২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিএনপি নেতাকর্মীদের পাইকারী হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে : রিজভী

বিএনপি
বক্তব্য রাখছেন রুহুল কবির রিজভী - ছবি : নয়া দিগন্ত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রধান কান্ডারী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী, কয়েক মাস পরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা। অধিকারহারা জনগণ একটি জোরালো আন্দোলনের জন্য অগ্নিগর্ভ হয়ে আছে। এমনিতে সারাদেশে ঝাঁকে ঝাঁকে গায়েবী মামলায় এক অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। তার ওপর দেশজুড়ে বাসাবাড়িতে চলছে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে খোঁজার ধুম। মধ্যযুগের ‘ডাইনী শিকারের’ মতো পাইকারী হারে গ্রেফতারের শিকার করা হচ্ছে নেতাকর্মীদের।

তিনি অভিযোগ করেন, এখন ফাঁপা উন্নয়নের জিগির তুলে জনগণের অর্থের লুটপাট, বেপরোয়া গুম-খুন আর রক্তপাতের দমবন্ধ করা পরিস্থিতির সুযোগের সদ্ব্যবহার করতেই ২১শে আগস্ট বোমা হামলার রায়ের দিন ধার্য করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, অধ্যাপক মো: শাহজাহান মিয়া, মো: আবদুস সালাম আজাদ, মো: মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী নেতারাই থাকে আগ্রাসী শক্তির টার্গেট। জাতীয়তাবাদের প্রতীক যারা, তাদের ধ্বংস করার জন্য চালানো হয় নানামুখী চক্রান্ত। অপশক্তিকে পরাস্ত করতে না পারলে তাদের চক্রান্তের ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ, দেশের মানুষ ও জাতীয়তাবাদী নেতারা। ২১শে আগস্ট বোমা হামলা মামলায় প্রকৃত অপশক্তিকে পর্দার অন্তরালে ঢেকে রেখে বিচারিক কার্যক্রম চলাকালীন অবস্থায় চার্জশিট ফিরিয়ে এনে সম্পূরক চার্জশিট তৈরী করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়ানো হয়েছে মনের ঝাল মেটাতে। এজন্য আইনী প্রক্রিয়াকে হাতের মুঠোয় নিয়ে কুটিল চক্রান্তের মাধ্যমে তারেক রহমানকে ভিকটিম করা হয়েছে। সমগ্র ঘটনাটি এ সময়ের কোনো এক কাশিমবাজার কুঠিতে চক্রান্তজাল বুনেছে চক্রান্তকারীরা।

২১শে আগস্ট ২০০৪ সমাবেশ নিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার বক্তব্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, সভা অনুষ্ঠানের পূর্বদিন থেকে ২২ নভেম্বর ২০০৬ পর্যন্ত সোয়া তিন বছর শেখ হাসিনা কোনো অনুষ্ঠানেই বলেননি যে, ‘পুলিশ সেদিন তার সভা করার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু ২০ আগস্ট ২০১২ সালে একুশে টিভিতে বলেন, ‘২০-০৮-২০০৪ তারিখে রাতে পুলিশ অনুমতি দিয়েছিল, আবার দুদিন পর ২২ আগস্ট আমাদের সময় ও দৈনিক জনকন্ঠে বলেন, ‘বৃটিশ হাই কমিশনারের ওপর হামলার প্রতিবাদে মুক্তাঙ্গনে সভা করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের অনুমতি দেয়া হয়নি। শেষ রাতে অনুমতি দেয়া হয়। কেনো তা দেয়া হয়েছিল? আওয়ামী লীগ তো সভা করার পরিকল্পনা বাদই দিয়েছিল।’ উনি যদি সমাবেশের পরিকল্পনা বাদই দিয়ে থাকেন, তাহলে দলের পক্ষ থেকে কোনো স্টেটমেন্ট দেননি কেনো? দুপুর ১টা পর্যন্ত মুক্তাঙ্গনে আওয়ামী লীগের সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকার পর কেনো তিনি সমাবেশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নিয়ে গেলেন? সমাবেশে পুলিশের অনুমতি নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য অসঙ্গতিপূণ ও রহস্যজনক।

ঘটনা পরবর্তী বিএনপি সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাসমূহের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ২৩ আগস্ট ২০০৪ ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদঃ মর্মান্তিক এই ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সমবেদনা জানিয়ে সুধাসদনে আসতে চেয়ে ফোন করেছিলেন, কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পাননি। সেদিন যুগান্তরে প্রকাশিত সংবাদ- শেখ হাসিনার সাড়া না পেয়ে বেগম খালেদা জিয়া সিএমএইচ এ গুরুতর আহত আইভি রহমান ও মে: জে: (অব.) তারেক সিদ্দিকীকে দেখতে যেয়ে তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার নির্দেশ দেন। একই দিনে প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ- গুরুত্বপূর্ণ বোমা হামলার এই খবর প্রচার না করার জন্য বিটিভির নির্বাহী প্রযোজক মোস্তাক জহিরকে অপসারণসহ অন্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ- ঘটনার পরদিনই বেগম জিয়া তিন দফা মিটিং করে অপরাধীদের ধরা ও আইনের আওতায় এনে সবধরণের আইনী ব্যবস্থার নির্দেশ দেন, এগুলো তিনি নিজেই মনিটরিং করেন। এ বিষয়ে সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতার আহবান কামনা করে প্রকাশ্যে বিবৃতিও দেন। বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইকেও ঘটনাস্থলে আনয়নের ব্যবস্থা করেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু শেখ হাসিনা এফবিআইকে কোনো সহযোগিতা করেননি।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের কারণেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এ বিষয়ে রাষ্ট্রের সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই মর্মান্তিক ঘটনার সংবাদদাতাকে কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। তৎকালীন বিরোধী দলের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়েই এই ঘটনা অনুসন্ধানকল্পে হাইকোর্টের একজন সিনিয়র বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে ৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যে প্রতিবেদন রিপোর্ট এ সংক্রান্তে নিয়মিত মামলার তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে বিবেচনায় তখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। যা এখন প্রকাশে আর কোনো বাধা নেই। কিন্তু বর্তমান সরকার তা করছে না। কোনো ক্লু-লেস ফৌজদারী ঘটনা তদন্তের মূল সূত্র ও ভিত্তিই যেখানে হচ্ছে-সংঘটিত ঘটনার বেনিফিশিয়ারি কে বা কারা, আর ক্ষতিগ্রস্তকে বা কারা, তা নিরুপণের মাধ্যমে তদন্তে কার্যে অগ্রসর হওয়া। উপরিবর্ণিত দালিলিক সাক্ষ্য-প্রমাণের সূত্র ধরে যদি তা বিবেচনা করা হয়, তাহলে এই ঘটনার ক্ষতিগ্রস্ত যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার, আর বেনিফিশিয়ারি হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; সেটি অনুধাবনের জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সামগ্রিক ঘটনা বিশ্লেষণে বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা ও আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টির জন্যই এই বোমা হামলা করা হয়েছে বলেও জনগণ মনে করে এবং এই মামলার রায়ের তারিখ আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে নির্ধারণ করাটাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নির্দোষ বেগম খালেদা জিয়াকে কূটকৌশল করে কিভাবে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে তা জনগণ জানে। যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে হয়, যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পান না, সেখানে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কি বিচার হবে সেটি নিয়ে জনগণ চিন্তিত নয়। কারণ ২১শে আগস্ট বোমা হামলা রায় ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলেছেন-এই রায়ের পর নাকি বিএনপি আরো বিপদে পড়বে। তার মানে এটা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, ২১শে আগস্টের রায় কি তাহলে সরকারের ডিকটেশনে লেখা হচ্ছে? তবে সেদিন বেশি দূরে নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবেই। আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। সুতরাং যত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে রাখুন না কেনো, একতরফা নির্বাচন আর এদেশে জনগণ হতে দেবে না।

বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত গ্রেফতারের তালিকা তুলে ধরে রিজভী বলেন, ভোলা জেলায় ৪ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার। চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন, যুবদলের নাজিম উদ্দিন, বাবুল আলম, জামাল উদ্দিন, ফজলুল হক, শাহজাহান শিকদার, মো: ফোরকান, ছাত্রদলের আলী নুর তালুকদার মনি, আব্দুল মামুন, মোঃ ফারুক, মোঃ আব্দুল্লাহ, আবু তৈয়ব, মাজহারুল ইসলাম এবং রফিকুল ইসলাম (মঙ্গল) সহ ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সুনামগঞ্জে জেলায় ৪ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার। নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা ছাত্রদলের সভাপতি সুমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, এ ছাড়া নোয়াখালী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আবু হাসান নোমানের হাতে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফাহিম নামে ছাত্রদলের কর্মী তাকে দেখতে গেলে তাকেও থানার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ১ জনকে। মুন্সিগঞ্জ জেলায় এজাহারনামীয় ৬২ জন নেতাকর্মীসহ ২০০ অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও হবিগঞ্জ, কুমিল্লা এবং নরসিংদীসহ সারাদেশে বাড়ি বাড়ি পুলিশী তল্লাশী এবং বিভিন্নভাবে পুলিশী হয়রানি চলছে। আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।


আরো সংবাদ



premium cement
হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী!  আমেরিকানরা কি ধর্ম থেকে সরে যাচ্ছে? গাজায় রিজার্ভ ব্রিগেড মোতায়েন ইসরাইলের উপজেলা নির্বাচন জটিলতা ভোটাধিকারের প্রতি মর্যাদা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধাপরাধের ধারাবাহিক ধারা’ অনুসরণের অভিযোগ

সকল