বিএসএমএমইউতে কী পছন্দের চিকিৎসক পাবেন খালেদা জিয়া
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:১৬
চিকিৎসার জন্য পছন্দের হাসপাতাল পাননি বেগম খালেদা জিয়া। এই অবস্থায় হাইকোর্ট অতিদ্রুত বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) তে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে তার সুচিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছ।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড গঠন করা হবে, সেখানে তার পছন্দের চিকিৎসক থাকবেন কি না।
মেডিক্যাল বোর্ড গঠন সম্পর্কে আদালত যে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকার পূর্বে যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছিল সেখান থেকে সরকারপন্থী সংগঠনের তিন চিকিৎসককে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ চিকিৎসক নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন : খালেদা জিয়াকে অতিদ্রুত চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
নিজস্ব প্রতিবেদক ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৫১
কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে অতিদ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে তার সুচিকিৎসায় পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত তার আদেশে বলেন, উভয় পক্ষে বক্তব্যে এটা প্রতীয়মাণ হয় যে, খালেদা জিয়ার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বিএসএমএমইউ, সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। আর এ আদেশ স্পেশাল ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর নির্দেশ দেন আদালত।
মেডিক্যাল বোর্ড গঠন সম্পর্কে আদালতের নির্দেশ দেন আগে সরকার কর্তৃক যে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল সেখানকার তিন সদস্য যারা সরকারপন্থী চিকিৎসকের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সদস্য তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে নিরপেক্ষ তিনজন চিকিৎসক নিয়ে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করতে, যারা স্বাচিপ বা বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ড্যাবের) বর্তমান বা প্রাক্তর সদস্য হতে পারবেন না।
আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তাকে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। অপরদিকে সরকার পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেন। এরপর থেকে তিনি পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন। বন্দী অবস্থায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দলের পক্ষ থেকে বার বার অভিযোগ করা হয়, সেই সাথে তার সুচিকিৎসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তেমন উদ্যোগ না দেখতে পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয় বিএনপি।
আরো পড়ুন : জীর্ণশীর্ণ খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১২ জুন ২০১৮
কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে ভালো নেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এখন তিনি জীর্ণশীর্ণ চেহারার একজন মানুষ। সত্তরোর্ধ্ব একজন বয়স্ক মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে ধরনের বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন, বেগম খালেদা জিয়া তা না পাওয়ায় তার বয়স যেন আরো বেড়ে গেছে। তিনি সম্প্রতি ট্রানজিয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাকে (টিআইএ) আক্রান্ত হয়েছেন।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে চার পাতার একটি মেডিক্যাল পর্যবেক্ষণ দিয়ে এসেছেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুত এমআরআই করে দেখার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন তার ব্রেইন কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি দেখার জন্য। এরপর তিন দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তাকে কোনো হাসপাতালেই নেয়া হয়নি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার দ্রুত সুচিকিৎসা না হলে যেকোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন তিনি। তার সাথে দেখা করে এসেছেন এমন সূত্রগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেগম জিয়ার ওজন কমে গেছে, বাম হাত ওপরে তুলতে পারেন না। আগে তো একটু হাঁটতে পারতেন, এখন তা-ও পারেন না। কথা বলার ভঙ্গি সহজ নয়, মুখে বাঝে (তবে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকেরা বলেছেন যে, তিনি কমিউনিকেশন করতে পারছেন)। এমনিতেই তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
অনেক আগে থেকে তিনি আর্থ্রাইটিস, রিউমাটোলজির মতো জটিল রোগে ভুগছেন। বর্তমানে হাতের আঙুলগুলো কালো হয়ে গেছে, পা ফুলে গেছে। পায়ে এসেছে পানি। পায়ে চাপ দিলে আঙুল ভেতরে দেবে যাচ্ছে। চোখে রয়েছে প্রচণ্ড ব্যথা, লাল হয়ে গেছে দুই চোখ। সুস্থ চোখের যেটুকু পানি সারাক্ষণ থাকার কথা, তার চোখে সে রকম পানি নেই। অনেক কমে গেছে। বাইরে থেকে আর্টিফিশিয়াল পানি দিতে হয় চোখে। সুচিকিৎসা করা না হলে চোখ দুটির স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অস্টিও আর্থ্রাইটিস হলে যেকোনো মানুষের চোখের পানি এমনিতেই কমে যায়।
টিআইএ চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া পড়ে গিয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিট জ্ঞান হারানোর লক্ষণটি ভালো নয়, সামনে তার জন্য আরো বিপদ অপেক্ষা করছে। সেটা হবে বড় ধরনের বিপদ।
যারা কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন সেই সূত্রগুলো আরো জানিয়েছে, তাকে যেখানে থাকতে দেয়া হয়েছে সেখানে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করে। চার দিকের পরিবেশ খুবই খারাপ। সারাক্ষণ স্যাঁতসেঁতে অবস্থা বিরাজ করছে। চার দিকে যে পরিবেশ তাতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া মশার আক্রমণে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন যেকোনো সময়।