২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত চায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

ভোটগ্রহণের আগে সকালে চট্টগামের একটি কেন্দ্রে ব্যালটবাক্স পূর্ণ দেখা যায় - সংগৃহীত

বাংলাদেশের নির্বাচনে অনিয়মের নানা ধরণের অভিযোগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর হামলা, ভোটারদের ভয় দেখানো, ভোট জালিয়াতি এবং নির্বাচনের আগে ও পরে নির্বাচন কমিশনের একপক্ষীয় আচরণের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন বলেও বিবৃতি প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

নির্বাচন কমিশন ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচনকে 'অবাধ ও নিরপেক্ষ' বলে ঘোষণা করলেও বিরোধী দল এই নির্বাচনকে 'প্রহসন' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলে পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন,‘নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়টা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের কারণে বিতর্কিত ছিল।’

পাশাপাশি আগে থেকে ব্যালটে সিল মেরে রাখা, ভোটাদের ভয় দেখানো, ভোটগ্রহণের দিনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন কমিশন গঠন করার বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে, ভোটগ্রহণের দিন দেশের অন্তত ২২১টি আসনে বিএনপি'র পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি।

তবে এইসব অনিয়মের অভিযোগকে 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' বলে উল্লেখ করে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

পুলিশ মহাপরিদর্শক জাভেদ পাটোয়ারী নির্বাচনকালীন পরিবেশ 'শান্তিপূর্ণ' ছিল বলে মন্তব্য করেছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার বদলে সাংবাদিকদের আটক করছে বাংলাদেশের পুলিশ। ভোটের খবরকে কেন্দ্র করে খুলনার সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন মোল্লার আটক হওয়ার ঘটনাটি বিবৃতিতে তুলে ধরেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

আরেকজন সাংবাদিক রাশিদুল ইসলামকেও ঐ মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে আসামী দেখানো হয়। অনেক সাংবাদিকদের ভোটে অনিয়মের ছবি তোলা বা ভিডিও করার ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে বলা হয় বিবৃতিতে।

দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার একজন সাংবাদিক কাফি কামাল ভোটারদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হামলার ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গেলে সহিংসতার শিকার হন বলে জানান হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে।

এবারের নির্বাচনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং বিদেশী সাংবাদিকদের বাংলাদেশে প্রবেশের প্রক্রিয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ছিল বলে উঠে আসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে।

যে কারণে অনেক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলেও নানা বাধ্যবাধকতার কারণে সময়মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেননি।

নির্বাচনকালীন সময়ে অনিয়মের সকল অভিযোগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে তদন্ত করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বৃটিশ হাই-কমিশন ও মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতির অংশবিশেষও তুলে ধরা হয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে।

ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন,‘আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, জাতিসঙ্ঘ ও বাংলাদেশের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোর মনে রাখা প্রয়োজন যে নির্বাচন ভোটারদের অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্র, ক্ষমতাসীনদের নয়।’

মি. অ্যাডামস মন্তব্য করেন,‘যে দেশে মানুষের রাজনৈতিক মতামতের ক্ষেত্রে বিভাজন স্পষ্ট, সেরকম একটি দেশে একটি দল ৯৬ শতাংশ আসনে জয়লাভ করলে ঐ নির্বাচন সম্পর্কে অবিলম্বে প্রশ্ন তোলা উচিত।’


আরো সংবাদ



premium cement