১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

 বিএনপিতে নেতা নির্বাচনে পরিবর্তন আসছে

-

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ফলাফলের পর দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দিচ্ছে বিএনপি। দলের সিনিয়র একাধিক নেতা বলেছেন, পেছনের দরজা দিয়ে নয়, এবার ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব। রাজপথের কর্মসূচিতে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়া প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকেও ঢেলে সাজানো হবে।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি অনেকটাই দিশেহারা। তৃণমল পর্যায়েও বিরাজ করছে হতাশা। এ অবস্থা থেকে সংগঠনকে বের করে আনতে হাইকমান্ড শিগগিরই নানামুখী উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। কোন পথে দলকে এগিয়ে নেয়া যায় তা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চলছে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘কারো কান কথা না শুনে’ দলকে সুসংগঠিত করে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। গত রাতে গুলশান কার্যালয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

বিএনপি সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে বিএনপি হাইকমান্ড দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মামলা ও গ্রেফতার থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীদের নিজ নিজ আসনে নেতাকর্মীদের সার্বিক খতিয়ান সংগ্রহ করে কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে। একই সাথে মামলা পরিচালনা ও জামিনের ব্যবস্থার জন্য আর্থিক ও আইনগত সহায়তা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, ‘সাংগঠনিকভাবেও বিএনপির যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। নির্বাচনের আগে ছাত্রদলের কমিটি হওয়া জরুরি ছিল। যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে। স্বেচ্ছাসেবক দলেরও একই অবস্থা। কৃষক দল ও শ্রমিক দলের বেহাল অবস্থা। এসব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন দ্রুত পুনর্গঠন করতে হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিএনপির কেন্দ্রেও প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন আনতে হবে।’ জানা গেছে, কৃষক দল ও শ্রমিক দলের নতুন কমিটি দিয়ে দল গোছানোর নতুন যাত্রা শিগগিরই শুরু হবে।

বিএনপির পরামর্শক ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনে অনিয়মের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে বিএনপির আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। বিএনপির সামনে আরেকটি বড় কাজ আছে। তা হলো, শিগগিরই দলের কাউন্সিল করা উচিত। দলকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। এ জন্য নির্বাচিত স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করতে হবে। সব কমিটিই করতে হবে নির্বাচিতদের নিয়ে, মনোনীতদের নিয়ে নয়।

এদিকে নির্বাচনে জালিয়াতি, কারচুপিসহ নানা অভিযোগ এনে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির প্রার্থীরা। মামলা করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রায় গুছিয়ে আনা হয়েছে। পুরো প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই চলতি সপ্তাহের অথবা আগামী সপ্তাহের মধ্যে যেকোনো দিন এই মামলা করা হতে পারে। নিয়মানুযায়ী নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যেকোনো প্রার্থী মামলা করতে পারেন।

জানা গেছে, অনিয়মের সব ধরনের দালিলিক প্রমাণ হাতে পাওয়ার পরেই ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের পরপরই এই মামলা করার চাপ থাকলেও সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন না করে মামলায় যেতে চাননি ফ্রন্ট নেতারা। বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেত, প্রার্থী, সিনিয়র আইনজীবী এবং বিভিন্ন ঘরানার নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

মামলা করার জন্য সব প্রার্থীর কাছে অনিয়মের সব ধরনের দালিলিক প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অনেক প্রার্থী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জমা দিয়েছেন। নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি, এজেন্ট ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ও নিহতদের তালিকা, প্রতিটি কেন্দ্রের অস্বাভাবিক ভোটের হিসাবসহ ৮টি বিষয়ে তথ্য-প্রমাণসহকারে প্রতিবেদন দিয়েছেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া নির্বাচনপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ফল প্রকাশ পর্যন্ত কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পরতে হয়েছে, এর একটি ভিডিও বার্তাও চাওয়া হয়েছে প্রার্থীদের কাছ থেকে। এরই মধ্যে অনেক প্রার্থী তাদের ভিডিও বক্তব্য জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে ভোটের দিন ব্যালট পেপারে সিল মারাসহ ভোট কারচুপির ভিডিও ফুটেজও অনেক প্রার্থী প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন।

ঐকফ্রন্টের এক নেতা জানান, মামলার প্রয়োজনে নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের সঠিক অনুলিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে চাওয়া হয়েছে। এটি হাতে পেলে মামলার কাজে সহায়তা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত যেসব প্রার্থী নির্বাচনের ফল নিজেদের পক্ষে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়েছেন সেসব প্রার্র্থীর বক্তব্য ও তাদের তথ্য-উপাত্তকে সামনে রেখেই মামলার সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

কবে নাগাদ মামলা হচ্ছে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু বলেন, তারা শিগগিরই মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জানা গেছে, নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে দেশী ও আন্তর্জাতিক জনমত নিজেদের পক্ষে আনার কাজ করছে ঐক্যফ্রন্ট। এর পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনের কাছেও নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থার সাথে নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে মতবিনিময় করেছে বিএনপি।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বহুদিন ধরে কাজ করে আসা বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা মনে করে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিফলিত হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement