২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সব চ্যালেঞ্জ কাটিয়েই মাঠে নেমেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

সব চ্যালেঞ্জ কাটিয়েই মাঠে নেমেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট - ছবি : নয়া দিগন্ত

সব চ্যালেঞ্জ কাটিয়েই মাঠে নেমেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোট গোছানোর কাজ ইতোমধ্যেই সেরে নিয়েছেন নেতারা। সম্পন্ন করেছেন জোটভুক্ত দলগুলোর নিজস্ব প্রস্তুতিও। তারা এখন কেবলই সামনে এগোতে চান। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করতে চান অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি। আগামী ২৩ অক্টোবর সিলেটে সমাবেশের মাধ্যমেই শুরু হতে চলেছে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব।

জোট নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারবিরোধী বৃহত্তর এ মোর্চার গঠনপ্রক্রিয়া মোটেই সহজ ছিল না। তবে দেশবাসীর তীব্র আকাক্সা এবং দেশের সার্বিক প্রয়োজনের তাগিদ থেকে বেশ কিছু দিন ধরে এ কাজে জোরালোভাবে লেগে ছিলেন তারা। এ কারণেই নানামুখী বাধা এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পেরেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে এ মোর্চার আত্মপ্রকাশের। 

আত্মপ্রকাশের পর থেকে গত কয়েক দিন দেশের সর্বত্র ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিশেষ করে এ জোট থেকে বিকল্প ধারার ছিটকে পড়ার ঘটনায় লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছেন সাধারণ মানুষ। বিশ্লেষকদের মতে, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশে স্বস্তি ফিরে এসেছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে। আন্দোলন-সংগ্রামের দুর্বল গতিধারায় এত দিন যারা কিছুটা হতাশায় ভুগছিলেন তারাও এখন আশাবাদী হয়ে উঠছেন। সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং স্বৈরাচারী আচরণে ুব্ধ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ঐক্যফ্রন্টকে দেখছেন জাতীয় মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে। আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন দেশের মানুষ। বিশেষ করে ঐক্যপ্রক্রিয়া থেকে বি চৌধুরীর প্রস্থানপ্রক্রিয়াটি ইতিবাচক ধারায় হওয়ায় খুশি সংশ্লিষ্টরা। তাদের ধারণা, এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে পেরেছেন ঐক্যপ্রক্রিয়ার উদ্যোক্তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঐক্যপ্রক্রিয়া থেকে বিকল্প ধারার বাদ পড়ার মধ্য দিয়ে সরকারের কৌশল বিফলে গেছে। সরকার চেয়েছিল এমন একটি ঐক্যজোট যেখানে ভেতরে বসে সরকারের কৌশলগুলোই বাস্তবায়ন করা হবে। আবার প্রয়োজনে ভাঙন সৃষ্টি করে ঐক্যকে বিতর্কিত করবে। বি চৌধুরীর নেতৃত্বে তাৎক্ষণিক পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে শর্ত দেয়ার মাধ্যমে এমন মনোভাব আরো স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এ ক্ষেত্রে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর স্ববিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করতে পারাকেই ফ্রন্ট নেতাদের সাফল্য হিসেবে ভাবা হচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম এক শীর্ষ নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, বি চৌধুরী আগাগোড়াই সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু বয়সের ভার কিংবা অন্য কোনো কারণে তিনি ছেলে মাহীর কথার বাইরে যেতে পারছিলেন না। সরকারবিরোধী জাতীয় ফ্রন্ট গঠনপ্রক্রিয়ায় বি চৌধুরী যতবারই অগ্রসর হতে চেয়েছেন, অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে মাহী ততবারই পেছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ কারণেই ঐক্যফ্রন্টের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা বিলম্বিত হচ্ছিল বলে জানান এ নেতা।

অভিযোগ উঠেছে, বয়সের ভারে কান্ত সাবেক রাষ্ট্রপতি চাচ্ছেন তার ছেলেকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু মাহীর আগ্রহ রাজনীতির চেয়ে বেশি ব্যবসায়। ফলে তিনি ব্যবসায়িক অংশীদারদের অবস্থানকে বিতর্কিত করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চাননি। যেমনভাবে ২০০১ এর পরের সময়টায় তিনি রাজনীতির চেয়ে ব্যবসাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিটিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ মাহীই করতেন। আর এখন সরকারি দলের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে ব্যবসা করছেন। স্বাভাবিক কারণেই বাবার চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ১৫০ আসন দাবি করা, জামায়াতকে দূরে রাখা এবং জোটে বিএনপির একচ্ছত্র প্রভাব খর্ব করার মতো শর্ত জুড়ে দিয়েছেন বলে সমালোচকদের দাবি।

যদিও বি চৌধুরী ও মাহী চৌধুরী এখন অভিযোগ করছেন, তারাই জোটের অগ্রগামী অংশ অথচ ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে জোট থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মান্নাকে এ জন্য রীতিমতো অভিযুক্তই করেছেন মাহী। মোবাইল ফোনে তাদের দু’জনের কথোপকথনে এমনটিই প্রকাশ পেয়েছে। মোবাইলে তিনি অভিযোগের স্বরে মান্নাকে বলেন, ‘কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আপনারা ঐক্য করছেন। ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। ওনার নেতৃত্বে জামায়াতের সাথে গোপন আঁতাত হবে, এগুলোর সাথে আমরা থাকতে চাই না, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। বাট প্রশ্ন তো সেটা না। এ বিষয়গুলো আপনারা জাতির সামনে পরিষ্কার করেই বলতেন যে, উনাকে দাওয়াত দেয়া হয়নি। উনাকে না বলে আমরা চুরি করে মিটিং করছি। এগুলো বলেন নাই কেন? কামাল হোসেন উনার বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে অফিসে মিটিং করেন, বি চৌধুরীকে বাদ দিয়ে আমরা একটা ঐক্য করতে চাই। জামায়াতের সাথে গোপনে গোপনে আমরা ঐক্য করতে চাই। এসব বলতেন।’

বি চৌধুরীর সর্বশেষ অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করে শুরু থেকেই ঐক্যপ্রক্রিয়ার সাথে সক্রিয় থাকা একজন নেতা গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগকে কথা দিয়েছিলেন, তারা যে যুক্তফ্রন্ট করছেন তা নিয়ে তারা ইলেকশনে যাবেন যেন নির্বাচন বেশির ভাগ দলের হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। যে কারণে সরকারপ্রধান শুরুর দিকে এই ঐক্যের ব্যাপারে সায় দিয়েছিলেন। অথবা জোর বিরোধিতা করেননি। কারণ, সরকার জানে ভোটের বিবেচনায় বিএনপি কখনোই জামায়াত ছাড়বে না। আন্দোলন-নির্বাচনে জামায়াতকে তাদের দরকার। কিন্তু ড. কামাল হোসেন যে অন্য কৌশলে জামায়াতকে হাতে রেখেও বিএনপির সাথে ঐক্যের পথ খুলে ফেলেছেন, তা দেখেই সরকার নাখোশ হয়েছে। আর বি চৌধুরীদের ব্যবহার করতে চেয়েছে ঐক্য ভাঙার কাজে।

এ দিকে গতকাল দিনভর বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের সাফল্য কামনা করছেন দেশপ্রেমিক জনতা। তাদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে ভোটবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী জাতির ঘাড়ে চেপে বসা একটি সরকারের বিদায়ের পথ ত্বরান্বিত হবে। গণতন্ত্র মুক্তি পাবে এবং জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্যকে সময়োপযোগী এবং জাতীয় প্রত্যাশা বলে মনে করছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement
যখন দলকে আর সহযোগিতা করতে পারবো না তখন অবসরে যাব : মেসি ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেম্যান আর নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ খণ্ডালেন ওবায়দুল কাদের আটকের পর নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ইউপি চেয়ারম্যানকে বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন পণবন্দী জাহাজ ও ক্রুদের মুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝালকাঠিতে নিখোঁজের ২ দিন পর নদীতে মিলল ভ্যানচালকের লাশ বাল্টিমোর সেতু ভেঙে নদীতে পড়া ট্রাক থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে নিহত ৪ সুইডেনে বসবাসের অনুমতি বাতিল কুরআন পোড়ানো শরণার্থীর

সকল