২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আবারও রাজনৈতিক সংলাপ!

প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা - ফাইল ছবি

আবারো রাজনৈতিক সংলাপ! নির্বাচনোত্তর সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ফের সংলাপে বসতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বার্তা এমন এক সময়ে এলো যখন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত বিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নতুন নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় সংলাপসহ বেশ কিছু কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপিসহ কয়েকটি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল নিয়ে গত বছর ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ছিল তাদের ওই সাত দফার মধ্যে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ইসির প্রস্তুতির মধ্যেই ওই সাত দফা দাবিতে সংলাপের আহ্বান জানানো হয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের সাথে গণভবনে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর একে একে বিভিন্ন দল ও জোটের সাথে সংলাপ করেন সরকারপ্রধান। সাত দফার একটি দাবি পূরণ না হলেও ‘আন্দোলনের অংশ হিসাবে’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এরপর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

অন্য দিকে মাত্র ৮টি আসন পাওয়া ঐক্যফ্রন্ট শপথ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায়। আর কামাল হোসেন জোটের পক্ষ থেকে জাতীয় সংলাপ করার ঘোষণা দেন। ঐক্যফ্রন্টের ওই কর্মসূচিকে দুই দিন আগে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনিই গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চার জেলার নেতাদের সাথে এক বৈঠকের আগে পুনরায় সংলাপের বার্তা দেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আবারো সংলাপের আহ্বান জানালেও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এ মুহূর্তে কোনো ধরনের সংলাপের চিন্তাই করেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে জন্য সংলাপের আহ্বানকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ দলের সিনিয়র নেতারা। তবে শনিবার দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের পর সেই অবস্থান পাল্টে যায়।

ওই বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচনের আগের মতো আবারো সংলাপের আগ্রহ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সংলাপ কবে হতে পারে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ হয়েছিল, তাদের আবার আমন্ত্রণ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সাথে গণভবনে সংলাপ হয়েছিল। এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে। আমাদের নেত্রী আমাদের সাথে ওয়ার্কিং কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকে বলেছেন, যাদের সাথে সংলাপ হয়েছে, তাদের আমন্ত্রণ জানাবেন।

সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কিছু মতবিনিময় করবেন এবং এতে নেতাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। এ ব্যাপারে আমরাও সবাই একমত, যারা সংলাপে এসেছিলেন তাদের আবারো নেত্রী সংলাপে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। একসাথে সবাইকে দাওয়াত দেয়া হবে। সেটা শিগগিরই জানিয়ে দেয়া হবে।’

এ সময় তিনি আরো বলেন, সব রাজনৈতিক দল গণভবনে আমন্ত্রিত। ঐক্যফ্রন্ট আছে, যুক্তফ্রন্ট আছে, ১৪ দল আছে, জাতীয় পার্টি আছে, অন্যান্য যেসব দল আছে, সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যাদের সাথে সংলাপ করেছিলেন, তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি জোটসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দোলনের রাস্তা ছেড়ে নির্বাচনমুখী করতেই আগে সংলাপ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর ফলে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিরোধী জোট নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করলেও এ মুহূর্তে দেশে কোনো অস্থিরতা দৃশ্যত নেই।

বিরোধী জোটের কোনো আন্দোলন কর্মসূচিও নেই। বলা হচ্ছে একটি জাতীয় নির্বাচনের পর এত শান্ত অবস্থা সাম্প্রতিককালে চিন্তাও করা যায়নি। সে জন্য রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের কোনো কারণও ছিল না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আবারো সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা এটিকে কোনো রকম আমলে নেননি। সংলাপের দাবিকে ‘মামা বাড়ির আবদার’ বলে চরম অবজ্ঞা করা হয়। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারকদের তাক লাগিয়ে দিয়ে সংলাপের ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দু’জন নেতা আলাপকালে বলেন, এতগুলো দল নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নির্বাচন এবার বেশ অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। বিশেষ করে বিরোধী দলগুলোর সহযোগিতার কারণে এবার নির্বাচনে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে এবারের নির্বাচন। সে জন্য এ সংলাপের মাধ্যমে মূলত প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাবেন। এ ছাড়া তাদের সংসদে যোগ দেয়ারও আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। গুটি কয়েক আসন হলেও সংসদে তাদের গুরুত্ব দেয়ারও আশ্বাস দেবেন তিনি। দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেজন্য সরকার পরিচালনায় সব দলের সহযোগিতাই চাইবেন তিনি।

একজন নেতা বলেন, এটি আসলে এক রকম নির্বাচন পরবর্তী ‘আপ্যায়ন’। নির্বাচনে এত বড় বিজয়ের পর রাজনৈতিক দলগুলোকে আপ্যায়িত করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। এর বাইরে তেমন বড় কিছু না।

ঐক্যফ্রন্ট পুনর্নির্বাচন বা অন্তর্বর্তী নির্বাচনের দাবি জানালে তা মেনে নেয়া হবে কি না এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, মেয়াদ শেষের আগে আর কোনো নির্বাচনের সুযোগ নেই। এ রকম দাবি জানিয়ে কোনো লাভ হবে না। তবে সংলাপে বিএনপি জোট নির্বাচনে অনিয়ম বা কারচুপির অভিযোগ তুললে তা খণ্ডন করে পাল্টা জবাবও দেয়া হবে।

নির্বাচনের আগে সংলাপ ব্যর্থ হওয়ায় নতুন করে সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট বসবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানোর পর জাতীয় সংলাপের কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে ফ্রন্ট সাড়া দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নয়া দিগন্তকে বলেছেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ঐক্যফ্রন্টের এক নেতা আলাপকালে বলেছেন, সংলাপ করে কিছু হবে না এটা সত্য। তবে যেহেতু নতুন নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় সংলাপের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে তার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তারা বসতেও পারেন। ওই নেতা জানান, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের অনিয়মের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে নতুন নির্বাচনের দাবিতে জনমত সৃষ্টির জন্য সুশীল সমাজসহ সব শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের সাথেই জাতীয় সংলাপ হবে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা অবশ্য বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিএনপি সংলাপে বসলে, নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা আরে বেড়ে যায়। অন্যের রাজনৈতিক টোপে না পড়ে বিএনপির এখন উচিত নিজেদের রাজনীতি করা।

 

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement