২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচনী প্রচারের যে কৌশল ঠিক করলো আওয়ামী লীগ

নির্বাচনী প্রচারের যে কৌশল ঠিক করলো আওয়ামী লীগ - সংগৃহীত

সকাল আটটার একটু পরে গণভবন থেকে যে গাড়িবহরটি বেরিয়ে এলো, তাতে ছিল একটি সিলভার রঙের মার্সিডিজ গাড়ি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত গাড়ি। ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল এই গাড়িটিও। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর সময় বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গাড়িটিই বেছে নিলেন।

‘নির্বাচনী প্রচারণায় যাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সুযোগ-সুবিধা তিনি ব্যবহার না করেন, সেটা নিয়ে আমরা সতর্ক’, বলছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম।

‘নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে কোনভাবেই লংঘন না হয়, এ নিয়ে আমরা সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি। এ কারণে আজ নেত্রী যখন টুঙ্গিপাড়া সফরে গেছেন, তিনি কিন্তু ব্যক্তিগত এবং দলীয় গাড়িবহর নিয়ে গেছেন। এটি কিন্তু সরকারি সফর নয়। দলীয় সফর। এখানে সরকারী কিছু থাকবে না।’

আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করেছেন টুঙ্গিপাড়া থেকে। তার সাথে আছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। আছেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা, আর দুজন চিত্র তারকা রিয়াজ এবং ফেরদৌস।

টুঙ্গিপাড়ায় নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁদের গাড়িবহর গেছে কোটালিপাড়ায়। সেখানে প্রথম নির্বাচনী সভা করেছেন তিনি।

টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় থাকার জন্য এবারের নির্বাচনী লড়াইটা খুব সহজ হবে না, সেটা স্বীকার করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাও।

এইচ টি ইমামের ভাষায়, ‘আমরা জানি, ইনকামবেন্সির একটা ব্যাপার আছে। একটা সরকার এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকলেই তার দ্বিতীয় মেয়াদে অসুবিধা হয়। আর আমরা তো চাইছি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সুযোগ। কাজেই আমাদের জন্য কাজটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং। তারপর এবার তো সব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কাজেই এবার চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়।’

সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই দলের নির্বাচনী কৌশল ঢেলে সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ। তৈরি হয়ে গেছে নির্বাচনী ইশতেহার। দলের প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দেবেন শেখ হাসিনা। আর মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি অনলাইন আর সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করা হবে।

আওয়ামী লীগের এই পুরো নির্বাচনী কৌশল আর প্রচারাভিযানের মূল সমন্বয়কারীর দায়িত্বে আছেন এইচ টি ইমাম। তিনি এর আগের নির্বাচনগুলোতেও এই দায়িত্ব পালন করেছেন।। বিবিসি নিউজ বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিস্টার ইমাম তাদের নির্বাচনী কৌশল, ইশতেহার, প্রচারাভিযান ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

কী থাকছে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে
আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করবে ১৮ই ডিসেম্বর। এইচ টি ইমাম জানালেন, ইশতেহার মোটামুটি ঠিক হয়েছে গেছে, এখন কেবল প্রকাশের অপেক্ষা।

‘মূল ইশতেহার লেখা শেষ। আমাদের নেত্রী নিজে সম্পূর্ণটা দেখে দিয়েছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে বিভিন্ন কমিটি এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন। যেমন নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে আলাদা আলাদা গ্রুপ কাজ করেছে।’

কী আছে এই ইশতেহারে, তার কিছু ইঙ্গিত তিনি দিলেন।

‘আমরা তো এর আগের নির্বাচনগুলোর ইশতেহারে বলেছিলাম রূপকল্প ২০২১ এর কথা। আর এবার আমরা বলছি ২০৪১ সালে আমরা বাংলাদেশকে এমন এক পর্যায়ে দেখতে চাই, যেখানে আমরা আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত, এবং অন্য সকলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি।’

নতুন ভোটার এবং তরুণদের আকর্ষণের জন্য ইশতেহারে অনেক কর্মসূচী থাকবে। জোর দেয়া হবে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেয়া বিশেষ মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে।

‘ইশতেহারে গ্রাম-শহরের ব্যবধান কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে। কৃষিতে জোর দেয়া হবে পুষ্টির ওপর।’

কীভাবে প্রচারণা চালানো হবে
এইচ টি ইমাম জানালেন, এই প্রথম কোন জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

‘আমরা অনেকভাবেই আমাদের প্রচার চালাবো। এখন তো প্রচার মাধ্যম অনেক বদলে গেছে। বাংলাদেশে এখন টেলিভিশন চ্যানেলই অজস্র। টেলিভিশন তো থাকবেই। তারপর আছে প্রিন্ট মিডিয়া। বাংলাদেশে সাড়ে আট কোটির মতো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবো। ফেসবুক, ইউটিউব এবং অন্যান্য যা অ্যাপস আছে, তার মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচারণা চলছে। ভালো মন্দ উভয় দিকেই। আমরাও চেষ্টা করছি এগুলো ব্যবহার করার।’

বিশ্বের অন্যান্য দেশে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে যেভাবে নির্বাচনী প্রচার চালানো হয়, আওয়ামী লীগ এবার ব্যাপকভাবে তার ব্যবহার করবে বলে জানান তিনি।

‘এটা তো আমরা ব্যাপকভাবে করবো। ক্যাম্পেইনের প্রচুর মেটেরিয়েল তৈরি হয়ে গেছে। আমরা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে পয়সা দিয়ে, বিজ্ঞাপন দিয়ে, যেভাবে করে, আমরা তাই করবো।’

তিনি জানান আওয়ামী লীগ তাদের প্রচারণায় দুটি বিষয়কে বেশি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। একটি হচ্ছে দলের নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং জনপ্রিয়তা। অন্যটি হচ্ছে গত এক দশকে বাংলাদেশের যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সেটি।

তবে বিগত নির্বাচনগুলোতে শেখ হাসিনাকে যেভাবে দেশজুড়ে জেলায় জেলায় গিয়ে নির্বাচনী জনসভা এবং পথসভায় অংশ নিতে দেখা গেছে, সেটি এবার হচ্ছে না, জানালেন মিস্টার ইমাম। কেবল নির্ধারিত কিছু কর্মসূচীতেই তিনি অংশ নেবেন।

‘এবার অত ব্যাপকভাবে তিনি জনসভা করবেন না। সম্ভব না। সময় অত্যন্ত কম। এই সময়ের মধ্যে উনি অতটা কভার করতে পারবেন না। যে সমস্ত জায়গায় যাওয়া খুব প্রয়োজন, উনি সেগুলোতে যাবেন। বাকীগুলো উনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারবেন। ২০০৮ সালেও এটা আমরা শুরু করেছিলাম। এভাবে উনি বিভিন্ন জায়গায় সংযুক্ত হয়ে বক্তৃতা দেবেন, মতবিনিময় করবেন।’


আরো সংবাদ



premium cement