২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শুক্রবার ঢাকায় ঐক্যফ্রন্টের জনসভা

সফল দুটি জনসভার পর ঢাকায় আরো একটি জনসভা করবে ঐক্যফ্রন্ট। - ফাইল ছবি

সিলেট ও চট্টগ্রামে সফল জনসভার পর এবার ঢাকায় জনসভা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এদিকে  জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কর্মসূচী মোতাবেক আগামী শুক্রবার (০২ নভেম্বর) বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় (ভিআইপি রোড) জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। সেইসাথে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনমতকে এক পয়সাও দাম দেননা। বরং এখন চলছে প্রতিবাদী বিশিষ্টজনদের ওপর স্টীম রোলার। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

এদিকে আজকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। আর গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত সারবস্তু হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় কাটে বিরোধীদের প্রতি বিদ্বেষ প্রদর্শন করে, অবিরাম কুৎসিত অসংযমী বাক্য বিলাসে। সন্ত্রাসের পরিচর্যা ও বিস্তার আওয়ামী লীগের চারিত্র্যধর্ম। মূলত: আওয়ামী লীগের ইতিহাস একটা ‘ক্রাইম স্টোরী’ ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু বিরোধী দলই নয়, সরকারবিরোধী সমালোচনায় দলনিরপেক্ষ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিপাকে ফেলার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। দেশের জননন্দিত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি-এখন চলছে প্রতিবাদী বিশিষ্টজনদের ওপর স্টীম রোলার। সরকারের পক্ষে কোন জনমত নেই বলেই ভোটারবিহীন সরকারের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বন্দুকের জোরে আদালতকে কব্জায় নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র আরো বলেন, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকে গ্রেফতারের পরও হয়রানি ও নির্যাতনের তীব্রতা হ্রাস পায়নি। এখন চলছে প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ওপর হানাদারি আক্রমণ। ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের লোকজনদের জানমালের ওপর চলছে সরকারি ক্যাডারদের বেপরোয়া আগ্রাসন। তার গড়া প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জনগণের, তারপরও এই প্রতিষ্ঠানের জায়গা-জমি দখল করতে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে দলীয় মাস্তানদের। বিনা অপরাধে র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিমনের ওপর আওয়ামী ক্যাডারদের কাপুরুষোচিত শারীরিক আক্রমণের দ্বারা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তার হাত-পা।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকায় ব্যাপক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ঘটাতে চায় ঐক্যফ্রন্ট

আরো্ পড়ুন : কঠোর কর্মসূচির দিকে ঐক্যফ্রন্ট

মঈন উদ্দিন খান, ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৫৯


সুষ্ঠু নির্বাচনের সাত দফা দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জানা গেছে, তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে সরকারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে কর্মসূচি কঠোর করবে ঐক্যফ্রন্ট। ঢাকায় একটি সমাবেশ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে মতবিনিময় করে সেই কর্মসূচি ঘোঘণা করা হতে পারে। এ দিকে সংলাপে বসতে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। 

জানা গেছে, সরকার কোনো আলোচনা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে হাঁটলে ঐক্যফ্রন্টও হার্ডলাইনে যাবে। ফ্রন্ট নেতাদের ধারণা বর্তমান মন্ত্রিসভা ছোট করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের যে পরিকল্পনা সরকারের ছিল, তা থেকে তারা সরে এসেছে। সংসদ বহাল রেখে মুখে নির্বাচনকালীন সরকারের আওয়াজ দিলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদের আকারে তারা কোনো নড়চড় করবে না। ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত ছিল সরকার নিজেদের মতো করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিলেই আন্দোলনের সূচনা করা হবে। যেহেতু সরকার সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছে ঐক্যফ্রন্টও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। ফ্রন্টের নেতারা মনে করছেন, সরকার তাদের চ্যালেঞ্জ মনে করছে। আর এ কারণেই তারাও সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারছে না। 


গত কয়েক মাস ধরে আলোচনা ছিল সরকারের মন্ত্রিপরিষদের আকার ছোট হতে পারে। বর্তমান সরকারের অর্ধডজন নেতা সভা-সমাবেশে বলেছিলেন, তফসিল ঘোষণার আগে তাদের সরকারের আকার ছোট হবে। ওই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার নামে পরিচিত হবে। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না বলেই রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে। 

এ দিকে জোট গঠনের দুই সপ্তাহ না যেতেই ফ্রন্টের শীর্ষ দুই নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরেকজনের নামে দখল-চুরির মামলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটতে পারে বলে তথ্য রয়েছে। সেজন্য সতর্কতার সাথে পথ চলছে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। এসব বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ফ্রন্টের এক নেতা বলেছেন, বিভাগীয় শহর শেষে ঢাকার জনসভা থেকে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে। এর জন্য আরো কিছু দিন অপেক্ষা করবে তারা। 

আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ রেখে আগামী ৪ নভেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। ঐক্যফ্রন্টের প্রভাবশালী এক নেতা জানিয়েছেন, সরকার ফ্রন্টের সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে রাজনীতিতে মঞ্চের বক্তব্য আর পর্দার পেছনের সিদ্ধান্তের মধ্যে ফারাক থাকে। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। তাই সংলাপের দ্বার খোলা রেখেই সামনে এগোবে তারা। 

এ প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা সরকার প্রধান ও তাদের জোটের প্রধান দলের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছি। সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেখি তারা কী জবাব দেয়। রাজসভাতে সমস্যার সমাধান না হলে রাজপথ বেছে নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না। সরকার কঠোর অবস্থায় গেলে আমরা তা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। 

মাঠের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গত বুধবার সিলেটে জনসভা করেছে ঐক্যফ্রন্ট। গত শনিবার চট্টগ্রামে জনসভা করেছে। নেতারা বলেছেন, প্রশাসনের গড়িমসির পরও সিলেট-চট্টগ্রামে জনসভার অনুমতি পাওয়া, নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়া, গ্রেফতার, তল্লাশির পরেও জনসভায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছে। জনসভাও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। যদিও সামনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আরো কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

আগামী ২ নভেম্বর রাজশাহীতে জনসভার কর্মসূচি রয়েছে। এরপর সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারকে বাধ্য করতে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে পারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সর্বশেষ দু’টি জনসভায় এমন আভাস দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। বিএনপিরও সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপকালেও একই আভাস পাওয়া গেছে। 

জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি মেনে না নিয়ে যদি তফসিল ঘোষণা করা হয় তাহলে ওই দিন থেকেই সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এই জোটের। তবে তার আগ পর্যন্ত দাবি আদায়ে সরকারকে আবারো সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হবে। এর অংশ হিসেবে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে সাত দফা দাবির কথা তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বিরাজমান সঙ্কট উত্তরণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয় কমিটির দুই সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক ও আ ও ম শফিউল্লাহ আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে চিঠি পৌঁছে দেন।


আরো সংবাদ



premium cement