১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মাহবুব তালুকদার যা বললেন

মাহবুব তালুকদার - সংগৃহীত

রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। 

তিনি বলেন, নির্বাচন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। সেজন্য গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য হতে হয়। বিতর্কিত নির্বাচন করে কোনো দেশেই গণতন্ত্র আপন মহিমায় প্রকাশিত হতে পারে না।

অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে পাঁচটি ‘নি’দিয়ে সংজ্ঞায়িত করেন এ কমিশনার। তিনি বলেন, প্রথম 'নি' হচ্ছে নিশ্চয়তা। এটা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা। এই নিশ্চয়তার অর্থ ভোটার ও রাজনৈতিক দলের আস্থার সৃষ্টি। 
দ্বিতীয় ‘নি’ হচ্ছে নিরপেক্ষতা। নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান ও কার্যক্রম চালানোর প্রতিশ্রুতি কমিশনের পক্ষে এই নিরপেক্ষতা অপরিহার্য।

তৃতীয় ‘নি’হচ্ছে নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা ভোটার, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকরভাবে নির্বাচনকালে কমিশনে প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা দরকার।

চতুর্থ ‘নি’হচ্ছে নিয়ম-নীতি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর বিধি-বিধান প্রতিপালনের আওতায় আনা প্রয়োজন। এবং

পঞ্চম ‘নি’হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ। নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। স্বনিয়ন্ত্রণই নির্বাচন কমিশনের মূল কথা।

তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নিশ্চয়তা, নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা, নিয়ম-নীতি ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। আপনাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের সঙ্গে জাতির আশা আকাঙ্খা জড়িত।

নির্দ্বিধায়, নি:সঙ্কোচে আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। একজন বিচারকের মতো নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে আমরা যে শপথ নিয়েছি আপনারা আমাদের সেই শপথের অংশীদার। কারণ আপনাদের মাধ্যমে আমাদের শপথ বাস্তবায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনাদের কাজের কোনো ব্যত্যয় ঘটার কোনো অবকাশ নেই।

তিনি বলেন, ভোট জনগণের পবিত্র আমানত। সে আমানত আপনাদের কাছে রক্ষিত। জনগণের আমানত যাতে খেয়ানত না হয় তার দায়িত্ব আপনাদের। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটারদের ভোটের আমানত ফিরিয়ে দিতে হবে। একজন ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজ ইচ্ছে অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে এই নিশ্চয়তা দিতে না পারলে জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের এবারের নির্বাচন আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন। আমরা কোনোভাবেই এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দিতে পারিনা। এজন্য আমরা শূন্য সহিষ্ণু নীতি বা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো প্রকার শিথিলতা আমরা বরদাশত করব না। নির্বাচনে গাফিলতির জন্য যে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে তা প্রয়োগ করতে আমরা মোটেই দ্বিধা করব না।

আপনাদের সর্বশেষ যে কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই তা হলো নির্বাচনী কাজে আপনারা ১৬ কোটি মানুষের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি ও আইন কানুনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি চাকুরি করলেও আপনাদের এখন দায়িত্ব পালনে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

এই মুহূর্তে আপনাদের আনুগত্য কেবলমাত্র নির্বাচন কমিশনের প্রতি। সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য হবে এই প্রত্যাশায় সমগ্র জাতি আজ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এসময় সিইসি, নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ইসি সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement