ইভিএম চালু ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার শামিল : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সবার মত অগ্রাহ্য করে নির্বাচন কমিশনের একতরফা ভাবে ইভিএম চালু ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার শামিল। তিনি ইভিএম পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের ভোট ধ্বংসের ষড়যন্ত্র জাল ছেঁড়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে জনগণের প্রতি আহবান জানান।

আজ রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বেগম সেলিমা রহমান, আহমেদ আযম খান, এবিএম মোশারফ হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন কতিপয় আত্মবিক্রয় করা লোকজনদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এরা সমস্ত শক্তি দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার চিরদিনের জন্য হরণ করে নিতে সরকারপ্রধানের মনোবাঞ্ছা পূরণে নিরন্তর কাজ করছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুলনায় বললেন, সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার হবে, আবার ইসি সচিব চট্টগ্রামে বললেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ৮৪ হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনবে নির্বাচন কমিশন। এগুলো নাকি শহর এলাকায় ব্যবহার করা হবে। সিইসি ও ইসি সচিব দুজনই আওয়ামী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সদা তৎপর। এদিকে রংপুরে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বললেন, ইভিএম ব্যবহার করা হবে কী না, তা এখনো অনিশ্চিত। একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করার জন্য ভোটারদেরকে গোলক ধাঁধার মধ্যে ফেলতে কমিশনের কর্তাব্যক্তিরা এসব বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছেন। আসলে ইভিএম এর নামে মহা জালিয়াতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনদের কিছু লোকের পকেট ভারী করার জন্য সারা দুনিয়ায় ধিকৃত ও বিতর্কিত ইভিএম মেশিন ৩৮২৫ কোটি টাকায় কেনা হবে।

তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় কমিশনার ভোটারবিহীন সরকারের একনিষ্ঠ সেবক বলেই এদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার নিয়ে বিরোধিতা সত্ত্বেও সেই ইভিএম পদ্ধতি নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। সীমিত আকারের কথা বলা হলেও আরপিও সংশোধন করে তারা ব্যাপকভাবেই আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে। ভোটারবিহীন সরকারের প্রধান একতরফা নির্বাচন করতে সব অস্ত্র ব্যবহার করছেন, যাতে তার ক্ষমতায় থাকাটা নিষ্কন্টক হয়। এই কারণে তার আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন দিয়ে জালিয়াতির বাক্স ইভিএম চালু করতে চাচ্ছেন।

রিজভী বলেন, ভোট কেন্দ্রে সকলের চোখের সামনে পুলিশের সহায়তায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের ভোট ডাকাতি দেখার পরও শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইভিএম পদ্ধতি চালু করবেন, এটি শিশু ও পাগল কেউই বিশ্বাস করবে না। শুধু নৌকার পক্ষে ‘ডিজিটাল ভোট-ডাকাতি’ করতেই এই ইভিএম ব্যবহারের তোড়জোড়।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ ২৮ অক্টোবর সেই ভয়াল রক্তঝরা দিন। ২০০৬ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী রাজনৈতিক সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশে লগী-বৈঠা দিয়ে পাশবিক প্রহার, গুলি আর ইট-পাটকেলের আঘাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় ছয়জনকে হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করা হয়। এই আদিম অমানবিক উল্লাস দেখে দেশবাসীসহ সারা বিশ্ব আতঙ্ক ও বেদনায় শিহরিত হয়ে ওঠে। বর্তমানে আওয়ামী সরকারের সৃষ্ট অবিরাম রক্তপাতের ফলে দেশজুড়ে নিস্তবদ্ধতার আচ্ছাদন তৈরী করার চেষ্টা হলেও ২৮ অক্টোবরের সেই মৃত্যু-বিভিষিকা জনগণ এখনো ভুলে যায়নি। তারা সরকারেই থাকুক আর বিরোধী দলেই থাকুক, সহিংস সন্ত্রাসই যে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও নীতি প্রতিমুহূর্তে সেটির প্রতিফলন ঘটে।

রিজভী বলেন, ২৮ অক্টোবর ২০০৬ থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসের ছোবলে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হয়েছে। এগুলো চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ, এজন্য আওয়ামী লীগকে বিচারের সম্মুখীন হতেই হবে।

তিনি বলেন, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রাজন ব্যাপারীকে এখনো জনসমক্ষে হাজির করেনি র‌্যাব। কেরানীগঞ্জ জেল গেটে সবার সামনে থেকে তাকে তুলে নেয়া হলেও এখনো তার কোনো হদিস দেয়া হচ্ছে না। তার স্ত্রী গতকাল কেরানীগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ জিডি নেয়নি। তার কোনো খোঁজ না দিয়ে গুম করে রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকামী মানুষদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আমি অবিলম্বে রাজন ব্যাপারীকে জনসমক্ষে হাজির করার আবারও জোরালো আহবান জানাচ্ছি।

রিজভী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রচণ্ড জ্বরে চোখ মেলতে পারছেন না, ডায়াবেটিস অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। শারীরিকভাবে প্রচণ্ড খারাপ অবস্থার মধ্যে কাতরালেও জেল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই করছে না। অবহেলা ও উপেক্ষায় শিমুল বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থা চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। আমি অবিলম্বে শিমুল বিশ্বাসের সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।