২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তফসিলের পর ১০ হাজার ৩২৯ নেতাকর্মী আটক : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী - ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির ১০ হাজার ৩২৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শুধু চর নয়, নির্বাচনে নদীসহ চর দখল করবে বলেই জাতীয়তাবাদী শক্তির অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বর্তমান শাসকগোষ্ঠী শুরু করে প্রায় অনেক দিন থেকেই। সেইজন্য বানোয়াট মামলা সাজিয়ে নির্বাচনের প্রায় বছর খানেক আগেই সাজা দিয়ে দেশনেত্রীকে বন্দী করা হয়েছে। কারণ রাষ্ট্রশক্তি সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয়। প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আদালত কারো টু শব্দ করার উপায় নেই। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে দেশ থেকে তাড়ানো হয়েছে। এরপর শেখ হাসিনা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন। তিনি যা চান তার বাইরে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। ন্যায়বিচার থাকলে বেগম জিয়া খালাস পেতেন। আসন্ন নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিাতিতে যে ঢেউ উঠতো সেটিকে বাধা দেয়ার জন্য সরকার তাকে আটকে রেখেছে।

তিনি বলেন, গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর হতে গতকাল ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৩২৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। দায়েরকৃত গায়েবি ও মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৮৪৪টি। এসময় বিএনপি ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হওয়া মোট হামলার সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৬। এসব হামলায় আহতের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৫২ জন এবং নিহতের সংখ্যা ৯ জন।

তিনি বলেন, কেবল বৃহস্পতিবারই বিভিন্ন জেলায় বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে ৩৮টি, আটক করা হয়েছে ১ হাজার ১২৭ জন নেতাকর্মীকে, হত্যা করা হয়েছে ১ জনকে।

রিজভী বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই- বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা করেছে কে? বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আঘাত করে রক্তাক্ত করেছে কে? ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রোমানা মাহমুদকে গুলি করেছে কে? হাবিবুর রহমান হাবিবকে হত্যা করার জন্য ছুরিকাঘাত করেছে কে? মির্জা আব্বাসের মিছিলে, আফরোজা আব্বাসের মিছিলে, ড. মঈন খানের মিছিলে, মওদুদ আহমদের মিছিলে, মেজর হাফিজ, হাসিনা আহমেদের মিছিলে হামলা করেছে কে? শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর ওপর হামলা চালিয়েছে কে? হাফিজ ইব্রাহিমের ওপর হামলা করেছে কে? ধানের শীষের নবীন প্রার্থী ডাঃ সানসিলা প্রিয়াংকার ওপর হামলা চালিয়েছে কে? তেমনিভাবে সারাদেশে ধানের শীষের শতাধিক প্রার্থীর ওপর রক্তাক্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে? এখনো বিভিন্নস্থানে ধানের শীষের প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ আছেন। যারা এসব সহিংস অপকর্মে লিপ্ত তাদেরকে কি শান্তির বার্তাবাহক বলতে হবে?

তিনি বলেন, ঢাকা-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের বাসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী ক্যাডাররা ঘিরে রেখেছে। অথচ নৌকা মার্কার প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা গণমিছিল করেছেন। চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক ও ধানের শীষের প্রার্থী শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ। গতরাত ৩টায় তার বাসায় র‌্যাব ঢুকে সবকিছু তছনছ করেছে। গতরাত দেড়টায় বরিশালের গৌরনদীতে ধানের শীষের প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনকে প্রার্থীর নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, জেলায় জেলায় বেপরোয়া আটক অভিযানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া করা হচ্ছে। আর দাবি করা হচ্ছে- বিএনপি নাশকতা করছে। নাশকতাকারীদের ট্রেনিং সেন্টার তো আওয়ামী লীগেই বিদ্যমান। সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য আওয়ামী লীগ ও সরকার।

এছাড়া প্রচারণার শেষ দিনে ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা মামলার ঘটনা তুলে ধরে রিজভী বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা, বরিশাল-১, সিলেট জেলা, লক্ষীপুর জেলা, ফেনী-২, ঢাকা, কক্সবাজার-৪, গাজীপুর-২, বগুড়া-৬, মৌলভীবাজার-৪, হবিগঞ্জ-৩, ঢাকা-৬, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী জেলা, বগুড়া জেলা, চাঁদপুর-২, পাবনা-৩, কুড়িগ্রাম-২, জয়পুরহাট-২, সিরাজগঞ্জ-৩, ময়মনসিংহ-৫, ময়মনসিংহ-৯, ময়মনসিংহ-১০, নেত্রকোণা-৩, ফরিদপুর-১, কুমিল্লা-৮, চাঁদপুর-৪, দিনাজপুর-৬, পটুয়াখালী-১, চট্টগ্রাম-৩, নওগাঁ-২, সিলেট-৪, কুষ্টিয়া-৪ আসনে নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং আটক করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ধানের শীষের প্রার্থী, বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ এবং আটককৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন রিজভী।


আরো সংবাদ



premium cement