২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রাখাইনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনবিরোধী বিক্ষোভ

রোববার রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী বিক্ষোভ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা - সংগৃহীত

নির্যাতন ও জীবন রক্ষার তাগিদে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর পুণরায় মিয়ানমারে নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে রাখাইনে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের হাতে নৃশংস নির্যাতন ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের মুখে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাকে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ‘পলাতক উদ্বাস্তু’ হিসেবে বর্ণনা করেছে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিরোধী এই বিক্ষোভের খবর দিয়েছে মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইন।

গতকাল রোববার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতে প্রায় একশত বৌদ্ধ ভিক্ষু রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ওই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়। এ সময় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হাতে ছিল লাল ব্যানার। তারা রোহিঙ্গা মুসলিম বিরোধী, প্রত্যাবর্তন বিরোধী নানা স্লোগান দেয়।

রোববার অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। ভিডিওতে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সকল মানুষ দেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার জন্য দায়বদ্ধ।

এ সময় রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে বাঙালি হিসেবেও আখ্যায়িত করে এই বৌদ্ধ ভিক্ষু।

ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা ভিডিওতে তিনি বলেন, আমরা যদি ‘বাঙালিদের’ গ্রহণ করি তাহলে আমরা বা আমাদের দেশ কোনো সুবিধা পাবে না।

উল্লেখ্য, দুই সপ্তাহ আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করায় ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সেই প্রত্যাবর্তন শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায়। এরপরই গতকাল রোববার রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনবিরোধী এই বিক্ষোভ করে বৌদ্ধরা।

২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংস নির্যাতন শুরু করে। গণধর্ষণ, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ নানা রকম নারকীয় তান্ডবে কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা তাদের ভিটেমাটি, নিজভূমি ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নারী ও যুবতীদের ধর্ষণ করেছে। হত্যা করেছে তাদের আত্মীয় স্বজনকে। পুড়িয়ে দিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘরের ভিতর মানুষ রেখে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জীবন্ত হত্যা করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের। এমন নৃশংসতা থেকে বাঁচতে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে।

এদিকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদেরকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আটকে আছে প্রায় এক বছর ধরে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একের পর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

অন্যদিকে ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআরের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে মিয়ানমার।

চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দেশে ফিরে যাওয়ার আগে তাদেরকে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় সম অধিকার নিশ্চিতসহ জমিজমা, আদি বসতভিটা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করে রোহিঙ্গারা।

এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের তরফ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব বা ঘোষণা দেয়া হয়নি। উল্টো তারা ফিরে গেলে রাখা হবে ট্রানজিট ক্যাম্পে, যা এক রকম জেলখানার মতো। বেড়া দিয়ে বেষ্টিত। এমন আশ্রয় শিবিরের ছবি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। রোহিঙ্গাদের দাবি, তারা বর্তমান অবস্থায় ফিরে গেলে তাদের ওপর শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement