২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংলাপের সফলতা নিয়ে বিশ্লেষকরা যা বললেন

সংলাপের সফলতা নিয়ে বিশ্লেষকরা যা বললেন। - সংগৃহীত

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপে বসছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে যাচ্ছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ১৫ জন নেতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর আগেও বিভিন্ন সঙ্কটকালীন মূহুর্তে সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও সফলতার মুখ দেখেনি সেসব আলোচনা।

নির্বাচন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সংলাপ নিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবীদের মন্তব্য ইতিবাচক। সংলাপ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমাধান চাইলে আমি বড় কোন বাধা দেখি না। একদিকে সাত দফা আর অন্যদিকে কোন দফা নেই। এক্ষেত্রে উভয়কেই ছাড় দিতে হবে। আর আমরাও আশাবাদী উভয়পক্ষই কিছু না কিছু ছাড় দেবে। এরকম মানসিকতা থাকলে সংলাপের একটা ফল নিশ্চয়ই আসবে। আর ফল না আসলে ধরে নেব আমাদের রাজনৈতিদক নেতৃবৃন্দের এখনো প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সংবিধানের ১২৩(৩) এর (খ) ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী যেকোন সময় সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারেন। এখন যদি সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয় তাহলে সেটা সংবিধানের মধ্য থেকেই হবে। এটা হলেই তো অনেক বড় একটা বাধা কেটে যায়। এভাবেই বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দিয়ে এই সমাধান সম্ভব।

তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, কিছু বিষয় আছে যেগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। যেমন সংসদ ভেঙ্গে দেয়া বা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা যেহেতু নির্বাচন কমিশন মোটামুটি আস্থা হারিয়েছে। এগুলো দেন দরবারের বিষয় না এগুলো সিদ্ধান্তের বিষয়। সংলাপটা যেন নিছকই একটা আলোচনার মধ্যে না থেকে সমাধানের দিকে যায়।

তিনি আরো বলেন, সংবিধান নানাভাবে সংশোধন করা হয়েছে। সেগুলো যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয় বা তেমন জাতীয় আলোচনা ছাড়াই সংশোধন হয় এসব বিষয় নিয়ে সংলাপে আলোচনা হবে হয়তো।

আরো পড়ুন : আগের রাজনৈতিক সংলাপগুলো কতটা সফল ছিল?
বিবিসি; ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৬

১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার পর একমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচন ব্যতীত অন্য সব নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য দেখা গেছে। অতীতে এর আগ অন্তত তিনবার দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা কিংবা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে দুবার হয়েছে বিদেশীদের মধ্যস্থতায়।

কী হয়েছিল সেসব আলোচনায়?


১৯৯৪ সালের আলোচনা
১৯৯৪ সালে মাগুরার একটি সংসদীয় উপ-নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে আনে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সামনে আনে আওয়ামী লীগ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে। হরতাল এবং সহিংসতায় জনজীবন তখন বিপর্যস্ত।

তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্র সংহত করতে কমনওয়েলথ-এর তরফ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়। কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে ঢাকায় আসেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টেফান। কিন্তু সে আলোচনাও সফল হয়নি।

স্টেফান তখন ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে দফায়-দফায় বৈঠক করেন।এক পর্যায়ে তিনি সর্বদলীয় একটি সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সে সরকারে সরকার এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি মন্ত্রীসভা গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়া একজন টেকনোক্রেট মন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন কমনওয়েলথ মহাসচিবের দূত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে ফর্মুলা মানেনি। স্যার নিনিয়ান স্টেফানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তুলেছিল আওয়ামী লীগ। কোন রকম সমাধানে না আসার কারণে ফিরে যান স্টেফান।

এরপর আওয়ামী লীগ তাদের আন্দোলন আরো জোরদার করে এবং বিএনপি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একটি একতরফা এবং বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য সে নির্বাচনের পর সংবিধান সংশোধনের করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এর মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যেই আবারো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

আব্দুল জলিল ও আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া সংলাপ
২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সংসদ ভবনে সংলাপে বসেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কারের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ একটি প্রস্তাব তুলে ধরে।

প্রথম দিনের আলোচনা শেষে বিএনপি মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া বলেন, "১৪ দলের পক্ষ থেকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের যে দাবিগুলো আছে সেগুলো আমার কাছে হস্তান্তর করেছেন। আমি তাদের প্রত্যেকটি দাবি সম্পর্কে ব্যাখ্যা চেয়েছি। তিনি ব্যাখ্যা ব্যাখ্যা করেছেন। আমি এ ব্যাখ্যাগুলো নিয়ে আমার দলের কাছে ফেরত যাব এবং দলের সাথে আলোচনা করবো।"

এ সময় আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল।

 জলিলও একই কথা বলেছেন। প্রথম বৈঠকের পর তারা জানিয়েছেন যে আলোচনা আরো চলবে। তখনকার সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের তরফ থেকে দুটি দাবিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়।

প্রথমত; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানের না থাকা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে এমএ আজিজের পদত্যাগ। কিন্তু এ দুটি বিষয়ে কোন বিএনপির দিক থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া আসেনি।

একদিকে আওয়ামী লীগ রাস্তায় আন্দোলন করতে থাকে এবং অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিএনপি ২০০৭ সালের ২২শে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখ বিচারপতি কেএম হাসান প্রধান উপদেষ্টার পদ নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ফলে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে নেন। এক পর্যায়ে বিরোধী রাজনৈতিক জোট নির্বাচন থেকে সরে যায়।

শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। ফলে প্রায় দুই বছর সেনা-সমর্থিত সরকার দেশ পরিচালনা করে।

অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতা
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর থেকে সে ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির দিকে আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়।

২০১৩ সালের শুরুতে সে আন্দোলন জোরালো রূপ নেয়। বিরোধী দলে বিএনপির ডাকা হরতাল অবরোধের কারণে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দেয়। দেশজুড়ে এ সময় সহিংসতাও হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিকে বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। ততদিনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে।

তারানকো ঢাকা অবস্থানকালে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনাকে সরকার প্রধান রেখেই নির্বাচনের একটি ফর্মুলা বের করার চেষ্টা করছেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি। কিন্তু বিএনপি সে বিষয়ে কোন আগ্রহ দেখায় নি।

তারানকো তার সফরের সময় বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেছেন। এর পাশাপাশি বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সাথেও তিনি বৈঠক করেন।

এর পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সাথে নিয়ে একটি বৈঠক করেন।

কিন্তু উভয়পক্ষ তাদের দাবিতে অনড় থাকায় শেষ পর্যন্ত কোন সমাধান ছাড়াই ফিরে যান মি: তারানকো। যাবার আগে সোনারগাঁও হোটেলে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, উভয়পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজী হয়েছে।

কিন্তু তারানকোর কথায় পরিষ্কার আভাস মিলেছিল যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কোন সমাধান সূত্র বের হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে আসে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত এক নির্বাচন।


আরো সংবাদ



premium cement
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু

সকল