২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিলেটে ঐক্যফ্রন্টকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ : কাদের 

সিলেটে ঐক্যফ্রন্টকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ : কাদের  - সংগৃহীত

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সিলেটে জাতীয় এক্যফ্রন্টের সমাবেশ স্থগিত করেছিল পুলিশ। এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেন, সমাবেশের অনুমতির ব্যাপারে ইঙ্গিত পেয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ইতিমধ্যে পুলিশ অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। অফিশিয়াল চিঠি না পাওয়ার আগ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্ট নেতারা অহেতুক নাটক করবেন, এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস।

রোববার দুপুরে রাজধানীর ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, সিলেটে বড় বড় নেতারা যাবেন, নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ একটু খতিয়ে দেখে। তিনি বলেন, ‘অলরেডি পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। আমার তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে, তিনি আমাকে বলেছেন যে সভা-সমাবেশ যেখানেই করতে চান, এ ব্যাপারে কোনো বাধা নিষেধ থাকবে না, থাকার কথাও নয়।’

ঐক্যফ্রন্ট সিলেটে সমাবেশের জন্য আদৌ অনুমতি পাবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেখুন অনুমতি নিয়ে নাটক করা এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি অনুমতি পেয়েছে, কিন্তু এটা নিয়ে নাটক করতে তারা দ্বিধা করেনি। আমি এখানেও বলছি, এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস। তারা অনুমতি নিয়ে নাটক করেন।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম শনিবার এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন, নির্বাচন কমিশন বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্যে বিষয়ে সাংবাদিকেরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব কি ভুলে গেছেন যে, নির্বাচন কমিশন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট? প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আরও চারজন কমিশনার আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন কমিশনার কোনো ইস্যুতে যদি ভিন্নমত পোষণ করেন অথবা নোট অব ডিসেন্ট দেন, এটা তো গণতন্ত্রের বিউটি। সেখানেও ইন্টারনাল ডেমোক্রেসি কাজ করছে, সেটাই আমরা মনে করব। এটাকে নিয়ে বিভক্তির যে অভিযোগ তিনি (ফখরুল ইসলাম) তুলেছেন, এটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক ও হাস্যকর ব্যাপার।’

আরো পড়ুন : জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট : যেভাবে লাভবান হচ্ছে বিএনপি
বিবিসি ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:০৪

বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপির নেতারা বলেছেন, দেশের শিক্ষিত সমাজের মাঝে বিএনপির ভাবমূর্তি বা গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর তাগিদ থেকে ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামের জোট গঠন করে তারা মাঠে নেমেছেন। তাদের এই নতুন জোটের কারণে দলটির নেতা কর্মীদের মধ্যেও হতাশা কেটেছে বলে বিএনপির নেতারা দাবি করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই জোটের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় পর বিএনপি ২০ দলীয় জোটের বাইরে অন্য দলকে সাথে পেয়েছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের তখনকার সেই আন্দোলন সহিংস রূপ নিয়েছিল।

সেই পরিস্থিতি বিএনপির ভেতরে যেমন হতাশা তৈরি করেছিল, তেমনি দলটি দেশে ও দেশের বাইরে ভাবমূর্তির সঙ্কটে পড়েছিল। বিএনপির অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পর্ক নিয়েও দলটিকে বিভিন্ন সময় সমালোচনর মুখে পড়তে হয়েছে।

দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে রয়েছেন। দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানও বিভিন্ন মামলার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না।

দলটির নেতাদের অনেকে মনে করেন, দেশের শিক্ষিত সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের দলের ইমেজ সঙ্কট কাটাতে নতুন জোট বড় সহায়ক হবে।

জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বিবিসিকে বলেছেন, "বিএনপি তো সেটা করতে পরেই। প্রত্যেকে তার ইমেজ বাড়ানো বা ইমেজ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। তবে পরিবেশটা এমন হয়েছে যে, সরকার তার সমস্ত বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আমার মনে হয়, বিএনপির ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের বিষয়টা যদি হয়ও, সেটা হবে সরকারের ব্যর্থতা এবং একনায়কতান্ত্রিক আচরণের কারণে।"

ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করতে চাইছে।

প্রথমেই তারা সিলেটে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সমাবেশের ব্যাপারে এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি।

নতুন জোট দু'দিন আগে ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করে তাদের দাবি এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করেছে। এনিয়ে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীদের অনেকে নতুন জোটের সমালোচনা করেছেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, নতুন জোটের মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীরাও দীর্ঘ সময়ের হতাশা থেকে বেরিয়ে এসেছেন বলে তারা মনে করছেন।

"ভাবমূর্তি বাড়ানোটা আমাদের কোনো উদ্দেশ্য নয়। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য জোট করেছি। কূটনীতিকদের কাছে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং দাবি তুলে ধরেছি," বলেন তিনি।

২০ দলীয় জোটের বাইরে ঐক্য ফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে বিএনপি এই ইঙ্গিতও দিচ্ছে যে, তারা এবার নির্বাচনকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিতে চান না। সে কারণেও ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে ওঠার বিষয়কে দলটি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাসরিন সুলতানা বলছিলেন, নতুন জোটের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জনই বিএনপির কৌশল হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

‘বাংলাদেশে নির্বাচনের হিসাব নিকাশের প্রেক্ষাপটে জোট গঠনের একটা প্রবণতা দেখা যায়। তো সেই ক্ষেত্রে এটাও বিএনপির একটা নতুন কৌশল।’

তবে শেষ পর্যন্ত এই জোটের কারণে কে কতটা লাভবান হবে, সেই হিসাব নিকাশের সময় এখনো অনেক বাকি বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement