১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সম্ভাব্য নাম ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’; ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্যে অভিন্ন আন্দোলন

চূড়ান্তের পথে বৃহত্তর ঐক্য

চূড়ান্তের পথে বৃহত্তর ঐক্য - ছবি : সংগৃহীত

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে রয়েছে। বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া মিলে বৃহত্তর এই মঞ্চের নাম হতে পারে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নীতিগতভাবে একমত হওয়ার পর শীর্ষ নেতাদের গত কয়েকটি বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে সাত দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দাবি আদায়ে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি ঘোষণার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। 

চলতি বছরের শেষে অর্থাৎ ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন সামনে রেখে বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগে নির্বাচনী জোট গঠনের তৎপরতা চলছে। বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন থেকেই দল দুইটি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে গঠন করেছিল চারদলীয় জোট।

২০০৯ সালের নির্বাচনের পর সেই জোট সম্প্রসারিত হয়ে প্রথমে ১৮, পরে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়। এবারো নির্বাচন সামনে রেখে জোটের বাইরে থাকা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে আরেকটি বৃহত্তর প্লাটফর্ম গঠন প্রক্রিয়ার সাথে বিএনপি যুক্ত হয়েছে। এই প্লাটফর্মে বিএনপি ছাড়াও রয়েছে ড. কামালের গণফোরাম, সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। বিকল্পধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত হয়েছে যুক্তফ্রন্ট। ড. কামাল গঠন করেছেন জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া। 

যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সাথে বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠনে বিএনপি দুই মাস ধরে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। যে প্রক্রিয়া এখন প্রায় শেষের পথে রয়েছে। বিএনপি ও অন্যান্য দলের সমন্বয়ে গঠিত একটি লিয়াজোঁ কমিটি গত ১০ দিনে কমপক্ষে চারবার বৈঠক করেছে। এই কমিটিতে আছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, যুক্তফ্রন্টের আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর (অব:) মান্নান, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার মোস্তফা মহসীন মন্টু ও আ ব ম মোস্তফা আমীন। গত ৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ঘোষণা দেন নেতারা। 

ঐক্যপ্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত এক শীর্ষ নেতা গতকাল বলেছেন, তাদের লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন। এ জন্য তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। ক্ষমতায় গেলে কিভাবে সরকার পরিচালিত হবে, কিংবা আসন বণ্টনের বিষয়টির সুরাহা কিভাবে হবে তা এখনই মুখ্য কোনো বিষয় নয়। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামার আগেই শর্তজুড়ে দিলে তা কাক্সিত গন্তব্যে না-ও পৌঁছতে পারে। 
ওই নেতা বলেন, বিকল্পধারার নেতা মাহি বি চৌধুরী কিংবা বিকল্প ধারার পক্ষ থেকে আসন বণ্টন নিয়ে যে ধরনের শর্তের কথা বলা হচ্ছে, এটা তাদের দলগত আলোচনা। এটা বৃহত্তর ঐক্যের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এ ধরনের শর্ত আগেভাগে জুড়ে দেয়ায় কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেও ওই নেতা জানান। 

জানা গেছে, নতুন নাম দিয়ে শিগগিরই অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে সাত দফা দাবি স্থির করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ১. সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা; ২. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা; ৩. নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্শ্চিত করা; ৪. শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল; ৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন; ৬. দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা এবং ৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়া। 

একই সাথে ঐক্যের নেতারা ১১ লক্ষ্য স্থির করেছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ মুক্তি সংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তার বিধান করা, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা, রাষ্ট্রের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়া, সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব- কারো সাথে শত্রুতা নয় এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা, বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনী আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমরা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী দিনে কর্মসূচির ধরন কী হবে তা শিগগরিই নির্ধারণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১২৮তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণ সভা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ

সকল