সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম জনসভা যে বার্তা দিতে যাচ্ছেন নেতৃবৃন্দ

সিলেটে আজ বুধবার ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এই জনসভা সফলের লক্ষ্যে চলছে ব্যাপক প্রস্ততি। নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে আয়োজিত এ জনসভায় জাতীয় নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনার জন্য সিলেটবাসী উদগ্রীব। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রথম জনসভায় নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। প্রধান বক্তা থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ:)-এর মাজার জিয়ারতও করবেন ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ হওয়া নতুন এ জোটে বিএনপি ছাড়াও রয়েছে জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও গণফোরাম। 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আজকের প্রথম জনসভায় জনতার ঢল নামবেÑ এমনটি আশা করছেন সিলেটের নেতৃবৃন্দ। সে লক্ষ্যে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। সোমবার জনসভাস্থলে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার নির্মাণকাজ শেষ হয়। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বিকেলে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে দুপুরে রেজিস্ট্রারি মাঠ পরিদর্শন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, এম এ হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত সাদেকসহ নেতাকর্মীরা।

আজকের সমাবেশ ঘিরে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা একাধিক বৈঠক করেছেন। সমাবেশ সফলে গতকাল দুপুরে নগরীতে লিফলেট বিতরণ করেছেন জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। 
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জেলা মুখপাত্র আবুল কাহের শামীম জানান, সমাবেশের অনুমতি লাভের পর সোমবার থেকে রেজিস্ট্রারি মাঠে মঞ্চ নির্মাণকাজ শুরু হয়। জনসভার সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আজকের জনসভায় জনতার ঢল নামবে বলে আশা করছেন তিনি। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘সমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। আমরা সমাবেশের জন্য অল্প সময় পেয়েছি। এ সময়ের মধ্যেই সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের চেষ্টা আমরা করছি।’
এ দিকে, জেলা বিএনপি তাদের আওতাভুক্ত ১৩টি উপজেলা ইউনিটকে নিজ নিজ শাখার ব্যানারসহ সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একই নির্দেশনা মহানগর বিএনপি তাদের আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ড বিএনপিকে দিয়েছে। গণফোরাম ও নাগরিক ঐক্য তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। 
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী বলেন, ‘এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকেই যাত্রা শুরু করছি। আমাদের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।’ 

সিলেট মহানগর গণফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনসার খান বলেন, ‘আমরা সমাবেশের জন্য জনগণের সাথে যোগাযোগ রাখছি, কর্মীদের সাথে কথা বলছি। ঘরোয়া বৈঠকও করছি। তবে পুলিশের বাধার কারণে বড় ধরনের কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমরা নেতাকর্মীদের মানুষের ঘরে ঘরে যেতে নির্দেশ দিয়েছি।’
সমাবেশের বিষয়ে সিলেট জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্যসচিব তৌফিক পাশা বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করে আমরা নেতাকর্মীদের একত্র করার চেষ্টা করছি, সভাও করেছি। সর্বস্তরের নেতাকর্মী যাতে সমাবেশে উপস্থিত থাকে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।’ 

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানান, ‘১৪ শর্তে রেজিস্ট্রারি মাঠে জনসভার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত শর্ত ছাড়াও জনসভার দিনে নগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বাড়তি নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকবে।’
ব্যক্তির নামে পোস্টার-ব্যানার না সাঁটানোর অনুরোধ : আজ বুধবার বেলা ২টায় রেজিস্ট্রারি মাঠে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের আশপাশে কোনো ব্যক্তির নামে পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন বহন না করা ও না সাঁটাতে এবং তোরণ নির্মাণ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেট বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
সোমবার সমাবেশ সফলের আহ্বান জানিয়ে জেলা ও মহানগর বিএনপির গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়।
সমাবেশ সফলে জেলা বিএনপির আওতাধীন সব উপজেলা ও পৌর শাখা এবং মহানগরের আওতাধীন সব ওয়ার্ড শাখার নেতৃবৃন্দকে নিজ নিজ শাখার ব্যানারসহ মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

নেতাকর্মীদের বাড়িতে রাতভর তল্লাশির অভিযোগ : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আজকের সমাবেশ ঘিরে সিলেটের বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ।
তিনি বলেন, সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সোমবার রাতভর পুলিশ বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এ সময় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মাইকিংয়ে বাধা প্রদান করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। 

তবে এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মো: সোহেল রেজা জানান, সমাবেশ ঘিরে ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য পুলিশ কারো বাসায় তল্লাাশি চালায়নি। নিয়মিত মামলার আসামি ধরতেই এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

ড. কামাল হোসেন সিলেট পৌঁছেছেন : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দিতে সিলেটে পৌঁছেছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। আজ বেলা ২টায় নগরীর রেজিস্টারি মাঠে ঐক্যফ্রন্টের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ড. কামাল হোসেন বিমানযোগে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছেন। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান সিলেট আসেন। একই ফ্লাইটে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীনও সিলেট এসেছেন বলে জানা গেছে। 

বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতেই আজ বুধবার সিলেটে সমাবেশ হবে। তিনি বলেন, এটা জনগণের দাবি। দাবি আদায়ে পরবর্তী কর্মসূচি আজকের সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হবে বলে জানান ড. কামাল।