২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগে বিভ্রান্তি

- ফাইল ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবারো সংলাপের আয়োজন নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। এটি সংলাপ নাকি শুধুমাত্র শুভেচ্ছা বিনিময় হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরাও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন।

কেউ বলছেন, নির্বাচনের আগের মতোই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। আবার কেউ বলছেন, আসলে এটি সংলাপ নয়। বর্তমানে সংলাপের কোনো ইস্যুও নেই। তাই এটি হবে নির্বাচন-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়। কেউ আবার বলছেন, এটি শুভেচ্ছা বিনিময় হলেও সেখানে রাজনৈতিক কিছু কথাবার্তা আসতেই পারে।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত জাতীয় নির্বাচনের পর হঠাৎ করেই আলোচনায় আসে সংলাপ ইস্যুটি। বিশেষ করে গত শনিবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের পরই এ বিষয়ে গুঞ্জন শুরু হয়।

ওই বৈঠকের পর দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের আগের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপে বসবেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ আগের সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোই আবার এ সংলাপে আমন্ত্রণ পাবেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে সংলাপ ইস্যুটি বেশ আলোচিত হয়।

পরদিন সোমবার সকালে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেন, ‘সংলাপের এজেন্ডা কী সেটা আগে জানাতে হবে। আর আলোচনা হতে হবে নির্বাচন ইস্যুতে।’

এর ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে বলেন, ‘সংলাপ নয়, শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ পাবে নির্বাচনের আগে সংলাপে অংশ নেয়া দলগুলো। এর পরই বিষয়টি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে ওবায়দুল কাদের নিজের অবস্থানে অটল থেকে গতকাল আবারো বললেন, বর্তমানে সংলাপের কোনো ইস্যু নেই। সংলাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাদের বলেন, ‘সংলাপ’ শব্দটি এলো কোথা থেকে? সংলাপ নিয়ে আমরা তো কিছু বলিনি! সংলাপের আবিষ্কারের জন্য মিডিয়াকেও দুষলেন তিনি।

এ দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের মধ্যেই সংলাপ নিয়ে নতুন করে আবারো বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো- চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের বক্তব্যে।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে আবার নিয়োগ পাওয়ার পর গতকাল সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান প্রধানমন্ত্রীর ৫ উপদেষ্টা। সেখানে সাংবাদিকদের এইচ টি ইমাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো সবার। তাকে অবশ্যই সবাই মেনে নেবে এবং সহযোগিতা করবে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আবার একটি সংলাপ করবেন। আগের সংলাপে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তাদেরকে তিনি আমন্ত্রণ করবেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বলে যে কথাটি বলা হচ্ছে, তা অত্যন্ত অবাস্তব এবং হাস্যকর।’

ঐক্যফ্রন্টকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচন বাস্তবে সম্ভব নয়। এখন বাস্তবতা মেনে নিয়ে সবাই সহায়তা করেন। আমাদের দিক থেকে আমরা পাঁচজন উপদেষ্টা, সরকারের মন্ত্রিপরিষদে যারা আছেন তারা সবাই সবার সহায়তা চাই। প্রধানমন্ত্রী বললে, আমরা অন্যদের সাথে (বিরোধী রাজনৈতিক দল) কথাও বলব। আপনারা (ঐক্যফ্রন্ট) আসুন বাংলাদেশ তো সবার, দেশকে গড়ে তুলি।’

অন্য দিকে একই দিন দুপুরে ধানমন্ডি ২৭ এ হোয়াইট হল কনথভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংলাপ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শনিবার আওয়ামী লীগের যৌথসভায় সংলাপ শব্দটিই উচ্চারণ করেননি!’
সংলাপের প্রসঙ্গটি অবতারণার জন্য সাংবাদিকদের ‘মনগড়া খবর’কে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংলাপ নিয়ে আমরা তো কিছু বলিনি। কেউ যদি মনগড়া খবর পরিবেশন করেন তাহলে কিছু করার নেই। আমি যে বক্তব্য রেখেছি তার অডিও ভিডিও ক্লিপ রয়েছে, সেখানে সংলাপের কোনো বিষয় নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট, বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী জোট সব মিলিয়ে মোট ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ করেছিলেন সেই দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমাদের নেত্রী আবারো গণভবনে আমন্ত্রণ জানাতে চান, শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য।

নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী একবারও সংলাপের কথা বলেননি। আমি বলেছি, তিনি আমন্ত্রণ জানাবেন। আমি তো সংলাপের কথা বলিনি! কাজেই এ শব্দটি কোথা থেকে এলো আমি জানি না।’

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি জোটসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলনের রাস্তা ছেড়ে নির্বাচনমুখী করতেই সংলাপ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিরোধী জোট নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করলেও এ মুহূর্তে দেশে কোনো অস্থিরতা নেই। বিরোধী জোটের কোনো আন্দোলন কর্মসূচিও নেই।

একটি জাতীয় নির্বাচনের পর এত শান্ত অবস্থা সাম্প্রতিককালে চিন্তাও করা যায়নি। সে জন্য রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের কোনো কারণও ছিল না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আবারো সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা এটিকে আমলে নেননি। সংলাপের দাবিকে ‘মামা বাড়ির আবদার’ বলে চরম অবজ্ঞা করা হয়। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারকদের চমক লাগিয়ে সংলাপের ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এটি সংলাপ নাকি শুভেচ্ছা বিনিময় তা নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারাই বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আসলে এটি নির্বাচন পরবর্তী একটি আয়োজন। সেখানে শুভেচ্ছা বিনিময় ও আপ্যায়ন থাকবে। আর রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হলে সেখানে অনেক বিষয়েই কথাবার্তা হতে পারে। এটি নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই।’


আরো সংবাদ



premium cement
গোবিন্দগঞ্জে ট্রাক্টরচাপায় নারী নিহত অভিযোগ করার পর ইনসুলিন ইঞ্জেকশন কেজরিওয়ালকে! হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা তালায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩টি পরিবারের মাঝে জামায়াতের সহায়তা প্রদান শেরপুরের মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ বেনজীরের সম্পদ নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চাইলেন হাইকোর্ট আবারো বৃষ্টির শঙ্কা দুবাইয়ে, চিন্তা বাড়াচ্ছে ইউরোপ সিদ্ধিরগঞ্জে চোর আখ্যা দিয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা মানিকগঞ্জে অটোরিকশা-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে প্রকৌশলী নিহত ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী ছিলেন সমাজ বিপ্লবী পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে একটি সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে : মন্ত্রী

সকল