২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দু’টি ভিন্ন জোটে বিএনপি : কেমন হবে পথচলা?

রাজনীতি
সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায় ঐক্যফ্রন্ট - ফাইল ছবি

ঢাকায় মঙ্গলবার যখন সদ্য গঠিত রাজনৈতিক জোটে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের প্রথম সভায় বিএনপি নেতারা যোগ দিয়েছিলেন, সে সময় তাদের নেতৃত্বে ২০-দলীয় জোটের দুই শরিক জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি—এনডিপি ঘোষণা দেয় তারা জোটের সাথে আর নেই।

ঐ দুই শরিক দলের বক্তব্য ছিল, নতুন জোটে যোগ দেওয়া নিয়ে বিএনপি তাদের অন্ধকারে রেখেছিল, তাদের মতামতের তোয়াক্কা করেনি।

তবে এ ঘোষণার পর খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজাকে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়ে‌ছে। দল‌টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য মো: আব্দুল মুকাদ্দিমকে নতুন চেয়ারম্যান মনোনীত করা হ‌য়ে‌ছে। একই স‌াথে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো: ওসমান গণি পাটোওয়ারীকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়ে‌ছে।

মঙ্গলবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির এক বৈঠকে গঠনতন্ত্রের ৫৭(ক)(খ)(গ)(ঘ) ধারা মোতাবেক এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দল ও ২০ দলীয় জোট বিরোধী কার্যকলাপ এবং সর্বশেষে জোট ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো: ওসমান গণি পাটোওয়ারী এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধা‌ন্তের কথা জানান।

বিবৃ‌তি‌তে তি‌নি ব‌লেন, ইতোপূর্বে জোট ও সংগঠন বিরোধী কার্যক্রমের জন্য ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হ‌য়।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহকে এবং ২০ দলীয় জোটসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এখন থেকে দ‌লের চেয়ারম্যান হিসাবে মো: আব্দুল মুকাদ্দিমের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেছেন প্রচার সম্পাদক মো: জিয়াউল হক।

অপরদিকে এম এন শাওন সাদেকী নিজেকে বাংলাদেশ ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দাবি করে চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি এবং মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়াকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছেন।

নিজের ফেসবুক ওয়ালে শাওন লিখেছেন, ‘প্রিয় দেশবাসী আসসালামু আলাইকুম, আমি এম এন শাওন সাদেকী আপনাদের জানাচ্ছি বাংলাদেশ ন্যাপ ২০ দলীয় জোটের সাথে আছে এবং থাকবে। বাংলাদেশ ন্যাপের সাংগঠনিক নিয়ম-নীতি ও কার্যক্রম লঙ্ঘন করায় বাংলাদেশ ন্যাপ থেকে জেবেল রহমান গাণি ও গোলাম মোস্তফা ভূইয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ১১টায় জরুরি মিটিং ডেকে। আমি এম এন শাওন সাদেকী বাংলাদেশ ন্যাপের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ ন্যাপ ২০ দলীয় জোটের সাথে আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’

জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি—এনডিপি যে বক্তব্য দিয়েছে সেটাকে কিভাবে দেখছে বিএনপি?

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এই দুই দল যে বক্তব্য দিয়ে জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটা সঠিক নয়।

তিনি বলেন, ‘২০ দলে আমরা বার বার মিটিং করেছি। এবং যেদিন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট ঘোষণা করা হয় তার একদিন আগেও আমাদের ২০ দলের মিটিং হয়েছে। এবং সেখানে আমরা আমাদের ৭দফা দাবি এবং ১১দফা নীতি এসব বিষয়ে আলোচনা করে ২০ দল থেকে মতামত নেয়া হয়েছে। সেদিন তারা এই গুলোর সাথে একমত হয়েছে।’

সামনে নির্বাচন এবং এখন সব দল এবং জোট গঠনের পিছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।

সেখানে আসন বিন্যাস একটা বড় ইস্যু। জোট যত বড় তত আসন বিন্যাসের প্রক্রিয়াটিও জটিল আকার হয়ে যায়।

মি. হোসেন বলছিলেন, আসন বণ্টন নিয়ে ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের মধ্যে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধী এই রাজনৈতিক দলটি এখন দুটি জোটের অন্তর্ভুক্ত অবস্থায় রয়েছে।

দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক জোটের সাথে তাল মিলিয়ে চলা কতটা সহজ হবে বিএনপির জন্য?

তিনি বলছিলেন, ‘আমরা মনে করি আমরা যেহেতু ২০ দলের সর্মথন, অনুমতি এবং তাদের অনুমোদন নিয়ে এই জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট করেছি তাই দুটিই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

আরো পড়ুন :
ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে কেন আক্রমণাত্মক আওয়ামী লীগ?
ড: কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে সাথে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের যে জোটের আত্মপ্রকাশ করেছে তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরাও সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন।

রোববার মাদারীপুরের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘যারা খুন, দুর্নীতি ও অগ্নি-সন্ত্রাস করে তাদের সাথে হাত মিলিয়েছেন ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না ও আসম আব্দুর রব।’

নতুন জোটকে ‘জগাখিচুড়ি ঐক্য’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনার মন্তব্য ছিলো, ‘নৌকা থেকে নেমে ধানের শীষের মুঠো ধরেছেন ড: কামাল হোসেন। কামাল হোসেনের সঙ্গে জুটেছে আরও কিছু খুচরা আধুলি। এরা সব ঐক্য করেছে।’

শনিবার জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয় এবং একই সাথে জোটের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবির ঘোষণাও দেয়া হয়। বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে নিয়ে গড়া এ জোটে রাখা হয়নি সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারাকে।

তবে জোটের ঘোষণার পরপরই এ জোট নিয়ে নানা মন্তব্য আসতে থাকে ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে।

এমনকি আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা অনেকে ফেসবুকে ড:কামাল হোসেনকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দিচ্ছেন।

রোববারই সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সাত দফা নিয়ে যারা এক হয়েছেন তারা শেখ হাসিনার সরকার ‘মাইনাস’ করে ‘রাজাকার, বিএনপি ও জঙ্গিদের রাজনীতি প্লাস করার’ প্রস্তাব করেছেন।

তার দাবি, ‘সাত দফার প্রথম সারকথা হচ্ছে - একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে ভোটের আগে একটি অস্বাভাবিক সরকার আনা।’

তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলছেন, ক্ষমতাসীনদের সব স্তর থেকে বক্তৃতা বিবৃতি কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবজায়গাতেই একযোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে নতুন জোটের বিরুদ্ধে।

তার মতে, ‘এটি সরকার বা সরকারি দলের একটি রাজনৈতিক কৌশল, যাতে করে নতুন জোটটি কোনোভাবে তার সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে না দাঁড়াতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদাহরণ তুলে ধরে দিলারা চৌধুরী বলছেন, ‘নতুন জোটের নেতাদের নানাভাবে চরিত্র হননের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং ক্ষমতাসীন দল বা তাদের সমমনা সবার দিক থেকেই এটা চোখে পড়ছে।’

তবে এ সব অভিযোগ মানতে রাজী নন আওয়ামী লীগের নেতারা।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, ড. কামাল হোসেনকে ঘিরে তাদের তরফ থেকে যে প্রতিক্রিয়া আসছে সেটাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করেন তিনি।

মিস্টার চৌধুরী বলেন, ‘ড: কামাল হোসেনকে নিয়ে আমরা রাজনৈতিক ভাবে মোটেই চিন্তিত নই। তবে আমরা উৎকণ্ঠিত তার ষড়যন্ত্র নিয়ে।’

‘ওয়ান ইলেভেনের কথা মানুষ এখনো ভুলে যায়নি। এভাবেই একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাই এখন যখন তিনি আবারও একই তৎপরতা শুরু করেন তখন কিছু প্রতিক্রিয়া তো আসবেই’- বলেন তিনি।

তিনি বলেন, কোনো আক্রমণাত্মক প্রচারণা তারা করছেন না, তবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা জনগণের সামনে কিছু তথ্য তুলে ধরছেন মাত্র।

‘মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের কারণে কামাল হোসেনের কিছুটা নাম ডাক হয়েছে - আর সেটা ব্যবহার করেই তিনি বারবার ষড়যন্ত্র করছেন। এ কারণেই আমরা জনগণকে সতর্ক করছি মাত্র।’

ঐক্য ফ্রন্টের শরিক জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন এ ব্যাপারে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সরকারি দল যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তা জোটের কাজে প্রভাব ফেলবে না। বিবিসি বাংলা, ১৫ অক্টোবর ২০১৮


আরো সংবাদ



premium cement
মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে পুলিশে সোপর্দ যুবলীগ কর্মীদের, নিন্দা গোলাম পরওয়ারের চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ

সকল