২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
চারদিক থেকে ময়লা দূষিত পয়ঃনিষ্কাশন প্রবাহ এসে মিশে

ভয়ঙ্কর জীবাণু কিলবিল করছে হাতিরঝিলের পানিতে

হাতিরঝিলের পানি রোগজীবাণুতে ভরা - ছবি : সংগৃহীত

জীবাণুপূর্ণ দূষিত পানির কৃত্রিম হ্রদে পরিণত হয়েছে রাজধানীর হাতিরঝির লেক। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ ভারী এই পানিতে রয়েছে মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বেশ কয়েক প্রকার জীবাণু। চারদিক থেকে ময়লা-দূষিত পয়ঃনিষ্কাশনের প্রবাহ সরাসরি হাতিরঝিলে এসে মিশে এটি অত্যন্ত নোংরা পানির আধারে পরিণত হয়েছে। ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, সালমোনিলা (অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সালমোনিলা), পরজীবী জীবাণু (প্রধানত বিভিন্ন ধরনের কৃমি), হিমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোমের জীবাণুসহ নানা ধরনের পানিবাহিত জীবাণুতে পূর্ণ হাতিরঝিলের পানি। পয়ঃনিষ্কাশনের নালা সরাসরি এসে হাতিরঝিলের পানিতে মিশে যাওয়ায় এ লেকের পানি প্রচণ্ড কালো। তবে এ পানি রামপুরা ওয়াটার ট্যাক্সি জেটির কাছে আসার পর কালো রঙ থাকছে না। গুলশান লেক থেকে পরিষ্কার পানিতে মিশে কালো রঙ কিছুটা কমে যাচ্ছে। 

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, হাতিরঝিলের পানিতে ধানমন্ডি এলাকা থেকে যে পয়ঃ পানি আসে তা হোটেল সোনারগাঁওয়ের পাশের পয়েন্ট দিয়ে বেগুনবাড়ি খালে প্রবেশ করে। বিজিএমইএ ভবনের চারদিকে যে পানি তা কালো রঙকেও হার মানাবে। এ কালো রঙ বর্ষাকালেও কমে স্বাভাবিক হয় না। আবার নিকেতন এলাকার যে লেক রয়েছে এর পুরো পানিটাই হাতিরঝিলের এসে পড়ছে। এ ছাড়া, গুলশান এলাকার ব্যবহৃত পানি গুলশান লেকে পড়ছে। পরে ওই পানি হাতিরঝিলে এসে মিশে যাচ্ছে। 
বিভিন্ন গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, দূষিত পানি আসা বন্ধ করতে না পারলে হাতিরঝিলের দূষণ কখনো বন্ধ হবে না। 

হাতিরঝিলের পানি নিয়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনেকগুলো গবেষণা করেছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট), ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়, গাজীপুরের ডুয়েট, ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণার প্রায় প্রত্যেকটিতেই হাতিরঝিলের পানিতে নানা ধরনের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব গবেষণায় বলা হয়েছে, হাতিরঝিলের পানি মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ পানিতে জীবাণুর ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। সুয়ারেজের দূষিত পানি ঝিলের পানিতে মিশে যাচ্ছে বলেই অল্প পরিমাণ পানিতে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। 

বুয়েটের এমএসসির ছাত্র শাহরিয়ার আলমের গবেষণায় বলা হয়েছে, হাতিরঝিলের পানির গুণাগুণ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এর পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড। পরীক্ষায় দেখা গেছে, হাতিরঝিলের প্রতি লিটার পানিতে ৩৫ থেকে ৬০ মিলিগ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড। কিন্তু আন্তর্জাতিক মান (ইসিআর-৯৭ স্ট্যান্ডার্ড) অনুযায়ী পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড থাকতে হবে প্রতি লিটারে ৪ গ্রাম মাত্র। বুয়েটের ওই পরীক্ষা অনুযায়ী হাতিরঝিলের পানিতে লৌহের পরিমাণও অত্যন্ত কম। প্রতি লিটারে ১ মিলিগ্রাম লৌহ থাকার কথা থাকলেও হাতিরঝিলের পানিতে রয়েছে ০.১৫ থেকে ০.২৫ মিলিগ্রাম। পানিতে অ্যালকালাইনিটি বা ক্যালসিয়াম কার্বনেট থাকা উচিত প্রতি লিটার পানিতে ৬০০ মিলিগ্রাম। কিন্তু এ পানিতে রয়েছে ৯০ থেকে ৩৪৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এ পানি অত্যন্ত ঘোলা প্রমাণিত হয়েছে পরীক্ষায়। বুয়েটের এই গবেষণায় হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। 

পানি শোধন করার জন্য উচ্চক্ষমতার কমপ্রেশার, লেকের তলদেশে বায়ু সঞ্চালন করার জন্য মেশিন, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে পানির গুণগত মান উন্নয়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে রাজউক থেকে জানানো হয়েছে। 

পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ব্রিফিংয়ে জানান, হাতিরঝিল লেকের পানি শোধনের জন্য একটি সমন্বিত, টেকসই পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হলে লেকের পানি দূষণ ও দুর্গন্ধমুক্ত হবে। বিদেশে পাঠানো হাতিরঝিলের পানির নমুনার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

প্রায় ৩০০ একর বিস্তৃত এলাকা নিয়ে হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। হাতিরঝিলে ৪.৮১ বিলিয়ন লিটার এবং শুষ্ক মওসুমে ৩.০৬ বিলিয়ন লিটার পানি ধরে। রাজধানী ঢাকায় হাতিরঝিলেই সবচেয়ে বেশি পানি জমা থাকছে।


আরো সংবাদ



premium cement