২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যাদের শাস্তি দাবি করেছে বিএনপি

ইসি সচিব ডিএমপি কমিশনারসহ ৪ জনের শাস্তি দাবি বিএনপির - ছবি : সংগ্রহ

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান ও ডিএমপির সংশ্লিষ্ট জোনের উপপুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে দেয়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, যদি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কমিশন কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন। 

চিঠিটি দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ইসির সচিবকে প্রদান করেন। পরে তিনি কমিশনার মো: রফিকুল ইসলামকে চিঠি দেন। চিঠিতে অভিযোগ আনা হয়, নির্বাচন কমিশন থেকে আচরণবিধি পালন সংক্রান্ত চিঠি দেয়ার পর মনোনয়ন ফরম বিক্রির তৃতীয় দিনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সরকারি দল ৯ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তা বন্ধ করে যানজট সৃষ্টির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে দলীয় মনোনয়ন বিতরণ করে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে মোটরসাইকেল, গাড়ি, পিকআপসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধানমন্ডির মতো জনাকীর্ণ এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়। এ সময় পুলিশি তৎপরতা দৃশ্যমান ছিল না। এমনকি হতাহতের ঘটনায় মামলা কিংবা তাদের কোনো নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে এমন সংবাদও গণমাধ্যমে আসেনি।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বিএনপি কার্যালয়ের সামনে স্বতঃস্ফূর্ত জনগণের ঢল দেখে নির্বাচন কমিশন সচিব ও ডিএমপি কমিশনারের গায়ে জ্বালা ধরে, কমিশন নড়েচড়ে বসে। কথিত আচরণবিধির খড়গ নেমে আসে বিএনপির ওপর। ইসি সচিব গণমাধ্যমে আচরণবিধি প্রতিপালনের কঠোর হুঙ্কার দিয়ে এটিকে আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করেন। আমরা মনে করি কমিশনের এ পপাতমূলক বিধিমালার ব্যাখ্যা যথোপযুক্ত নয়।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ১৩ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি প্রতিপালনের নির্দেশনা নেতাকর্মী-সমর্থকসহ জনগণের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করেছে। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের দেয়া বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য এবং ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামানের বক্তব্যে ঘটনায় ইন্ধন দেয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। চিঠিতে প্রশ্ন রাখা হয়, গত ১২-১৩ নভেম্বর নজিরবিহীন জনসমাগম সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি, তাহলে কেন ১৪ নভেম্বর এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা সংঘটিত হলো?
চিঠিতে দাবি করা হয়, এই সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় ৪৭২ জনকে আসামি করেছে। ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৩৮ জন নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর যেখানে বিএনপি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল, সেখানে নির্বাচন কমিশন তার চিঠির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে চরম বিঘœ সৃষ্টি এবং নিরপরাধ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরে সরাসরি ইন্ধন জুগিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সভার অভিযোগ : এ দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তলব করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বৈঠক করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পৃথক চিঠি দিয়েছে দলটি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের চিঠি ইসিতে দেন। চিঠিটি গ্রহণ করেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। পরে আলাল চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বারিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন থেকে সব রিটার্নিং অফিসারকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়। পরে ১৩ নভেম্বর কমিশনে তাদের নির্বাচন বিষয়ে ব্রিফ করা হয়। ইসি থেকে যখন রিটার্নিং কর্মকর্তারা নিজ নিজ জায়গায় ফেরত যাচ্ছিলেন, তখন জরুরি ভিত্তিতে তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তলব করা হয়। তখন তারা সেখানে গিয়ে বৈঠক করেন।

ইসির উদ্দেশে চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি সেখানে আসন্ন নির্বাচনে সরকারি দলের পে ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের ব্রিফ করা হয়।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসাররা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকার পরও কিভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাদের ডেকে পাঠানো হয়। এ ধরনের আচরণ একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপে নির্বাচনের বিরাট অন্তরায়। এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য অশনিসঙ্কেত।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ইসির অনুমতি ছাড়া টেলিফোনে রিটার্নিং অফিসারদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে সভা করা ‘আরপিও অধ্যায়-৬ এর আটিকেল ৭৩/২বি’ এর বিধানমতে ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস’, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন অবস্থায় বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিচার করা দাবি জানানো হয় বিএনপির প থেকে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, রিটার্নিং অফিসারদের ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের টেলিফোন কললিস্ট যাচাই করে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করলেই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা যাবে।

৯ দফা দাবি : এ দিকে নিরপে নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের বদলিসহ কমিশনে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপি। 
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সাথে সাাৎ করে পৃথক চিঠি দেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বারিত ওই চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দফতরে জমা দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ল্েয নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং পুলিশ সদর দফতরের মাঠ প্রশাসনের বদলি, নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পদে পদায়ন ও বদলিতে সিনিয়রিটি ও মেধাক্রম অনুসরণ করতে হবে। সব বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারদের প্রত্যাহার করে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে পদায়ন, ডিসি-এসপি ও মেট্রোপলিটন এলাকায় উপপুলিশ কমিশনার পদে দুই বছরের বেশি দায়িত্ব পালনকারীদের প্রত্যাহার ও বদলি, ডিসি পদায়নে ফিট লিস্ট তৈরি এবং ইউএনও এবং ওসিদের বর্তমান কর্মরত জেলার বাইরে বদলি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন বা আছেন এবং মন্ত্রী/ প্রতিমন্ত্রী/ উপমন্ত্রী/ উপদেষ্টাদের পিএস ও এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পদে পদায়ন না করা।


আরো সংবাদ



premium cement