২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যে কারণে সংলাপ চাইছেন এরশাদ

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। - ছবি: সংগৃহীত

সারা বছর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা নিয়েছেন। মন্ত্রীর সমমর্যাদা ভোগ করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছেন এরকম নজির পাওয়া যায় না। কিন্তু হঠাৎ সেই এরশাদই সংলাপ নিয়ে তৎপর হয়ে গেলেন কেন?

সংলাপে বসতে চান জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। 

সম্মিলিত জাতীয় জোটের পক্ষ থেকে তিনি সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।

গতকাল বুধবার জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় এ চিঠি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে যান।

এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান ড. কামাল হোসেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টকে ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান।

গতকাল সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী তাদের ২ নভেম্বর রাতে আলোচনার আমন্ত্রণ জানান।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপের আগ্রহ জানিয়ে বুধবার চিঠি দিলেন জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশ নিলে এরশাদের গুরুত্ব হয়তো কমে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে। আর এ জন্যই রাজনৈতিক আলোচনায় থাকার জন্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংলাপের চিঠি দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিগত প্রায় দশ বছর সরকারের সুরেই কথা বলেছেন জাতীয় পার্টি ও তার চেয়ারম্যান এরশাদ। মাঝে মাঝে রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য কিছু চটকদার কথা-বার্তা বলেছেন এরশাদ। একদিকে ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছেন অন্যদিকে গৃহপালিত বিরোধী দলের ভমিকা পালন করেছেন। নির্বাচন নিয়ে কোন গঠণগত আলোচনা কখনোই করেননি এরশাদ। সর্বদা ক্ষমতার স্বাদ নিতেই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। সেই এরশাদই প্রধানমন্ত্রীকে সংলাপের জন্য চিঠি দিয়েছেন।

আর যদি একটি সফল সংলাপ হয় তাহলে ভোটের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হবে। হয়তো এরশাদের হিসাব-নিকাশও তখন পাল্টে যাবে।

আবার ক্ষমতাসীনদের সাথে দরকষাকষির জন্য হলেও তাকে রাজনীতির মূল ফোকাসে থাকতে হবে। তাই তিনি ক্ষমতাসীন তথা আওয়ামীলীগের সাথে সংলাপ চাইছেন। অন্যদিকে নিজ দলেই এরশাদের ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়ে যথেষ্ট ধোয়াশা রয়েছে। তার স্ত্রী রওশন এরশাদের সাথেই অধিকাংশ এমপি রয়েছেন। ফলে দলে এরশাদ যথেষ্ট চাপে রয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপ করতে  চাইছেন।

আরো পড়ুন : সংলাপের সফলতা নিয়ে বিশ্লেষকরা যা বললেন

নয়া দিগন্ত অনলাইন, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপে বসছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে যাচ্ছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ১৫ জন নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর আগেও বিভিন্ন সঙ্কটকালীন মূহুর্তে সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও সফলতার মুখ দেখেনি সেসব আলোচনা।

নির্বাচন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংলাপ নিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবীদের মন্তব্য ইতিবাচক। সংলাপ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমাধান চাইলে আমি বড় কোন বাধা দেখি না। একদিকে সাত দফা আর অন্যদিকে কোন দফা নেই। এক্ষেত্রে উভয়কেই ছাড় দিতে হবে। আর আমরাও আশাবাদী উভয়পক্ষই কিছু না কিছু ছাড় দেবে। এরকম মানসিকতা থাকলে সংলাপের একটা ফল নিশ্চয়ই আসবে। আর ফল না আসলে ধরে নেব আমাদের রাজনৈতিদক নেতৃবৃন্দের এখনো প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে।


তিনি আরো বলেন, সংবিধানের ১২৩(৩) এর (খ) ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী যেকোন সময় সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারেন। এখন যদি সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয় তাহলে সেটা সংবিধানের মধ্য থেকেই হবে। এটা হলেই তো অনেক বড় একটা বাধা কেটে যায়। এভাবেই বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দিয়ে এই সমাধান সম্ভব।

তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, কিছু বিষয় আছে যেগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। যেমন সংসদ ভেঙ্গে দেয়া বা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা যেহেতু নির্বাচন কমিশন মোটামুটি আস্থা হারিয়েছে। এগুলো দেন দরবারের বিষয় না এগুলো সিদ্ধান্তের বিষয়। সংলাপটা যেন নিছকই একটা আলোচনার মধ্যে না থেকে সমাধানের দিকে যায়।

তিনি আরো বলেন, সংবিধান নানাভাবে সংশোধন করা হয়েছে। সেগুলো যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয় বা তেমন জাতীয় আলোচনা ছাড়াই সংশোধন হয় এসব বিষয় নিয়ে সংলাপে আলোচনা হবে হয়তো।

আরো পড়ুন : আগের রাজনৈতিক সংলাপগুলো কতটা সফল ছিল?

বিবিসি, ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৬

১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার পর একমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচন ব্যতীত অন্য সব নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য দেখা গেছে। অতীতে এর আগ অন্তত তিনবার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা কিংবা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে দুবার হয়েছে বিদেশীদের মধ্যস্থতায়।

 

কী হয়েছিল সেসব আলোচনায়?

১৯৯৪ সালের আলোচনা

১৯৯৪ সালে মাগুরার একটি সংসদীয় উপ-নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে আনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সামনে আনে আওয়ামী লীগ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে। হরতাল এবং সহিংসতায় জনজীবন তখন বিপর্যস্ত।

তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্র সংহত করতে কমনওয়েলথ-এর তরফ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়। কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে ঢাকায় আসেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টেফান। কিন্তু সে আলোচনাও সফল হয়নি।

স্টেফান তখন ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে দফায়-দফায় বৈঠক করেন।এক পর্যায়ে তিনি সর্বদলীয় একটি সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সে সরকারে সরকার এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি মন্ত্রীসভা গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়া একজন টেকনোক্রেট মন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন কমনওয়েলথ মহাসচিবের দূত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে ফর্মুলা মানেনি। স্যার নিনিয়ান স্টেফানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তুলেছিল আওয়ামী লীগ। কোন রকম সমাধানে না আসার কারণে ফিরে যান স্টেফান।

এরপর আওয়ামী লীগ তাদের আন্দোলন আরো জোরদার করে এবং বিএনপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একটি একতরফা এবং বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য সে নির্বাচনের পর সংবিধান সংশোধনের করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এর মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যেই আবারো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement