন।

রিজভী বলেন, গণমাধ্যমে জানলাম- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করে বাকি জীবনটা কাটাবেন তার পূর্বপুরুষের টুঙ্গিপাড়ার গ্রামে।’

আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো-খুব ভালো খবর। জনগণ সেই মাহেন্দ্র দিনের ক্ষণ গননা শুরু করেছে। কবে আসবে সেই সুখবর যে আপনি রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। আমরা সেই তারিখটা জানতে চাই। কারণ এর আগে ১৯৯৬-২০০১ এ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আপনি ঘোষণা করেছিলেন-৫৭ বছর বয়সে আপনি রাজনীতি থেকে অবসর নিবেন। তাহলে আর কত বছরে ৫৭ বছর বয়স হবে? দেশের জনগণ আজ পর্যন্ত তার কোনো কথার সত্যতা খুঁজে পায়নি। তার কাছে অনুরোধ- অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্তটি দ্রুত কার্যকর করুন।

তাড়াতাড়ি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই মুহুর্তে মুক্তি দিন। দেশের সাধারণ জনগণ ও গনতন্ত্রকে মুক্তি দিন। মানুষের ক্ষোভ ও ধিক্কার থেকে নিজেকে হেফাজত করুন। জনগণের ঘাড়ে জ¦ীনের মতো জবরদস্তি করে চেপে বসবেন না। অনেক হয়েছে। এবার রেহাই দিন। ছাত্রদলে সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় কারাবন্দী রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানান রিজভী।

সরকারের বিচার ব্যবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সরকার দলীয় বিচার ব্যবস্থায় সুবিচার পাবেন না । ওনাকে জনগণের রায়েরর জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং সকলের সম্মিলিত ভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে তিনি মুক্তি পাবেন।

মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক বলেন, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমাদের নির্বাচন কমিশনের ইমামতিতে গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়েছে। গণতন্ত্রের কবর হলে কি হয় দুই মাসের মধ্যে তার চিত্র ফুটে উঠেছে।

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে বিজিবি যার কিছুই করার নাই সে মানুষ হত্যা করেছে, গরুচোরের অপবাদ দিয়ে।
সংগঠনের সভাপতি কে.এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জিনাফ সভাপতি লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement