২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

দিন ধার্যের উদ্দেশ্য বিনা বিচারে সাজা দেওয়া : ফখরুল

বেগম খালেদা জিয়া। ইনসেটে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর - ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুক্তিতর্ক এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন ধার্য করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। বিনা বিচারে সাজা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারের নির্দেশে রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।

মঙ্গলবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আগামী ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। ওই মামলার অন্যতম আসামি কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আরো পড়ুন : সিলেট থেকে শুরু হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি
নয়া দিগন্ত অনলাইন ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:০৯

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি শুরু হচ্ছে সিলেট বিভাগ থেকে। সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব খবরটি নিশ্চিত করেন। 

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান আ স ম আব্দুর রব।


জেএসডি সভাপতি বলেন, ‘প্রথমে আমরা সিলেটে হযরত শাহ জালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারত করব, এরপর সেখানে জনসভা হবে। সিলেটের পর চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ সব বিভাগ ও মহানগর পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়েও কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট।’

সাবেক এ ছাত্রনেতা বলেন, ‘আজকে আমাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন হয়েছে। বুধবার আবারও বৈঠক শেষে কমিটির নাম ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া অন্যান্য কর্মসূচির বিষয়ে বুধবার জানানো হবে।’

‘আমাদের কর্মসূচিতে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশা করি, কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না। আমরা সরকারের কাছ থেকে সেই সহযোগিতা চাই’, যোগ করেন আ স ম রব।

বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমন্বিত সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম বৈঠক আজ দুপুর সোয়া ১২টায় শুরু হয়ে চলে সোয়া ৩টা পর্যন্ত।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, জেএসডি নেত্রী তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহিদুল্লাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মমিনুল ইসলাম, ড. জায়েদ প্রমুখ।

আরো পড়ুন : যেসব কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট
মঈন উদ্দিন খান

সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের নেতারা বলেছেন, আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রেখেই আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবেন তারা। যদি সরকার জনগণের চাওয়া আঁচ করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। 

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে রোডমার্চ ও সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আগামী সপ্তাহে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর আগে বৈঠক করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর চাপ তৈরির কর্মকৌশল চূড়ান্ত করবেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। একইসাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কলেবর আরো বাড়ানো হবে। ২০ দলীয় জোটের আরো বেশ কয়েকটি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবে। বামঘরানার কিছু দলকেও ফ্রন্টে ভেড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। 


গত ১৩ অক্টোবর বিএনপিকে সাথে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের পর শীর্ষ নেতারা আগামী দিনের কর্মসূচি ও কর্মকৌশল কী হবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছেন। আজ-কালের মধ্যে তারা আবারো একসাথে বসবেন। জানা গেছে, জোটগঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না ফ্রন্টের নেতারা। যে সাতটি দাবি আদায়ে একমত হয়ে তারা জোট গঠন করেছেন, তা চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়ে যাওয়াই এখন তাদের লক্ষ্য।

কোনো দল বা ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে তারা সমন্বিত কৌশলে এগোতে চান। যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে ফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির শীর্ষ তিন নেতা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না প্রধান ভূমিকা পালন করবেন। পরামর্শ নেয়া হবে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের। পরিমিত কথা বলায় পারঙ্গম মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। 

ফ্রন্টের এক নেতা গতকাল নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেন, বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্তটা ছিল খুবই দূরদর্শী। কারণ বি চৌধুরী ও তার পুত্র মাহি বি চৌধুরী পুরো প্রক্রিয়াটাকে ভিন্ন খাতে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। লক্ষ্য যেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন, সেখানে তারা বিএনপিকে ঘায়েল করতে একটি প্রতিশোধমূলক পরিকল্পনায় ছিলেন। তারা যেসব শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন, সেগুলোও ওই পরিকল্পনারই অংশ। নেতৃত্ব নিয়েও তারা যথেষ্ট ঝামেলা তৈরি করেছিলেন। তারা কোনো একটি পক্ষের উদ্দেশ্য হাসিল করতে ধূম্রজাল তৈরি করছেন, এমনটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে ত্বরিত সিদ্ধান্তে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয়েছে। 

ওই নেতা বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি কী হবে তা এক সপ্তাহের মধ্যেই স্পষ্ট হবে। সিলেট অথবা শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির সূচনা হতে পারে। রোডমার্চ সমাবেশের ডাক দেবেন তারা। 

জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটে থাকা আরো বেশ কয়েকটি দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মঞ্চে আসবে। এলডিপি, জাপা, বিজেপির সাথে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। এসব দল একইসাথে ২০ দলীয় জোটেও থাকবে। 

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর সরকারের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ আরো বেড়েছে। আগামী দিনে তারা সঠিক কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। সেই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগণের যে চাওয়া, সেটি অর্জিত হবে। 

জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবির মধ্যে তিনটি প্রধান দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বেগম খালেদা জিয়াসহ আটক রাজবন্দীদের মুক্তি ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন। এসব দাবি আদায়ের পথে ‘উইন উইন’ পরিস্থিতি দেখা দিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। 

সূত্র মতে, ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ায় বিএনপি এই দুই জোটের মধ্যে ভারসাম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে এগোতে চায়। দলটির নেতারা এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নিলে আসনবণ্টনের কাজটিকে চ্যালেঞ্জ মনে করছে। এক দিকে নিজ দলের দুঃসময়ের নেতাদেরকে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে, অন্য দিকে জোট ও ফ্রন্টের নেতাদেরও জায়গা করে দিতে হবে।

পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করেন। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম চালাতে পারবে বলে যে আদেশ বহাল রেখেছেন আমরা তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাব। খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য হাসাপাতালে আছেন। তাই আদালতে আসতে পারছেন না। তাই মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করছি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আবারও বলছি, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আমরা আপিল বিভাগে যাব। এখন উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য আজকের একটি অর্ডার এবং আগের একটি অর্ডার নিতে হবে যে আমাদের কোনো সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না। আর্গুমেন্ট এবং যুক্তিতর্ক করার কোনো সুযোগ না দেওয়ার কারণে আমরা আজকের আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যাব।’ 

অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলার কার্যক্রম চালাতে কোনো বাধা নেই। উনারা যেহেতু বক্তব্য দিবেন না তাই বলা যায় তাদের কোনো বক্তব্য নেই। তাই আদালত রায়ের দিন ধার্য করুক। উভয়পক্ষের আবেদনের শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য আগামী ২৯ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।’


আরো সংবাদ



premium cement