২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংলাপ নিয়ে নতুন ভাবনা ঐক্যফ্রন্টের!

প্রধানমন্ত্রীর সাথে ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ - সংগৃহীত

বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেয়া নাগরিক সংলাপের উদ্যোগ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের পরে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ভয়ভীতি বেড়ে যাওয়ায় তাদের এই উদ্যোগে সেভাবে সাড়া মিলছে না।

জোটটির সূত্রগুলো বলছেন, তারা এই সংলাপের একটা তারিখও ঠিক করেছিলেন - আগামী ২৮ জানুয়ারি। কিন্তু সেই তারিখে তারা তা করতে পারছেন না।

এর কারণ হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের অনেকে বলেছেন, সংলাপের ব্যাপারে তারা নাগরিক সমাজ বা বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের অনেকের সাথে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন - কিন্তু সেরকম 'সাড়া পাননি।'

তারা বলছেন, নির্বাচনের পরে তাদের ভাষায় 'দেশে ভয়ের সংস্কৃতি বা ভীতি বেড়ে যাওয়ায়' ভিন্ন রকম এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সে কারণেই তাদের এই উদ্যোগ একটা অনিশ্চয়তায় পড়েছে বলে উল্লেখ করছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের মুল দল বিএনপিতেও এই সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

অন্যদিকে এই সংলাপের ফলাফল কী হবে, তা নিয়েও বিশ্লেষকদের অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

এই জোট টিকবে কিনা, তারা এখন কিভাবে এগুবে - এমন অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় জোটের নেতৃত্বকে। নেতাদেরও অনেকের মাঝে একটা হতাশা তৈরি হয়।

সেই প্রেক্ষাপটে সপ্তাহ খানেক আগে জোটের নেতাদের এক বৈঠকের পর এর নেতা ড: কামাল হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের পক্ষ থেকে একটা 'নাগরিক বা জাতীয় সংলাপ' করার সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন।

ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের অনেকে এই উদ্যোগকে তাদের জোটের অবস্থান ধরে রাখার জন্য একটি কৌশল বলে বর্ননা করেছেন। তবে ড: কামাল হোসেন বলছেন, সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংলাপ করেই তারা তাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে চান।

তিনি বলছেন, "যেটা হয়েছে ৩০ তারিখে, সেটাকে তো ইলেকশন বলা যায় না। জিনিসটা নিয়েতো আমাদের কাজ করে যেতে হবে, যেসব ঘাটতি আছে, সেটা পূরণ করার জন্য। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য আইনে বা সরকারের কার্যকলাপে যে সব ঘাটতি আছে, সেগুলোকে চিহ্নিত করে তার সমাধান করতে হবে। না হলে এগুলো বিতর্কিত থাকছে এবং আশা করা যায় একটা স্থিতিশীলতা আসবে তাতো আসবে না।"

ঐক্যফ্রন্টের মুল শরিক দল বিএনপিতেও এই সংলাপের ব্যাপারে ভিন্নমত রয়েছে বলে মনে হয়েছে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম একজন নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, তারা সংলাপ করার প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

"এটা ঐক্যফ্রন্টে আনুষ্ঠানিকভাবেই আলোচনা হয়েছে এবং সিদ্ধান্তও হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই বৈঠকে প্রতিনিধি ছিলেন। এটা আমরা করার চেষ্টায় আছি। প্রস্তুতির কাজটা চলছে। চূড়ান্তভাবে এখনই বলতে পারছি না, এটা আসলে কি রূপ নেবে " - বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

নির্বাচন নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক না কেন, এই ভোটে ভরাডুবির পর বিএনপির দলীয় কার্যক্রমও যেন থমকে গেছে।

এমনকি জোটের বৈঠকগুলোতেও দলটির সিনিয়র নেতারা অংশ নিচ্ছেন না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন এবং মওদুদ আহমেদ তাদের দলের পক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে প্রতিনিধিত্ব করতেন।

কিন্তু নির্বাচনের পরে ঐক্যফ্রন্টের যে চারটি বৈঠক হয়েছে, সেসব বৈঠকে আলমগীর ছাড়া বাকি দু'জন নেতা অংশ নেননি।

এখন ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের উদ্যোগ নিয়েও বিএনপির এই নেতাদের কেউই আনুষ্ঠানিভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে বিএনপির আরো কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, এই সংলাপের উদ্দেশ্য তাদের অনেকের কাছে পরিস্কার নয়।

অনেকে এমন সংলাপের পক্ষে নন। তা ছাড়া ড: কামাল হোসেন আবারও বিএনপির সাথে জামায়াতের ঐক্যের ব্যাপারে তাদের আপত্তিকে সামনে এনেছেন। এ নিয়েও বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, মুল প্রশ্নটা আসবে সংলাপের ফলাফল নিয়ে।

"সত্যিকথা বলতে কি ঐক্যফ্রন্টের যে সংলাপের প্রস্তাব, এটা কিসের জন্য যে তারা করছে, এটা কার্যকারিতা কী, এটাইতো আমার পক্ষে একটু বোঝার অসুবিধা হচ্ছে। তারা কী তুলে ধরতে চায় নাগরিক সমাজ বা অন্য পার্টিগুলোর কাছে?

"যে নির্বাচনটা বিতর্কিত, সেটাতো সবাই জানে। নতুন করে তারা কি তুলে ধরতে চায়? এটা তো বোধগম্য হলো না। এখন যারা ইলেকশনে যে করেই হোক জিতে গেছে, তারা সরকার গঠন করে ফেলেছে। এখন কিসের ভিত্তিতে ঐক্যফ্রন্ট সংলাপটা করবে, এর ফলাফলটা কি হবে? নতুন করে কেউ কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে, আমার মনে হয় না" - বলেন দিলারা চৌধুরী।

এরপরও বিএনপি ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের অন্য দলগুলো তাদের জোটের সমমনা পেশাজীবী প্র্রতিনিধি এবং দলগুলোকে নিয়ে এই সংলাপ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলছেন।

বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে একটি বৈঠক হতে পারে বলেও জোটের নেতারা আভাস দিচ্ছেন।

কিন্তু তার ফলাফল কী হবে - এ নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement