২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
সংসদ ভেঙে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকার গঠনসহ আট দফা দাবি

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সভায় ৮ দফা দাবি

দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান - ছবি : সংগ্রহ



সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং কেয়ারটেকার সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ইভিএমে ভোটিং ব্যবস্থা চালুর ষড়যন্ত্র বন্ধ, বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি প্রদান, নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
গতকাল দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভায় এ দাবি জানানো হয়। জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদের সভাপতিত্বে সভায় লিখিত দাবিগুলো তুলে ধরেন সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো: তাসনিম আলম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য, সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রমুখ।

লিখিত বক্তৃতায় ডা: শফিকুর রহমান দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশ আজ গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত। অনেক আন্দোলনÑসংগ্রামের মাধ্যমে প্রায় সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘কেয়ারটেকার সরকার’ ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থার অধীনে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদের তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ধারা শুরু হয়। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার যে যাত্রা শুরু করে তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য ‘কেয়ারটেকার সরকার’ ব্যবস্থাটি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে, যার ফলে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। 

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এসে দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। দেশে-বিদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ব্যাপকভাবে সমালোচিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সরকার জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পরিবর্তে জোর করে ক্ষমতায় বহাল থাকে। তাদের জবরদখল করে ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ এখন শেষের পথে। সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু সরকার তার নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করে ফের ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে হয়রানি করছে। মিথ্যা মামলা, গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। এটা কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনের পরিবেশ নয়। 

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, নির্বাহী পরিষদের সভায় দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে আট দফা দাবি উত্থাপন করেছে। দাবিগুলো হলো-১. অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকার গঠন করতে হবে। 

২. অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা চালুর ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। 
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি প্রদান ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। 
৪. এখন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখতে হবে, নতুন করে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেয়া বন্ধ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। কথিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালা-কানুন বাতিল করতে হবে। 

৫. বিচার বিভাগের ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজাতে হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। 

৬. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তাদের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। 

৭. রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম হওয়া নাগরিকদের অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে হবে এবং গুম-খুনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে। 
৮. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে থেকে এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। 
এসব দাবি বাস্তবায়ন করে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা। একইসাথে আট দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতি, ধর্ম, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তারা।

ব্যারিস্টার মইনুলকে গ্রেফতারের নিন্দা 
সাবেক কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যেই প্রখ্যাত আইনজীবী, কেয়ারটেকার সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

তিনি বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র অত্যন্ত নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সরকার দেশে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়িত করার যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তার অংশ হিসেবেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতন চালিয়ে সরকার স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত করতে পারবে না। বেআইনিভাবে নির্বিচারে গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু করেছে মন্তব্য করে তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র গণ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। একইসাথে গ্রেফতার অভিযান বন্ধ করে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।


আরো সংবাদ



premium cement